বিদ্যায় অস্থির মানসিকতা থাকবে। কর্মপ্রার্থীদের কোনও শুভ যোগাযোগ হতে পারে। রাগ বা জেদের বশে কারও ... বিশদ
প্রযোজনা : কালিন্দী নাট্যসৃজন
পরিচালনা : শান্তুনু দত্ত
অতি সম্প্রতি কালিন্দী নাট্যসৃজন তাদের নবতম প্রযোজনা মোহন রাকেশের ‘আষাঢ়ের প্রথম দিনে’ মঞ্চস্থ করল। প্রসঙ্গত, ঠিক একই সময়ে আরো দুটি নাট্যগোষ্ঠী মোহন রাকেশের অন্য দুটি নাটক মঞ্চস্থ করেছেন। তবে আষাঢ়ের প্রথম দিনের বিষয়বস্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন স্বাদের, মহাকবি কালিদাসের জীবনে মল্লিকার প্রভাব এবং মহাকবি কালিদাসের কালিদাস হয়ে ওঠার কাহিনী বর্ণিত হয়েছে এই নাটকে। আরও একটি বিষয় হল, কালিদাস সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য এই নাটকে বলা হয়েছে যেটা কিনা বহু মানুষের অজানা ছিল। একই গ্রামে বসবাস করতেন কালিদাস আর মল্লিকা। মল্লিকার পরিবার বলতে তাঁর মা। আর্থিকভাবে একটি অসচ্ছল পরিবার মল্লিকাদের। কিন্তু তিনি ছিলেন শিল্পমনস্কা, সাহিত্যের প্রতি ছিল তাঁর অনুরাগ। তিনি ছিলেন কালিদাসের অনুপ্রেরণা। প্রায় অঘোষিত শর্তহীন এবং শাশ্বত প্রেমের সম্পর্ক ছিল মল্লিকা আর কালিদাসের। এদিকে কালিদাসের মেধা এবং পাণ্ডিত্য আরও পরিণত হতে থাকে, আর কলম থেকে বেরিয়ে আসতে থাকে অনবদ্য সব সাহিত্যকর্ম। স্বভাবতই কালের নিয়মে এই ব্যবস্থার উত্তরণ ঘটাবার দাবি করতে থাকে পরিস্থিতি। রাজ পরিবারের ডাক পড়ে রাজসভায় কবির আসন গ্রহণ করার জন্য। প্রবল আপত্তি থাকলেও মল্লিকার জোরাজুরিতে বাধ্য হয়েই রাজসভায় কবি হিসেবে যোগ দেন কালিদাস। কিছুকালের মধ্যেই রাজকন্যার সঙ্গে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন। দিন যায় বছর ঘোরে, কিন্তু কালিদাস আর ফেরে না! ইতিমধ্যে মাতৃবিয়োগ হয়েছে মল্লিকার। অভাব, একাকিত্ব দিনে দিনে গ্রাস করতে থাকে। কালিদাসের অপেক্ষায় ক্লান্ত মল্লিকা, খানিকটা বাধ্য হয়েই জীবনের বৈতরণী পার হবার জন্য লম্পট মাতাল বিনোথকে বিয়ে করে। বিনোথের মল্লিকার ওপর লোভ দীর্ঘকালের। বিনোথ হাতে সোনা পেয়ে যায়। একটি সন্তানের জন্মও দেয় কিন্তু মল্লিকার জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ। ইতিমধ্যে কালিদাস কাশ্মীরের রাজার সিংহাসনে বসেছেন রাজা হয়ে। কিন্তু রাজনীতি তাঁর বিচরণ ক্ষেত্র নয়। তাই আবার ফিরে আসেন নিজের পুরনো জায়গায়, নিজের গ্রামে। কিন্তু এসে দেখেন তাঁর মল্লিকা এখন আর তাঁর নেই। সে এখন বিনোথের বিবাহিতা স্ত্রী। এই নাটকে মোট তিনটি দৃশ্য এবং দুটি বিরতি। বিরতির আগে এবং পরে দৃশ্যগুলিতে সময়ের একটা পরিবর্তন দেখা যায়, সময়ের আঙ্গিকগুলো একেকটা একেক রকম। আর সেই ভিন্ন স্বাদের অভিনয়ে মল্লিকার ভূমিকায় অনসূয়া মুখোপাধ্যায় অনবদ্য। অনসূয়ার পরিমিতি বোধ, সংলাপের ওপর দখল এবং শারীরিক ভাষা মল্লিকার চরিত্রটিকে এক অন্য রূপদান করেছে। কালিদাসের চরিত্রে তথাগত চৌধুরি অত্যন্ত প্রশংসার দাবি রাখে। বিনোথের চরিত্রের রণদীপ নন্দী সুসঙ্গত করেছন। অম্বিকার ভূমিকায় মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় যথাযথ, একটি বিশেষ চরিত্রে মাতুলের ভূমিকায় বিল্বদল চট্টোপাধ্যায় যথেষ্ট ভালো অভিনয়ের ছাপ রেখেছেন। বরাবরের মতোই আলোতে সুদীপ স্যানাল ভালো কাজের সাক্ষ্য বহন করেছেন। মঞ্চসজ্জায় ত্রিগুণা শঙ্কর ভালো। আবহ সঙ্গীতে দিশারী চক্রবর্তী প্রশংসনীয়। পোশাক পরিকল্পনায় শর্মিষ্ঠা বসুর কাজ যথেষ্ট প্রশংসার দাবি রাখে। কালিন্দী নাট্যসৃজনের আষাঢ়ের প্রথম দিন প্রযোজনাটির মান বেশ উন্নত। আষাঢ়ের প্রথম দিনের যাত্রাপথ আরও সুগম হোক।
শুভঙ্কর গুহ