উত্তম বিদ্যালাভের যোগ আছে। কাজকর্মে উন্নতি ও কাজে আনন্দলাভ। অর্থাগমের উত্তম যোগ। ... বিশদ
শোলাশিল্পের জন্য মঙ্গলকোটের বনকাপাশি গ্রামের দেশজুড়ে খ্যাতি। প্রতিবছর গ্রামের শোলাশিল্পীরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বড় বড় প্রতিমা বা মণ্ডপ সাজাতে যান। শোলার বিভিন্ন ধরনের চাঁদমালা, শোলার উপর চুমকি বা জরি বসিয়ে প্রতিমার সাজ নিয়ে তাঁরা পাড়ি দেন ভিন রাজ্যে। আবার শোলার তৈরি নানা শোপিস বিদেশেও পাড়ি দেয়। বনকাপাশি গ্রামে প্রায় আড়াই হাজার পরিবারের বাস। বর্তমানে গ্রামের প্রায় ৪০০টি পরিবার শোলাশিল্পের সঙ্গে যুক্ত। বাংলার জলাশয়ে জন্মানো শোলা কেটে আঠা দিয়ে জরি, চুমকি বসিয়ে প্রতিমার সাজ তৈরি করা হয়। গ্রামের পুরুষ, মহিলারা উভয়েই শোলার নানা সাজ, মডেল তৈরি করেন। তবে বনকাপাশির শিল্পীরা বেশির ভাগই প্রতিমার সাজ তৈরি করেন। বংশ পরম্পরায় এই সাজ তৈরিতে প্রতিযোগিতা এতটাই যে, বর্তমানে যুবকরা কাজ হারাচ্ছেন। কিন্তু অনেকেই আবার শোলা দিয়ে নানা মডেল তৈরি করে রাজ্য সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলিতে সরবরাহ করেন। অনেকেই শোলা দিয়ে তৈরি নানা মডেল ঘরে সাজিয়ে রাখতে পছন্দ করেন। সেই চাহিদা বর্তমানে বাড়ছে। কিন্তু গ্রামীণ শিল্পীরা প্রথাগত কাজের বাইরে যেতে চান না। তাই তাঁরা যাতে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এসব কাজও করতে পারেন তার জন্য বনকাপাশিতে শুরু হয়েছে বিশেষ কর্মশালা।
জানা গিয়েছে, জাতীয় হস্তশিল্প উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় এই কর্মশালায় শোলার বিভিন্ন কাজ হাতে কলমে শেখানো হচ্ছে শিল্পীদের। শোলা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত বনকাপাশির ৩০ জন শিল্পী এই কর্মশালায় সুযোগ পেয়েছেন। ২৫ দিনের জন্য এই কর্মশালায় ইন্টেরিয়র ডিজাইন বা ঘর সাজানোর জন্য একাধিক শিল্পকর্ম তৈরির পাঠ দেওয়া হবে তাঁদের।
কেন্দ্রের টেক্সটাইলের হস্তশিল্প মন্ত্রকের নির্বাচিত করা ডিজাইনারকে পাঠানো হয়েছে মঙ্গলকোটে। ডিজাইনার সুকৃতি মণ্ডল বলেন, শোলার মডেল বা কোনও ডিজাইন তৈরির কাজে শিল্পীরা ততটা পারদর্শী নন। এই কয়েকদিনে তাঁদের দেখানো হবে কীভাবে ডিজাইনের ওপর কাজ করতে হবে। এই কাজ রপ্ত করতে পারলে শিল্পীদের তৈরি শোলার সামগ্রী বাজারজাত করার ব্যবস্থাও করা হবে। মঙ্গলকোটের বনকাপাশির শোলাশিল্পী প্রদীপ মালাকারের তত্ত্বাবধানেই এমন কর্মশালা শুরু হয়েছে৷
শিল্পী সুলেখা মাঝি, চঞ্চল সাহা, নমিতা মাঝি, মাম্পি সাহা বলেন, আমরা শোলার কাজ জানলেও এই ধরনের কাজ অতটা জানি না। এই কর্মশালার পর কাজ রপ্ত করতে পারলে আমাদের আয় নিশ্চয়ই বাড়বে। এই ধরনের জিনিসের বাজারে দাম পাওয়া যায় ভালো। প্রথাগত কাজের বাইরে যে শোলার বাজার রয়েছে তা ধরতে পারবেন মঙ্গলকোটের শোলাশিল্পীরা।