উত্তম বিদ্যালাভের যোগ আছে। কাজকর্মে উন্নতি ও কাজে আনন্দলাভ। অর্থাগমের উত্তম যোগ। ... বিশদ
রোদ্দুরের রং বদলাচ্ছে। ছাতিম ফুলের গন্ধ এবার ছুটি নেবে। বাতাসে হিমেল পরশ পেরিয়ে হালকা শীতের টান। ঋতু বদলে বদলাবে রূপ রুটিনও। শীতের রূপচর্চার বড় অংশ জুড়ে থাকে রকমারি তেল। এককালে খোলা উঠোনে শীতের রোদ্দুরে তেল মাখিয়ে খানিকক্ষণ শুইয়ে রেখে স্নান করানো হতো শিশুকে। এখন ফ্ল্যাটবন্দি জীবনে সে ছবি অনেকটাই ফিকে। তবুও তেল রূপচর্চায় অপরিহার্য। শুধু জেনে নিতে হবে তার সঠিক ব্যবহার।
রূপবিশেষজ্ঞ কেয়া শেঠ প্রথমেই একটি প্রচলিত ধারণা বদলে দিয়ে বললেন, ‘শুধু শীতে নয়, তেল সারা বছরের জন্য ভালো। গরমকালে সর্ষের তেল, শীতে নারকেল তেল মাখেন সকলে। কিন্তু এখন খাঁটি তেল পাওয়া মুশকিল। প্রায় সব রকমের তেলেই অনেক রাসায়নিক, গন্ধ মেশানো হয়। ফলে আগের মতো উপকারিতা থাকে না। বাজারের খোলা তেল একেবারেই ভালো নয়। ওসব মাখলে চর্মরোগও হতে পারে। ঘানির সর্ষের তেল সব সময় ভালো। কিন্তু আজকাল সকলে হাল্কা তেল পছন্দ করেন। কারণ তেল মাসাজ করে ত্বকের অভ্যন্তরে ঢোকানোর জন্য যতটা সময় দেওয়া প্রয়োজন, তা এখন অনেকের হাতেই নেই।’
হাল্কা তেলের মধ্যে কেয়ার পরামর্শ, ‘অলিভ অয়েল ভালো। ত্বকে যদি বলিরেখা পড়তে শুরু করে তাহলে তা দূর করতে সাহায্য করবে। অরেঞ্জ তেলও খুব হালকা। ত্বককে আর্দ্র করে, হারানো উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে। কারণ এর মধ্যে সাইট্রাস অয়েল রয়েছে। এছাড়া জোজোবা অয়েল শুষ্ক, তৈলাক্ত, সাধারণ— সব রকম ত্বকের জন্য ভালো।’ যাঁদের ত্বক স্পর্শকাতর তাঁদের সর্ষের তেল এড়িয়ে চলাই ভালো। এর কারণ ব্যখ্যা করে কেয়া বলেন, ‘সর্ষের তেলে ঝাঁঝ থাকে। চিটচিটে একটা উপকরণ থাকে। আমাদের আবহাওয়ায় সর্ষের তেল একেবারেই রেকমেন্ড করব না। ঘনত্বযুক্ত তেল সহজে ত্বকের ভিতরে ঢোকে না। আর ত্বকের ভিতর না ঢুকে উপরের স্তরে থেকে গেলে কোনও উপকার হয় না। তেল মাসাজ করে ভিতরে ঢোকাতে হবে।’
বাজারমূল্য কিঞ্চিৎ বেশি হলেও অ্যাভোকাডো অয়েল ব্যবহারেরও পরামর্শ দিলেন কেয়া। তিনি বলেন, ‘এই তেলের দাম অন্যান্য তেলের তুলনায় বেশি। কিন্তু শিশু থেকে শুরু করে যে কোনও বয়সের মানুষ ব্যবহার করতে পারেন। এতে ত্বক উজ্জ্বল, মোলায়েম হবে। বয়স থাকবে হাতের মুঠোয়। মুখ, সারা শরীর এমনকী চুলেও মাখা যায়। অ্যাভোকাডো তেল মাখলে কোনও আর ময়েশ্চারাইজারও লাগবে না।’
