কাজকর্মের ক্ষেত্রে যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে। ক্রীড়াবিদদের সাফল্য লাভের সম্ভাবনা। পারিবারিক ক্ষেত্রটি মোটামুটি থাকবে। ... বিশদ
কেবিউটি— কোরিয়ান বিউটি। যে রূপরুটিন মেনে চললে নাকি পাওয়া যায় কোরিয়ান গ্লাস স্কিন। কাচের মতো ঝকঝকে ত্বক। কোরিয়ার নারীদের মতো উজ্জ্বল ত্বক ও সৌন্দর্য পেতে হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছে ভারতীয় বাজারে। আলিয়া ভাট থেকে শুরু করে বলিউডের অনেক তাবড় সেলিব্রিটি কোরিয়ান বিউটি প্রোডাক্ট নিয়ে কথা বলেছেন সামাজিক মাধ্যমে। তাঁদের দেখে আরও বেশি করে আগ্রহী হয়েছে সাধারণ মেয়েরা। কিন্তু যতটা হইহই করে কোরিয়ান বিউটি-র যাত্রা শুরু হয়েছিল, যাত্রাপথে এগতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে এদেশের জন্য কোরিয়ান গ্লাস স্কিন অনেকটাই মিথ!
এ ব্যাপারে কথা হচ্ছিল কসমেটোলজিস্ট রেশমা বানুর সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘এখন ক্রমশ প্রমাণিত হচ্ছে যে কোরিয়ান গ্লাস স্কিন এখানে মিথ। এটা নিয়ে প্রচুর প্রচার হয়েছিল। কিন্তু কোরিয়ার বিউটি প্রোডাক্ট ভারতীয় বা বিশেষ করে বাঙালিদের ত্বকে কেন উপযোগী নয়, সেটা একটু খুঁটিয়ে জানলেই বিষয়টা স্পষ্ট হবে।’ রেশমার কথায়, ‘প্রথমত আমাদের ত্বকের ধরনটাই কোরিয়ানদের মতো নয়। আর আমাদের এখানে আবহাওয়া ও পরিবেশ অনেকটাই আলাদা। যা ত্বকের উপর অনেকাংশে প্রভাব ফেলে। এমনিতে ভারতীদের স্কিন টাইপ অনেক বেশি ঘন বা থিক। মেলানিন কনটেন্ট আমাদের বেশি থাকে। আমাদের ত্বক অনেক বেশি ট্যানপ্রবণ হয়। কিন্তু ট্যান বেশি হলেও স্কিন বার্ন আমাদের তুলনায় কম হয়। পিগমেন্টেশন হওয়ার সম্ভাবনাও আমাদের অনেক বেশি। কোরিয়ানদের সঙ্গে আমাদের বড়সড় ফারাক এই জায়গাটায়। কোরিয়ানদের মধ্যে পিগমেন্টেশন বলতে গেলে পাওয়াই যায় না। আর আমাদের এখানে এটা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা।’ কোরিয়ান মহিলারা ত্বকচর্চায় যেদিকে সবচেয়ে বেশি জোর দেন, সেটা হল হাইড্রেশন। ভারতীয় মহিলারা ত্বকচর্চায় শুধু হাইড্রেশনে মন দিলেও গ্লাস স্কিন পাবেন না। ওই দেশের পণ্য এদেশে এখন অনেকেই ব্যবহার করছেন। তাতেও কোরিয়ান মহিলাদের মতো ত্বক পাওয়া যাবে না।’
আমাদের মূল সমস্যা পিগমেন্টেশন। তারপর দেখতে হবে হাইড্রেশন। রেশমা বললেন, কোরিয়ান মহিলারা ত্বকের যত্নের জন্য যে রূপরুটিন ফলো করেন, তার অনেকগুলো ধাপ রয়েছে। যেমন প্রথমে তাঁরা ব্যবহার করেন অয়েল বেসড ক্লেনজার। তারপর ফোম বা জেল বেসড ক্লেনজার, অর্থাৎ প্রথমেই ডাবল ক্লেনজিং।
তারপর ওঁরা ব্যবহার করেন এক্সফোলিয়েটর। যার মধ্যে থাকে এএইচএ এবং বিএইচএ। এরপর আসে হাইড্রেশন টোনার। এরপর ওঁরা ব্যবহার করেন হাইড্রেটিং এসেন্স যার মধ্যে থাকে হায়ালুরনিক অ্যাসিড। এরপর আসে সেরাম। শেষে শিট মাস্ক। এই দু’টি উপকরণ দিয়েই মূলত হাইড্রেশন অর্থাৎ ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষা এবং পুনরুজ্জীবন ঘটানো হয়। এই বিউটি থেরাপি অনুসরণ করার পরে ওখানে মহিলারা ব্যবহার করেন আন্ডার আই ক্রিম। তারপর ময়েশ্চারাইজার, সান স্ক্রিন এবং অর্গ্যানিক অয়েল। এতেই আসে ঝকঝকে এফেক্ট। পোরস সব বন্ধ হয়ে যায়।
