দোকানপাট খুলেছে। ধীরে ধীরে কেনাকাটাও শুরু করেছে মানুষ। আসুন জেনে নেওয়া যাক তারকাদের কেনাকাটার অভ্যেস কীরকম। তাঁরা কীভাবে কেনেন, কোথা থেকে কেনেন, কী কেনেন। খবর নিলেন স্বস্তিনাথ শাস্ত্রী। 

বাজারে গেলে মন ভালো থাকে
শুভাশিস মুখোপাধ্যায়
 কেনাকাটা করার ব্যাপারে আমার একটা পরিষ্কার নীতি আছে। আমি স্থানীয় বাজারেই যাই, পাড়ার দোকান থেকেই জিনিসপত্র কিনি। তার কারণ হল, বড় শপিং মল হোক বা আন্তর্জাতিক কোনও ব্র্যান্ডের শো-রুম, তাদের ক্রেতার অভাব হবে না। কিন্তু আমার পাড়ার দোকানটা থেকে যদি আমি কেনাকাটা না করি তো সেটা দু’দিন বাদে উঠে যাবে। তার তো আর প্রচুর পুঁজি নেই। কাজেই আম সব্জি বাজার হোক, মাছ-মাংস কিংবা মশলা- সব পাড়ার দোকান থেকেই কিনি। আমি নিজে বাজারে যাই। কখনও আমি আর ঈশিতা (স্ত্রী) দু’জনে একসঙ্গে যাই। গড়িয়াহাট বাজার, ঘুঘুডাঙা বাজার কিংবা বালিগঞ্জ ফাঁড়ির বাজার থেকেই বাজার করি। স্থানীয় বাজার থেকে বাজার করার আর একটা ভালো ব্যাপার হল নিয়মিত যেতে যেতে দোকানদারদের সঙ্গে একটা অদ্ভুত আত্মীয়তা তৈরি হয়ে যায়। দু’দিন না গেলে জিজ্ঞেস করেন, দাদা ভালো আছেন তো? দু’টো সুখ-দুঃখের আলোচনাও হয়। শপিং মলে কিন্তু এই ব্যাপারটা নেই। সেখানে সব সাজানো-গোছানো, কিন্তু হৃদয়ের উষ্ণতাটা পাওয়া যায় না। আমি জামাকাপড়, জুতো সবই কিন্তু স্থানীয় দোকান থেকে কেনার পক্ষপাতী। ব্র্যান্ডে বিশ্বাসী নই। আসল হল ক্যারি করতে পারাটা। ঠিকঠাক ক্যারি করলে সব পোশাকেই মানাবে। আর ব্র্যান্ড তো আমি নিজেই।
বাজারে গেলে আর একটা জিনিস হয়। তা হল, মন ভালো হয়ে যায়। টাটকা শাক-সব্জি, মানুষের নৈকট্য, দু’টো মনের কথা, হৃদয়ের উষ্ণতা এসবের মধ্যে একটা মন ভালো করে দেওয়ার ওষুধ আছে। তবে একটা কথা বলব, বর্তমান পরিস্থিতিতে খুব প্রয়োজন না হলে বাজারে না যাওয়াই ভালো।
আর অনলাইন শপিং এখনও পর্যন্ত করিনি। মাঝে মাঝে ভেবেছি, কিন্তু করে ওঠা আর হয়নি।

বাজার করতে ভালোবাসি
খরাজ মুখোপাধ্যায়
 আমার বাজার করতে খুব ভালো লাগে। বাজার মানে সব্জি, মাছ, মাংস এইসব। আর সেটা স্থানীয় বাজার থেকেই করতে ভালোবাসি। আমি ম্যাডক্স স্কোয়্যারে থাকি। সামনেই ল্যান্সডাউন মার্কেট। তবে মুশকিল হল, আজকাল বাজারে গেলে বড্ড ভালোবাসার অত্যাচার সহ্য করতে হয়। সেই জন্য নিজে আর বাজারে যাই না। বাজারে আমার অনেক চেনা দোকানদার আছেন। কেউ মাছ বিক্রি করেন, কেউ সব্জি। আমি তাঁদের ফোনে কী কী লাগবে বলে দিই। ওঁরা সবকিছু গুছিয়ে আমার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। একমাস বাদে ওঁরা হিসেব করে আমাকে জানান গোটা মাসের বিল কত হয়েছে। আমি বেয়ারার চেকে ওঁদের পেমেন্ট করে দিই যাতে সঙ্গে সঙ্গে টাকাটা পেয়ে যান।
গুছিয়ে বাজার করার ব্যাপারে আমার খুব সুখ্যাতি আছে। সবাই আবার গুছিয়ে বাজার করতে পারেন না। ধরুন বাড়িতে শুক্তো হবে। তা তার জন্য যা যা সব্জি লাগবে, সব আমি নিয়ে আসতে পারব। অনেকেই হয়তো মুলোটা কিংবা বড়িটা আনতে ভুলে যাবেন। আমার কিন্তু তা হবে না। মশলা বাজারটাও আমি পাড়ার দোকান থেকেই কিনি। আর এখনও আমি বাড়ির বাইরে গেলে ফেরার সময় কিছু না কিছু বাজার করে নিয়ে আসি। আমাদের বাড়িতে খাসির মাংস হয় মাসে একদিন। সেটা অবশ্য স্বাস্থ্যের কারণে। তো খাসির মাংস আমি কিনি হাজরা রোডে সুজাতা সদনের কাছে একটা মাংসের দোকান থেকে। ওখান থেকেই নিয়মিত কিনি বলে ওঁদের সঙ্গে একটা সম্পর্কও হয়ে গিয়েছে। সেই সূত্রে আমার একটা পুরনো গাড়িও ওঁরা কিনেছেন। ফলে অসুবিধে হয় না।
তবে জামা-কাপড়, জুতো এসব আমি কিনি না। এসব আমার স্ত্রী আর ছেলেই কেনে। ওরা যা কিনে দেয়, আমি তাই পরি। আমি এই লকডাউনের আগে থেকে সাঁইথিয়ার কাছে আমার গ্রামের বাড়িতে রয়েছি। মাঝে একবার কলকাতায় গিয়েছিলাম। ছেলেকে নিয়ে আবার চলে এসেছি। তা এই গত ৭ জুলাই আমার জন্মদিন গেল। ছেলে সাঁইথিয়া থেকে আমার জন্য একটা জামা কিনে এনে দিল। আমার চেহারা তো আবার একটু...। তবে ইদানীং অনেকটা ঝরেছি। ছেলের চিন্তা ছিল জামাটা ফিট করবে কি না। তা দিব্যি ফিট করে গেল। এই গ্রামের বাড়িতে বসেও আমি কিন্তু দিব্যি বাজার করে চলেছি। টাটকা মাছ পাচ্ছি বোলপুর থেকে। ওখান থেকে একজন সাঁইথিয়া পর্যন্ত নিয়ে আসেন আর আমি সাঁইথিয়া থেকে গিয়ে নিয়ে আসি।
অনলাইনে কেনাকাটা আমি করি না। আমার স্ত্রী, ছেলে করে। আমার ছেলে তো বিদেশি বাজনাটাজনা অনলাইনে কেনে। কোনওটার দাম দেড় লাখ টাকা। আমার খুব ভয় করত প্রথমে। অতগুলো টাকা আগেভাগে দিয়ে দিল, তারপর যদি জিনিসটা না আসে! তা দেখলাম সেরকম হয় না। আর মাঝে মাঝে বিগ বাজার, কিংবা স্পেনসার্সে যাই। ওখান থেকেও টুকটাক কেনাকাটা করি।