দিনের কোন সময় এবং কীভাবে তেল মাখবেন, তা নিয়েও প্রশ্ন থাকে অনেকের। কেয়া জানালেন, সারা বছর স্নানের আগে তেল মাখা ভালো। যতটা ত্বকের ভিতরে গেল, বাকিটা স্নান করে পরিষ্কার করে নিতে হবে। ‘এখন স্নানের সময় অনেকেই প্রতিদিন সাবান ব্যবহার করেন। ধুলো, ঘাম, জীবাণু থেকে মুক্তি পেতে এছাড়া উপায়ও নেই। কিন্তু তেল মেখে স্নান করে সবটা সাবান বা বডি সোপ দিয়ে ধুয়ে ফেললে কোনও লাভ নেই। ত্বকের অভ্যন্তরে ঢুকলে তবেই লাভ। শীতকালে স্নানের পর ভিজে গায়েই তেল অ্যাপ্লাই করুন। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য এটা আদর্শ উপায়। আর শুষ্ক ত্বকের মানুষরা গা মুছে তেল লাগান। কোনও হালকা তেল পোশাকে লাগে না।’
বাঙালি পরিবারে নারকেল তেলের ব্যবহার অতি প্রাচীন। ত্বক এবং চুল যাবতীয় পুষ্টি পায় এই তেল থেকে। শুষ্ক ত্বক, রুক্ষ চুলের জন্য বেছে নিন নারকেল তেল। ত্বকের জেল্লা ফেরাতে ও চুল কোমল রাখতে আদর্শ। ডার্ক সার্কলের সমস্যা দূর করতেও নারকেল তেল উপকারী বন্ধুর মতো। মেকআপ তুলে ফেলার জন্য সবথেকে জরুরি উপাদান নারকেল তেল। এর কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নেই।
বেশ কিছু উপকারী ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, ভিটামিন এবং খনিজের উৎস হল তেল। ফলে ত্বকে চুলকানি, র্যাশ থাকলে টি-ট্রি অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। ত্বক রোদে পুড়ে কালো হয়ে গেলে ব্যবহার করতে পারেন ল্যাভেন্ডার অয়েল। ঠোঁট শুকনো হয়ে যাওয়ার সমস্যায় অনেকেই সারা বছর নাজেহাল হন। তাঁদের জন্য আদর্শ ক্যাস্টর অয়েল।
তেল নির্বাচন করার সময় কয়েকটি জিনিস খেয়াল রাখতে হবে। বিষয়টি বুঝিয়ে দিলেন কেয়া। ‘ধরুন সকালে তেল মেখেছেন। চার ঘণ্টা বাদেও দেখলেন ত্বকের উপর তেল চকচক করছে। আপনি ভাবলেন, বাহ! দারুণ তেল এটা। সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। যত প্রিমিয়াম কোয়ালিটি হবে, তেল হবে তত লাইট। পেট্রোলিয়ামজাত জিনিস মেশালে তেলের ঘনত্ব বাড়বে। ঘনত্ব দেখে তেলের পিওরিটি বিচার করা যায় না। তেল মাখার দু’ঘণ্টা বাদেও ত্বকের উপরটা তৈলাক্ত থাকলে বুঝবেন তা ভিতরে যায়নি। দেখবেন, খাঁটি ক্রিম পাতলা জলের মতো হয়। যা ত্বকের ভিতর তাড়াতাড়ি ঢোকে। তেলও তাই। ত্বক প্রয়োজন অনুযায়ী নিয়ে নেবে।’
যাঁদের ত্বক ও চুল অত্যন্ত স্পর্শকাতর, তাঁরা প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন। কারণ ব্যক্তিভেদে প্রয়োজন অনুযায়ী বদলে যায় প্রোডাক্টের ধরন। কেয়ার পরামর্শ, প্রয়োজনে পেশাদারের সাহায্য নিন।