অতিরিক্ত কর্মের চাপ গ্রহণ করে বেকায়দায় পড়তে পারেন। নতুন কর্মলাভের সম্ভাবনা। আয় বাড়বে। ... বিশদ
কলাভবনের মাস্টারমশাই একজনই, আচার্য নন্দলাল বসু। এই নন্দলাল বসুই ছিলেন অবন ঠাকুরের প্রিয় ছাত্র। যাকে নিয়ে রবীন্দ্রনাথ- অবনীন্দ্রনাথের মধ্যে দড়ি টানাটানি কম হয়নি। পরে অবশ্য বৃহৎ স্বার্থে অবন ঠাকুরই নন্দলালকে পাঠিয়েছিলেন শান্তিনিকেতনে, রবীন্দ্রনাথের আশ্রম বিদ্যালয়ে। শুরু থেকেই শুরু করা যাক…।
ছাত্রাবস্থায় নন্দলাল বুঝে গিয়েছিলেন পড়াশুনা তাঁর কম্ম নয়। ছবি আঁকতে ভালবাসতেন। পরাধীন ভারতের তৎকালীন প্রবাসী পত্রিকায় অবন ঠাকুরের আঁকা ছবি দেখেন। তখনই তাঁকে নিজের গুরু বলে মেনে নিয়েছিলেন। আঁকা শিখলে অবন ঠাকুরের কাছেই শিখব…। ১৯০৫ সাল, কলকাতার গর্ভর্মেন্ট আর্ট কলেজে অবন ঠাকুর তখন ভাইস প্রিন্সিপাল। নন্দলাল গেলেন তাঁর কাছে ছবি আঁকা শিখতে। আঁকার ধরণ দেখে নন্দলালকে অবন ঠাকুরের পছন্দ হয়। শিখলেন ওয়াশ পেন্টিং। গুরু চোখ দিয়ে দেখা সেই শুরু, খুলে গেল শিল্প চেতনার চোখ। আর ফিরে তাকাতে হয়নি।
বাণীপুরে ভাড়াবাড়িতে থাকতে নন্দলাল আঁকলেন “উমার তপস্যা”। গুরুকে দেখাতে গেলেন জোড়াসাঁকোয়। ছবি দেখে অবন ঠাকুর বললেন “খুব ভালো এঁকেছো কিন্তু রং কই? আরও রং দাও…” বাড়ি ফিরে পরদিন ভোরবেলা অনেক রঙের শিশি নিয়ে “উমার তপস্যা” রাঙাতে বসলেন। কোথায় রং দেবেন ভাবছেন। এমন সময় বাড়ির সামনে মোটর গাড়ির আওয়াজ। তারপরেই দরজায় খটখট শব্দ। নন্দলাল, নন্দলাল ডাক। দরজা খুলতেই দেখলেন ভোরবেলায় স্বয়ং গুরু হাজির। “তুমি ওই ছবিতে রং দাও নি তো? একদম দিও না। এখানে তো উমাই তপস্বিনী, তার গায়ে রং থাকবে কেন। ওই কথা বলার পর, দুশ্চিন্তায় আমি সারারাত ঘুমাতে পারিনি। রং দিলেই ছবিটা নষ্ট হয়ে যেত…।” ফিরে গেলেন অবন ঠাকুর। কিন্তু গুরুর আদেশ, রং তো দিতেই হবে। একটুখানি সবুজ রং গুলে উমার আঙুলে পরিয়ে দিলেন ঘাসের আংটি। অর্থাৎ গুরুর আদেশ রক্ষা করা হলো। এমন ছিল গুরু- শিষ্যের অমর সম্পর্ক।
রবীন্দ্রনাথ ও অবনীন্দ্রনাথ এই দুই ঠাকুরের সত্ত্বায় পেয়েছিলেন নন্দলাল। ১৯২৩ সালে পাকাপাকিভাবে শান্তিনিকেতনে এসে কলাভবনের
অধ্যক্ষ পদে বসলেন। রবীন্দ্রনাথকে পেয়ে কল্পনার জগত থেকে বাস্তবে মাটিতে পা দিলেন নন্দলাল। রবীন্দ্রনাথের চোখ দিয়ে দেখলেন বীরভূমের রুক্ষ মাটির প্রকৃতি…। ছাত্র কেমন শিক্ষাদান করছে, তা দেখতে সে বছরই অবন ঠাকুর শান্তিনিকেতনে এলেন। আম্রকুঞ্জে ঘটা করে তাঁকে সম্বর্ধনা দিয়েছিলেন রবি ঠাকুর। বলেছিলেন আমার পর তুমিই বিশ্বভারতীর দায়িত্ব নিও। কাকার সে কথা ভাইপো ফেলতে পারেননি। কবিগুরুর মৃত্যুর পর বিশ্বভারতীর আচার্য হয়ে ১৯৪১ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত দায়িত্বভার সামলে ছিলেন অবন ঠাকুর। তাঁকে শিক্ষক হিসেবে যারা কাছে পেয়েছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম আধুনিক শিল্পকলার পথিকৃৎ সত্যজিৎ রায়, দিনকর কৌশিক, কে. জি. সুব্রহ্মণিয়ম, জয়া আপ্পাস্বামী প্রমূখ। প্রকৃতই জহুরী ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তাই তো, অবন ঠাকুরের কাছে অনেক মান-অভিমান করে চিঠি লিখেও নন্দলালকে শান্তিনিকেতনে আনতে পেরেছিলেন। ভাগ্যিস এনেছিলেন। আজকের কলাভবন, তারই ফসল…।
অনুলিখন ইন্দ্রজিৎ রায়
সহযোগিতায় : সত্যেন্দ্র পাত্র