সৎসঙ্গ ও আধ্যাত্মিক ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠে মানসিক তৃপ্তি। কাজকর্মের ক্ষেত্রে নতুন কোনও যোগাযোগ থেকে উপকৃত ... বিশদ
দেবজ্যোতি মিশ্র
ভারতবর্ষের সঙ্গীতের মানচিত্রে রবীন্দ্রনাথ, নাকি বলব বাংলা সঙ্গীতের মানচিত্রে রবীন্দ্রনাথ এবং তাঁর ঠিক পরেই একটা ছেদ, একটা ডিপার্চার, একটা ফুল স্টপ। সলিল চৌধুরী। তার মানে এ তো নয় যে সেই সময় আর কোনও কম্পোজাররা কাজ করেননি, নিশ্চয়ই করেছেন,কিন্তু সলিল চৌধুরী নিয়ে এলেন সঙ্গীতে একদম নতুন একটা দিক, এক অনন্য স্ট্রাকচার, ফরম্যাট, অর্থাৎ আঙ্গিক। সেই আঙ্গিকে এল একটা অনবদ্য পরিবর্তন যা আমরা রবীন্দ্রোত্তর যুগের বা তাঁর সমসাময়িক কোন কম্পোজারের মধ্যে পাইনি। কী ছিল তাঁর সঙ্গীতে? ছিল সারা ভারতবর্ষের সমস্ত প্রদেশের গান। পশ্চিমী সঙ্গীত এবং অবশ্যই তাঁর নিজস্ব বোধ। ছিল তাঁর সময়কাল, যে সময়কালে তিনি দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁর ঐতিহ্য এবং সেই ঐতিহ্যকে ভেঙে বেরনো, যে কারণে একটা ছেদ, যে কারণে একটা ফুল স্টপ। রবীন্দ্রনাথের উত্তরসূরী হিসেবে সলিল চৌধুরীর গানের স্ট্রাকচার কেন গণ্য হবে? কেন বলা হবে যে এটা একটা আমূল পরিবর্তন? এটা সেই পরিবর্তন যা তিনি তাঁর পরবর্তী সময়ে বয়ে নিয়ে যাবেন। গণসঙ্গীতের প্রসঙ্গে সলিল চৌধুরী বার বার একটা কথা বলেছেন যে ‘আমরা কাজীদার ঝাঁকের মাছ’। মানে নিজেকে ‘আমাদের’ বলেছেন। ‘আমি’ কাজীদার ঝাঁকের মাছ বলছেন না। এইটা খুব জরুরি । কাজীদার ঝাঁকের মাছ হয়েও গণসঙ্গীতের স্ট্রাকচারে সলিল চৌধুরীর মধ্যে আমরা এমন কতগুলো মিউজিক্যাল প্রোগ্রেশন পেলাম যা কিন্তু ঠিক তাঁর আগে কখনও ছিল না। অর্থাৎ কাজী নজরুল ইসলামের যা গণসঙ্গীত বা রবীন্দ্রনাথের যা জাগরণের সঙ্গীত , তাতে এই জিনিস পাওয়া যায়নি। এখানে আমরা পেলাম ইউরোপীয়ান রেনেসাঁ , পেলাম বেঠোফেনের ফিফথ সিম্ফনি, যা জারিত করছে সলিল চৌধুরীকে, প্রত্যক্ষভাবে নয়, একটা ইন্সপিরেশন হিসেবে। একটা হারমনিক প্রোগেশন পেলাম যা সুরের মধ্যেই একটা মেলোডি, অর্থাৎ মোনোলিনিয়র সুরের মধ্যেই সেই প্রোগ্রেশন থাকছে, শুধু গাইলে পরেই সেই হারমনিটা তৈরি হয়,বোঝা যায় যে এটি সব রকমের গানের মধ্যে থেকে, সে তাঁর সমকালীন গণসঙ্গীত হোক বা তার আগেও যারা কম্পোজ করেছেন, একেবারে যদি জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র থেকে ধরি, প্রত্যেকের গানের থেকে একেবারে আলাদা। চারের দশকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আসছে সেখানে দাঁড়িয়ে একজন মানুষ শুধু ভাষা নয় তাঁর প্রতিবাদের স্বর, প্রতিবাদের সঙ্গীত কিরকম হয়ে উঠবে, তা তৈরি করলেন। শব্দের বাইরে সঙ্গীতের নিজস্ব যে স্বর তার উচ্চারণ তৈরি হল। যাকে আমরা আবার দেখতে পেলাম আমাদের ঠিক এই সময়ে এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে। এই মুহূর্তে সারা পৃথিবী জুড়ে যে যুদ্ধ, আমাদের দেশে যে যুদ্ধগুলো চলছে সেই সমস্ত রকম যুদ্ধ। ধর্মের যুদ্ধ, সংস্কৃতির যুদ্ধ। সংস্কৃতির যুদ্ধ কথাটা হয়তো ঠিক হল না, আমি সেই যুদ্ধের কথা বলতে চাইছি যে যুদ্ধ মানুষ কে সংস্কৃতি বিচ্যুত করে। আমাদের চারিদিকে এই যে নীতি বোধের অভাব যা আমাদের ভেঙে দিচ্ছে,আমাদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করছে সেই বিভেদের জায়গায় দাঁড়িয়ে দেখতে পাচ্ছি আবার ‘পথে এবার নামো সাথী’ ‘ঢেউ উঠছে কারা টুটছে’ কিংবা ‘প্রতিবাদের ভাষা’ , বা ‘হেই সামালো ধান হো’ আবার সমস্বরে গাওয়া হচ্ছে। চাষির শস্যের জন্য যে ব্যথা, তার যে স্ট্রাগল এবং প্রতিবাদ সেখানে দাঁড়িয়ে ‘হেই সামালো ধান হো’ সফল একটা গান। সেই ব্যথা, সেই কষ্ট কোথাও মিলে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে এই ঘটমান মুহূর্তের সঙ্গে। আমাদের আর জি করের ঘটনা নিয়ে সারা পশ্চিমবঙ্গের শহর কলকাতা ছাড়াও গ্রামে মফস্বলে আধা শহরে , সর্বত্র যা হয়েছে তার নব্বই শতাংশ গান সলিল চৌধুরীর গান । সুতরাং মনে হয় সলিল চৌধুরীর গানের শক্তি অসীম এবং কালোত্তীর্ণ হয়েছে । চারের দশকে বা পাঁচের দশকের প্রথম দিকে লেখা কোনও গান যখন শতাব্দী পেরিয়ে আজও তরুণ তরুণী গেয়ে ওঠে, প্রতিবাদের মুহূর্তে তাদের কন্ঠ যখন আজ ও সলিল চৌধুরীর আলোর পথযাত্রী বা আমার প্রতিবাদের ভাষার শরণ নেয় , আমার মনে হয় এটাই প্রকৃত গণসঙ্গীত। এ গানের কথা তো শুধু লিরিক মাত্র নয় এই কথা শিল্পীর জীবনের সঙ্গে যোগাযোগ। তাই এটা আমার কাছে ভীষণ বড় একটা ব্যাপার বলেই মনে হয়।
সুরকার ও গীতিকার সলিল চৌধুরী—এ কথা বললেই সঙ্গীতকার সলিল চৌধুরী যেন কোথাও ম্লান হয়ে যান। আসলে সলিল চৌধুরী একজন কবি এবং গীতিকার। সব কবিই গীতি ভাষ্য লিখতে পারেন না অর্থাৎ সঙ্গীতে কিংবা সুরে কথা বসিয়ে তাকে গীতের উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারেন না, তাই একজন কবি ও গীতিকার সলিল চৌধুরী তাঁর প্রতিটি গানে