উত্তম বিদ্যালাভের যোগ আছে। কাজকর্মে উন্নতি ও কাজে আনন্দলাভ। অর্থাগমের উত্তম যোগ। ... বিশদ
পুজোর চারদিন বদলে যায় কলকাতার সাজ। বদলে যায় চিরচেনা দৈনন্দিন। সময় যেন থমকে থাকে আলো, হাসি, হুল্লোড়ের মাঝে। বেহিসেবি খাওয়াদাওয়া। রঙিন পোশাক। মেকআপের যথেচ্ছ ব্যবহার চারদিনের রুটিন। ঠিক তারপরই ত্বক যেন বিশ্রাম চায়। ক্লান্তি গ্রাস করে। তাই আবার চেনা চেহারায় ফিরতে কিছু নিয়ম মেনে চলা শ্রেয়। কীভাবে নিজেকে তরতাজা করে তুলবেন? তার হদিশ দিলেন কসমেটোলজিস্ট এবং এস্থেটিক কনসালট্যান্ট সায়ন্তন দাস।
পুজোর সময় যত নিয়ম, সব ভেঙে ফেলাতেই যেন আনন্দ। খাওয়াদাওয়া, ত্বকের যত্ন, শরীরের সার্বিক যত্ন— সবক্ষেত্রেই নিয়ম ভাঙা হয়েছে গত কয়েকদিন। এবার ধীরে ধীরে বোঝা যাচ্ছে ত্বক, চুলের বড় ক্ষতি হয়েছে। হাত, পা রুক্ষ্ম হয়ে গিয়েছে। ক্রমশ ঋতু বদলাবে। ফলে এখন থেকেই ত্বকের অতিরিক্ত যত্ন প্রয়োজন। বাইরের খাবার খাওয়া, কম ঘুমের কারণে শরীর ডিহাইড্রেট করে যায়। ফলে নিজেকে সুস্থ করে তোলার প্রথম ধাপেই প্রচুর জল খেতে হবে। সায়ন্তন বললেন, ‘অনেকেই বলেন প্রচুর জল খাই। কিন্তু তাও শরীর আর্দ্র হচ্ছে না। এর কারণ কোষ সঠিকভাবে জল শুষে নিতে পারছে না। সকালবেলা প্রথম যখন জল খাবেন, সেই গ্লাসে এক চিমটে হিমালয়ান সল্ট দিয়ে খান। পিঙ্ক সল্ট ওয়াটার ম্যাগনেটের কাজ করে। এতে কোষ জল শুষে নিতে পারবে।’
যে কোনও পরিস্থিতিতে স্বল্প মেকআপ ব্যবহারের পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু কাজের প্রয়োজনে অনেককেই নিয়মিত মেকআপ করতে হয়। পুজোর সময় মহিলারাই বেশি পরিমাণে মেকআপ করেন। চুলেও হিট দিয়ে বিভিন্ন হেয়ার স্টাইল করা হয়। তাতে চুল ও ত্বকের ক্ষতি হয়। প্রথমেই ত্বক ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে। অন্তত এক সপ্তাহ দু’বেলা করে ত্বক পরিষ্কার করুন। মেকআপ না করতে পারলে খুব ভালো। অন্তত কম মেকআপ ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। ত্বককে শ্বাস নেওয়ার সুযোগ দিন। ত্বকের অভ্যন্তরে ঠিক মতো অক্সিজেন পৌঁছলে তা আবার হারানো উজ্জ্বলতা ফিরে পাবে।
ঘরোয়া স্ক্রাবার
ত্বক পরিষ্কারের প্রথম ধাপেই থাকে ক্লেনজিং। ত্বকের ধরন অনুযায়ী ভালো ক্লেনজার ব্যবহার করার পরামর্শ দিলেন সায়ন্তন। ঘরোয়া ক্লেনজারও ব্যবহার করতে পারেন। মাইল্ড স্ক্রাব ব্যবহার করলে ভিতর থেকে ত্বক পরিষ্কার হয়। কীভাবে তৈরি করবেন ঘরোয়া স্ক্রাব?