বিশেষজ্ঞের দাবি, এই হায়ালুরনিক অ্যাসিড নিয়ে এত বেশি এখন মাতামাতি করা হচ্ছে, তার মধ্যেও একটা গোলমাল আছে। কারণ এটিও সবার ত্বকের জন্য উপযোগী নয়। মূলত কম্বিনেশন স্কিনে এটা ভালো কাজ করে। অয়েলি স্কিনে এই অ্যাসিড একেবারেই চলবে না। শুষ্ক ত্বকেও সেভাবে কাজ দেয় না।
রেশমা জানালেন, আমাদের ত্বক কোরিয়ানদের তুলনায় অনেক বেশি তৈলাক্ত। কারণ এখানে দূষণ এবং ভ্যাপসা আবহাওয়ায় ঘাম বেশি হয়। এবার কোরিয়ান মহিলাদের মতো এতগুলো পর্যায়ে ত্বকচর্চা শুরু করলে আমাদের ত্বক অনেক বেশি জ্বালা করতে পারে। পোরস বন্ধ হয়ে গেলে আমাদের সমস্যা। অ্যাকনে হওয়ার ধাত আছে যাদের, তাদের জন্যও এটা খুবই ক্ষতিকর।
তাহলে উজ্জ্বল স্বাস্থ্যকর ত্বকের জন্য কী দরকার? রেশমা বলেন, ‘একটা মসৃণ স্কিন টোন রাখতে হবে। তাতে কোনওরকম ব্লেমিশ থাকবে না। পিগমেন্টেশন কমাতে হবে। আগে ভাবা হতো মুখে কোনও দাগ নেই মানেই ভালো স্কিন। কিন্তু এই ধারণা পাল্টাচ্ছে। অ্যাকনে, রিঙ্কল এসব দূরে রাখা, ফেসিয়াল হেয়ার থাকবে না, কোনও দাগ বা ক্ষতচিহ্ন থাকবে না এগুলোও বলা হচ্ছে। এবার এর সঙ্গে সামাজিক মাধ্যম বা বিজ্ঞাপন এসব থেকে অনেকের মনে জুড়ে গিয়েছে কে বিউটি ফলো করার ইচ্ছে। সেটা ঠিক নয়।’
আমাদের প্রত্যেকের ত্বকের ধরন আলাদা। ভারত বৈচিত্র্যময় দেশ। এখানে তাই অঞ্চলভেদে ত্বকচর্চার রুটিন বদলে যায়। প্রত্যেকের ডায়েটও আলাদা হয়। সঙ্গে লাইফস্টাইল আছে। হরমোন আর জিনগত বিষয় তো আছেই। তাই আমাদের এখানে আমাদের নিজেদের মতো করেই সবাই সুন্দর হতে পারেন, জানালেন রেশমা। নিয়মিত ত্বকের যত্ন নেওয়া, ত্বকের পুষ্টির দিকে খেয়াল রাখা জরুরি। দু’সপ্তাহ খুব ভালো করে যত্ন করলাম, তারপর ফলপ্রদ হচ্ছে না ভেবে ছেড়ে দিলাম। এটা করলে চলবে না, বলছেন তিনি। ধারাবাহিকভাবে ত্বক পরিচর্যা করলে ফল অবশ্যই পাবেন। ত্বকের ধরন অনুযায়ী আর্দ্রতা রক্ষা করবেন ময়েশ্চারাইজার দিয়ে। সঙ্গে হাইড্রা ফেসিয়ালও মাসে একটা করে করতে পারেন। এতে ত্বকে দূষণের প্রভাব অনেকটা কমানো যায়।
কোরিয়ায় মহিলারা ত্বকের যত্ন করেন একেবারে ভিতর থেকে। ওঁরা সেভাবে মেকআপ বেশি করেন না। কিন্তু ভারতীয়দের মধ্যে উৎসবে মেকআপ করার একটা আগ্রহ থাকে। অনেকে পেশার তাগিদেও নিয়মিত মেকআপ করে থাকেন। সেক্ষেত্রে ত্বকের ক্ষতি কীভাবে কমানো যায়? বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘স্কিন কেয়ার রুটিন নিয়মিত অনুসরণ করলে অনেক বেশি ভালো থাকবে ত্বক। অর্থাৎ মেকআপ ঠিকভাবে পরিষ্কার করে ত্বকের হাইড্রেশন করা। এছাড়া স্কিন ক্লিনিকে এসে কখনও কেমিক্যাল পিলিং অথবা জেন্টল এক্সফোলিয়েশন করে নিতে পারেন। এতে ত্বকের উজ্জ্বলতাও আসবে এবং কোলাজেন তৈরি হবে। কেউ ট্যান রিমুভ করাতে পারেন। এরপর রোজকার যেটুকু রুটিন, অর্থাৎ ক্লেনজিং ময়েশ্চারাইজার সানস্ক্রিন চালিয়ে যেতে পারলে আর কিছু লাগে না।’
তাঁর মতে,‘অনেক স্যালঁয় ত্বকে দ্রুত উজ্জ্বলতা আনতে স্টেরয়েড দেওয়া ক্রিম ব্যবহার করা হয়। তাতে সঙ্গে সঙ্গে একটা উজ্জ্বলতা হয়তো আসে, ক্রেতা খুশিও হন। এতে আখেরে ত্বকের ক্ষতিই হয়। এগুলো করবেন না। সাইড এফেক্ট থাকবেই। পিগমেন্টেশন পরে বেড়ে যাবে। কোনও ভালো স্কিন ক্লিনিক কিন্তু কোরিয়ান গ্লাস বিউটি ফলো করার কথা বলবে না। বেঙ্গল বিউটিই সেরা। নিজের স্কিন টোন মেনে নিয়ে সেটার যত্ন করুন।’