থাকেন। সঙ্গীতকার না হলে এই যে গানের আগে অনবদ্য সব প্রিলিউড ইন্টারল্যুড, অর্থাৎ গানের আগে যে সুর, যেখানে কথা নেই বা গানের অন্তর্বর্তী অংশে যেখানে কথা নেই, সেখানের গল্পে তো ফাঁক পড়ে যায়, সলিল চৌধুরী গানের সেই অংশটুকুও পরম যত্নে তৈরি করতেন। কি অনবদ্য! কি অনন্ত প্রাণ সেই সব সুরে! তার গানের গা বেয়ে যেসব সুরের নদী বয়ে যায়, যাকে পশ্চিমী সঙ্গীতের ধারণায় বলে অবলিগেটো, হারমনি, কাউন্টার পয়েন্ট সেসব ছাড়া সলিল চৌধুরী হয় নাকি! তাই ভারতবর্ষের সঙ্গীতের ধারায় সলিল চৌধুরী অনেকগুলো নামের পাশে বসে যেতে পারে না । তিনি অনন্য, কারণ তিনি অন্যতম সঙ্গীতকার। তাঁর সহযাত্রী আরও যাঁরা সঙ্গীতকার, তাঁদের থেকে তিনি আলাদা কোথায় সেটা আমাদের বুঝে নিতে হবে। বিস্ময়কর শচীনদেব বর্মণ, মদনমোহন, হিমাংশু দত্ত বা সুধীন দাশগুপ্ত বা আরও যাঁরা ছিলেন তাঁদের থেকে কোথায় তফাৎ গীতিকার, সুরকার ও কবি সলিল চৌধুরীর।
শতবর্ষের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে নানান কথা মাথায় উঁকি দিয়ে যাচ্ছে। অনেক অনেক ভাবনা আমার। সেই সতেরো বছর বয়স থেকে মুগ্ধ বিস্মিত হয়ে বোঝবার চেষ্টা করেছি সলিল চৌধুরীর গানের মাহাত্ম্য। এই মাহাত্ম্য বুঝতে গেলে যে বিদ্বজন হতে হয়, বিদগ্ধ মানুষ হতে হয়, তা নয়। যে কোনও সাধারণ মানুষের মনেও সলিল চৌধুরীর গান মায়া বুনে দিয়ে যেত। সলিল চৌধুরীর গানের ভেতরে সবচেয়ে লক্ষ্যণীয় হচ্ছে তার আলো। এমনকী যে গানে বিষাদ ধরা দেয়, মেঘ ছায়া ধরা দেয়, তাও আকুল অপেক্ষায় থাকে অন্ধকার টানেলের শেষে অদূরেই আলো দেখবে বলে, তিনি আলোর সহযাত্রী, আলোর পথযাত্রী। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন আলোর উপাসক। সলিল চৌধুরী তাঁর সুযোগ্য ভাবশিষ্য। আমরা প্রায়ই শুনে থাকি রবীন্দ্রনাথ যখন মারা গিয়েছেন, তখন সলিল চৌধুরী অশৌচ পালন করেছিলেন। আমাকে সলিলদা বলতেন ‘জানিস রবীন্দ্রনাথ না থাকলে আমরা কেউই কিছু হতাম না। তিনি না থাকলে বাঙালি জগতের সংস্কৃতি, যে সংস্কৃতি একটা সময় ভারতবর্ষকে মগ্ন করেছিল চিন্তাশীল ব্যক্তিদের, সঙ্গীতকারদের, অন্তত সেই বাংলা সংস্কৃতি তো হতোই না। সংস্কৃতির জায়গাটাই তৈরি হতো না। এটা সলিলদা বার বার বলতেন। আমাদের ধরে নিতে হবে এই জায়গাটা ঠিক কি। রবীন্দ্রোত্তর যুগের আলোর উপাসক হয়েও তাঁর আলোর যাত্রাপথটা ছিল ভিন্ন। একটা ছেদ, একটা ডিপার্চার । একটা ফুল স্টপ দিয়ে শুরু হয় এই