১) বেসন, চন্দনের গুঁড়ো, গোলাপের পাপড়ির গুঁড়ো, ওটস পাউডার বা আখরোটের খোলার গুঁড়ো, গোলাপ জল মিশিয়ে একটা স্ক্রাব তৈরি করে নিন। তা ১০ মিনিট লাগিয়ে হাল্কা হাতে ঘষে ধুয়ে নিলে ত্বক ভিতর থেকে পরিষ্কার হবে।
২) রাইস পাউডার, কফি বিন পাউডার, লেবুর রস, অ্যালোভেরা জুস মিশিয়ে স্ক্রাব তৈরি করে মুখে এবং শরীরের অন্যান্য অংশেও ব্যবহার করতে পারেন। ১৫ মিনিট পর শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা জলে ধুয়ে ফেলতে হবে।
৩) কফি বিন পাউডার, শুকনো নারকেল, গোলাপ জল, গোলাপের এসেনশিয়াল অয়েল একসঙ্গে মিশিয়েও স্ক্রাবার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বক হলে এই স্ক্রাবার অত্যন্ত উপকারী।
ত্বকের হারানো উজ্জ্বলতা ফিরে পেতে প্রতিটি ধাপ মেনে যত্ন নেওয়া জরুরি। সায়ন্তন বললেন, ‘স্ক্রাব করার পর অবশ্যই সেরাম ব্যবহার করুন। তৈলাক্ত ত্বক হলে নিয়াসিনামাইড এবং স্যালিস্যালিক অ্যাসিডযুক্ত সেরাম ব্যবহার করতে পারেন। যদি ত্বক সাধারণ থেকে শুষ্কের দিকে হয়, তাহলে হায়ালুরোনিক অ্যাসিডের সঙ্গে ভিটামিন সি যুক্ত সেরাম ব্যবহার করতে পারেন। আর যদি ত্বকে দাগ থাকে তাহলে কোলাজেন যুক্ত কোনও সেরাম ব্যবহার করতে পারেন। খুব তাড়াতাড়ি এটা ক্ষতিগ্রস্ত অংশে গিয়ে কাজ করে।’
ঘরে তৈরি প্যাক
মধ্যবিত্তর সংসারে থাকা নিত্যপ্রয়োজনীয় নানা জিনিস দিয়েই ত্বকচর্চা করতে পারেন। এজন্য ঘরোয়া কিছু প্যাক তৈরি করে ব্যবহার করার পরামর্শ দিলেন বিশেষজ্ঞ।
১) মসুর ডাল বাটা, কাঁচা হলুদ, চন্দন, জাফরান, দুধের সর মিশিয়ে মুখে, গলায়, হাতে লাগালে ত্বক আর্দ্র, কোমল হবে। আগের মতো উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
২) দুধের সর, রাইস পাউডার, চন্দন গুঁড়ো, অরেঞ্জ জুস, এক চা চামচ ইয়োগার্ট মিশিয়েও ঘরোয়া প্যাক তৈরি করতে পারেন। শরীরের খোলা অংশে লাগালে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই উপকার পাবেন।
৩) মুলতানি মাটি, মধু, ইয়োগার্ট, চন্দন পাউডার, অ্যালোভেরা অথবা অ্যাপেল সিডার ভিনিগার মিশিয়েও ত্বকে লাগাতে পারেন। এই প্যাকও খুব তাড়াতাড়ি ত্বকের ক্লান্তি দূর করে।
শুধু ত্বক নয়। যত্ন নিতে হবে চুলেরও।
সায়ন্তনের টোটকা, ‘নারকেল তেলের মধ্যে ছাঁচি পেঁয়াজ, মেথি, ধনে, কালোজিরে, কারিপাতা, জবা ফুলের পাপড়ি, আমলকী কুচি দিয়ে তা ফুটিয়ে প্রিজার্ভ করে রাখুন। সপ্তাহে দু’দিন এই তেল ব্যবহার করুন। চুলের পুষ্টি বাড়বে।’
সবকিছু বাড়িতে করার সময় না হলে অবশ্যই পেশাদারের সাহায্য নিন। স্যালোঁয় গিয়ে হাইড্রা ফেসিয়াল করাতে পারেন। যা ত্বককে ভিতর থেকে টক্সিন ফ্রি করবে। অক্সিজেন ট্রিটমেন্টও করাতে পারেন। এতে ত্বকের অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ে। চুলের যত্নে রিপেয়ার হেয়ার স্পা করতে পারেন। এতে স্ক্যাল্পের ইনফেকশন দূর হয়। ট্যান দূর করার জন্য বডি পলিশ করান। পায়ের যত্ন নিতে অবহেলা করেন অনেকে। কিন্তু সেটাই সবথেকে বেশি জরুরি। পেশাদারের কাছে ফুট স্পা করান।
সায়ন্তন বললেন, ‘পোটলি মাসাজ ফুট স্পা নিতে পারেন। পায়ের বিভিন্ন জয়েন্টে যে ল্যাকটিক অ্যাসিড জমে, সেটা এই স্পা সহজেই বের করে দেয়।’ সর্বোপরি এই সময়টা লিকুইড ডায়েটের উপর থাকুন। যাতে পেট ঠিক থাকে। পেট ঠিক থাকলে ত্বক এবং চুলও ঠিক থাকবে। এখনও সামনে নানা উৎসব রয়েছে। শরীর ভালো রাখতে বেশি করে ফলের রস খান। শরীরে টক্সিন দূর করতে ও পটাশিয়ামের মাপ ঠিক রাখতে পাতিলেবু দিয়ে ডাবের জল খান। শরীরকে ডিটক্স করতে সাহায্য করবে এইসব পানীয়।
মেকআপ : লাবণী মল্লিক, সুমনা মাইতি
ছবি : শুভঙ্কর মণ্ডল
ডিজাইনার : সৌরভ মণ্ডল, যোগাযোগ: ৭৫৮৪০০৬০৬৭, ভবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়
আয়োজক : মধুরিসা শীল
স্বরলিপি ভট্টাচার্য