আমি ব্র্যান্ড সচেতন
অনিন্দ্য পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়
 কেনাকাটার ব্যাপারে আমি একেবারেই আনাড়ি। তবে হ্যাঁ, আমার নিজের পোশাক-আশাক আমি নিজেই কিনি। কারণ, অন্যের পছন্দ, অপছন্দ, রুচির ওপর আমার একেবারেই ভরসা নেই। তাই আমি নিজে গিয়ে নিজের জিনিস কিনি। তাতে হয়তো একটা টি-শার্ট কিনতে আমাকে তিনবার দৌড়তে হয়, কিন্তু তাই সই। আমার আবার সিদ্ধান্ত নিতেও একটু সময় লাগে। কোনও একটা পোশাক দেখে পছন্দ হওয়ার পরও পাঁচবার ভাবি। দু’বার দোকানে ঢুকি, তিনবার বের হই। আসলে আমাদের সমাজটাই তো এরকম অবিন্যস্ত, এলোমেলো...। আর বাজারে, মানে তরিতরকারি, মাছ-মাংস কিনতে আমি জীবনে কখনও ঢুকিনি। এগুলো আগে আমার বাবা করতেন, এখন আমার বউ করে। কেনার ব্যাপারটা যদি একটু বেশি টাকার হয়, অর্থাৎ টিভি, ফ্রিজ এই ধরনের জিনিস হয়, তখন অবশ্যই আমার স্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে তবেই কিনি এবং দু’জনেই যাই।
বাইরে গিয়ে কেনাকাটা করার কোনও অভ্যেস আমার নেই। মানে, আমার শিডিউলে শপিংয়ের জন্য আলাদা কোনও ডেট বা টাইম থাকে না। এমন হয়েছে যে রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে কোনও একটা কিছু চোখে পড়ে গেল, পছন্দ হয়ে গেল তখন সেটা কিনেছি। কিন্তু পরিকল্পনা করে কিছু কিনি না।
আর অনলাইনে কেনা আমার একদম অপছন্দ। কারণ, এমনিতেই তো আমরা দিনকে দিন একা হয়ে যাচ্ছি, এইসব কেনাকাটা করলে তবু সামাজিক মেলামেশা, কথাবার্তা হয়। সেটাই অনেক। তবে আমি একটু ব্র্যান্ড সচেতন। তাই কেনাকাটা করি শপিং মল থেকেই।

আমি শপোহোলিক
নেহা ধুপিয়া
 আই লাভ শপিং। কেনাকাটা করতে আমার খুব ভালো লাগে। সে আমি যেখানেই যাই না কেন, শপিং করা থেকে আমাকে আটকানো যাবে না। আমি সবকিছু কিনি, কিনতে ভালোবাসি। বেড়াতে যাওয়াটা হল আমার নেশা। আর বেড়াতে গেলে আমি যে কাজটা সবার আগে করি তা হল শপিং। আলপিন থেকে এলিফ্যান্ট কিছুই আমার কেনার তালিকা থেকে বাদ পড়ে না।
আর অনলাইন শপিং হল একটা দারুণ অভিজ্ঞতা। আপনাকে বাইরে যেতে হবে না, এয়ারকন্ডিশনে বসে কম্পিউটারের পর্দায় চোখ রাখলেই সবকিছু আপনার হাতে মুঠোয় চলে আসবে। ক্যাশ পেমেন্টেরও ঝামেলা নেই। আমি তো মুম্বইয়ে থাকলে অনলাইনেই কেনাকাটা করি। তা সে রান্নার জিনিস হোক কিংবা ইলেকট্রনিক গুডস।
এখন মেয়ে হয়ে যাওয়ার পর অবশ্য মেয়ের জিনিসই বেশি কেনা হচ্ছে। ওর জামাকাপড়, ন্যাপি, খেলনা, বাথটব আরও কত কিছু!