যাত্রা। পিতার হাত ধরে দাঁড়িয়ে পুত্র বলছেন—আমি তোমার পুত্র। আমি তোমার আশীর্বাদ নিয়ে ভিন্ন পথে যাচ্ছি। কারণ আমার পৃথিবীতে দুর্ভিক্ষ লেগেছে, মড়ক লেগেছে , বিশ্বযুদ্ধে ছারখার হয়ে গেছে আমার এই পৃথিবী। আমার পৃথিবীতে এত আলো নেই এখন। এখানেই উত্তরাধিকার আর এখানেই ছেদ। কিন্তু বার বার করে রবীন্দ্রনাথের কাছে তিনি তাঁর ঋণ স্বীকার করেছেন।
বিষয় আর আঙ্গিক—সলিল চৌধুরীর গানে এই জায়গাটা নিয়ে বলতে গেলে সবচেয়ে বড় যে জায়গাটা আসে সেটা হল গণসঙ্গীতের সুরে এমন কিছু মিউজিয়াল স্ট্রাকচার তৈরি করতে পেরেছিলেন যা চারের দশক থেকে শুরু করে ২০২৪ এ রাস্তায় আমাদের এই সময়ের বিপ্লবেও তাঁর গানগুলো গনগনে আগুনের মতো হয়ে রয়েছে। যা শুনলে মনে হয় এই তো গতকাল সবে আগুনে আঁচ দেওয়া হয়েছে। এর কোনও কোনও গান যে অশীতিপর, কারুর বয়স সত্তর বা তার ওপারে তা মনে হয় না। তার মানে চারের দশকের নৌ বিদ্রোহের পটভূমির গান “ঢেউ উঠছে কারা টুটছে” বা পথে এবার নামো সাথী বা কৃষক আন্দোলনের হেই সামালো ধান হো, আজও একইরকমভাবে প্রাসঙ্গিক। কিন্তু ওই সময়েই আরও যারা সঙ্গীতকার ছিলেন যারা গণনাট্যে এসেছিলেন বিপ্লবে শামিল হবেন বলে, তাদের কাছে বিপ্লবের বিষয়টা মুখ্য ছিল ,কিন্তু গান গুলো রয়ে গেল সলিল চৌধুরীর। এটা এক বিস্ময় আর এই বিস্ময় আবিষ্কার করা যায়না। এটা সেই শিল্পী , কবি সেই সঙ্গীতকারই জানেন যে তাঁর নিজস্ব ফর্মের মধ্যে কিরকম ভাবে তিনি অনেক বড় সময়কে ধরতে পারবেন যা, কালোত্তীর্ণ হবে। আসলে তিনি নিজেও বোধহয় পুরোটা জানেন না। এ সৃষ্টি ‘হয়ে ওঠে’। আর এই হয়ে ওঠার প্রক্রিয়াটা আমরা শুধু দেখতে পারি মাত্র, বিস্মিত হতে পারি । এটা বলা যায়না । এটা সলিল চৌধুরীর গানের বিশেষ করে তাঁর গণনাট্যের গানের একটা সাংঘাতিক জায়গা।
আজ যখন বসে ভাবি, দেখি যে স্মৃতির কত দাগ রয়ে গেছে সমস্ত চেতনা জুড়ে। আটের দশকের সেই সময়টা, যখন সলিলদার ছায়াসঙ্গী হয়ে দিন কেটেছে। সারাদিন, সকাল থেকে সন্ধে পার করে শুধু গান, শুধু সুর। সলিলদার মুখ থেকে কত গল্প শুনেছি, কত স্মৃতি সঞ্চয় করেছি, সেগুলোই যেন আজ আমার জীবনের মূলধন। সলিল দা বলতেন গরফার সেই বাড়ির কথা ,গীতা মুখার্জি কি অপূর্ব গাইতেন! সেখানে অভিজিৎদা, প্রবীরদা, অনলদা—সবাই মিলে আড্ডা, গান। সেখানেই তৈরি হয়েছিল “পথে এবার নামো সাথী,” “ধিতাং ধিতাং বোল”-এর মতো গান। এসব গান ছিল যেন আন্দোলনের মশাল। কোরাসের প্রয়োগে, হারমোনির বৈচিত্র্যে সলিলদা এমন কিছু করতেন, যা আগে কেউ কখনও শোনেনি।
শুনতে যেমন লাগে আসলে সবটাশএত সহজ ছিল না অবশ্য। মিটিং-এর জন্য গান, কৃষকদের জন্য গান—সবই সিঙ্গল রিড হারমোনিয়ামে তৈরি হয়েছে। মফস্বলের মাঠে, গ্রাম-গঞ্জের সমাবেশে গান গাইতে গাইতে কখন যেন বোঝার আগে গানই হয়ে উঠল আন্দোলনের ভাষা ।
একবারের কথা মনে পড়ে, সলিলদা বলেছিলেন যাদবপুরে কলেজের এক অনুষ্ঠান হবে, সলিলদার দল গাইবে, তারপরে পঙ্কজ মল্লিকের গান। তিনি সরাসরি বলেছিলেন, “তোমাদের ওই হইচই গানের পরে আমার গান টিঁকবে না। আমি বরং আগে গেয়ে নিই।” এ কথা শুনলে বোঝা যায়, ওঁদের গানের প্রভাব কতটা গভীর ছিল।
সলিলদার গল্পগুলো আরও গভীর। কোদালিয়ার স্মৃতি। বিদ্যাধরী নদীর নোনাজলে ভেসে যাওয়া জমি। ভূমিহীন কৃষকদের আর্তনাদ। সেখান থেকেই তাঁর গান। “বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা”—এই গান তো সেখানেই জন্ম নিয়েছিল। রংপুর ছাত্র সম্মেলনে দশবার গাইতে হয়েছিল। তিনি বলতেন, এই গান তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল।
তবে এসবের মাঝে শহরের এলিটরা সবসময় এই গানকে ছোট করে দেখেছে। তারা সন্দেহ ছিল যে কীর্তন ভেঙে আদৌ বলিষ্ঠ গান করা যায় কি না। কিন্তু কৃষকের, শ্রমিকের কাছে এই গান ক্রমশ তাদের ভাষা হয়ে উঠছিল। তাদের তাগিদ সলিলদাকে দিয়ে আরও গান তৈরি করিয়ে নিত।
স্মৃতি ঘুরে ফিরে আসে। সন্দেশখালির কৃষক সম্মেলন।তখনও গান তৈরি হয়নি। ভাটিয়ালি সুরে চারটে লাইন লিখে গাইতে হয়েছিল। তৎক্ষণাৎ লেখা সেই গান থেকে শুরু হয়েছিল যে যাত্রা, তা কখনো থামেনি।
আজ যখন ভাবি, মনে হয়, গান তখন শুধু সুর ছিল না। গান ছিল অস্ত্র, গান ছিল প্রতিবাদের ভাষা। কিন্তু এই পথও সহজ ছিল না। কত গান হারিয়ে গেছে। “জনান্তিক” আর “সংকেত” নাটকের পান্ডুলিপি আজ আর পাওয়া যায় না। এসব ভেবে সলিলদার মুখে এক অদ্ভুত বিষণ্নতা দেখতাম।
তাঁর হারিয়ে যাওয়া গানগুলো যেন তাঁর সন্তানের মতো ছিল। আজ বুঝতে অসুবিধে হয় না,যে কোনো মৌলিক সৃষ্টির সঙ্গে যে আবেগ জড়িয়ে থাকে, সেই সৃষ্টি হারিয়ে গেলে কতখানি যন্ত্রণা হয়।
“প্রান্তরের গান আমার, মেঠো সুরের গান আমার
হারিয়ে গেল কোন বেলায়, আকাশে আগুন জ্বালায়।”
এই গান যেন সলিলদার অন্তরের আবেগের ভাষা। একটা গোটা সময়, একটা আন্দোলন, একজন মানুষ—সবকিছু মিলেমিশে গড়ে তুলেছিল তাঁর গান। আর সেই গান আজও বয়ে চলেছি আমাদের স্মৃতির পাতায়।