যে কোনও ব্যবসায়িক কর্মে অতিরিক্ত অর্থলাভের প্রবল সম্ভাবনা। শিল্পীদের পক্ষে শুভদিন। ... বিশদ
পেনশনের দাবির জয়
যতদিন প্রত্যাশিত আয়ু কম ছিল, ততদিন পেনশনের বিশেষ গুরুত্ব ছিল না। সেসময় খুব কম লোক যেমন পেনশন পেতেন এবং তেমনি অবসর গ্রহণের পর বেঁচেও থাকতেন আরও কম মানুষ। ১৯৪৭ সালে, যখন ভারত স্বাধীন হল, তখন দেশবাসীর গড় আয়ু ছিল ৩৫ বছরের নীচে। আজ, সেই আয়ু বেড়ে ৭০ বছরের কিছু বেশিই হয়ে গিয়েছে। সুতরাং এখন পেনশন প্রদানের বাধ্যবাধকতা গড়ে দাঁড়িয়েছে অবসর গ্রহণ পরবর্তী ১০-১২ বছর। এরপর পারিবারিক পেনশনের ব্যবস্থা থাকলে সেই পেনভোগীর স্ত্রীর জন্যও সেটি অব্যাহত থাকতে পারে। এই কারণে বেশিরভাগ নিয়োগকর্তা পেনশন প্রদানের প্রশ্নে এখন সতর্ক। কর্মচারীদের তরফে যুক্তিগ্রাহ্য সওয়াল হল: আনুগত্যসহকারে দীর্ঘদিন যাবৎ পরিষেবা প্রদানের মাধ্যমে পেনশন হল কর্মীর একটি অর্জিত অধিকার। অথবা, পেনশনকে বিলম্বিত মজুরি হিসেবেও দেখা যেতে পারে। অথবা, পেনশনকে ভাবা যেতে পারে অবসর গ্রহণের পর মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার অধিকারের একটি উপায় হিসেবেও।
সরকারি কর্মচারীদের মামলার সওয়ালে ‘পেনশনের অধিকার’-এরই জয় হয়েছে এবং এটি একদম যথার্থ রায়। জনগণের যেসব অংশ পেনশন পাওয়ার অধিকারী নয়, তাদের দিকে ইঙ্গিত করে এই উত্তরই মিলেছিল যে, পেনশনের অধিকার তাদের দিকেও প্রসারিত করতে হবে। প্রকৃতপক্ষে, সকল শ্রেণির মানুষের জন্যই সর্বজনীন পেনশন স্কিম উন্মুক্ত হওয়া উচিত।
পেনশন ব্যবস্থার সূত্র যেহেতু সরকারি কর্মচারীদের থেকে, তাই তার থেকে একটি নিশ্চিত ন্যূনতম পেনশনের ধারণাও গড়ে উঠেছে। পেনশনের দাবির মীমাংসা হয়েছে সর্বশেষ মূল বেতন এবং মহার্ঘ ভাতা বা ডিএ’র ৫০ শতাংশের ভিত্তিতে।
পরিবর্তিত পরিস্থিতি
২০০৪ সালের জানুয়ারিতে ওল্ড পেনশন স্কিমকে (ওপিএস) সরিয়ে জায়গা নেয় নতুন পেনশন স্কিম (এনপিএস)। তখন পেনশনের দুটি স্তম্ভ নড়বড়ে হয়ে যায়: নন-কনট্রিবিউটরি ডিফাইন্ড বেনিফিট স্কিমটি তাতে কনট্রিবিউটরি ডিফাইন্ড বেনিফিট স্কিমে বদলে যায় এবং চুপচাপ খারিজ হয়ে যায় ন্যূনতম পেনশনের ধারণাটি। শুরু হয় প্রতিবাদ। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ি তাতে আমল দেননি। তাঁর উত্তরসূরি ডঃ মনমোহন সিংও দশবছর যাবৎ গুরুত্ব দেননি তাতে। একইভাবে, বিষয়টি গুরুত্ব পায়নি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিরও প্রথম দশবছরের শাসনকালে। কিন্তু ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের রায় মোদির এতদিনের সিদ্ধান্তকে পরিবর্তন করতে বাধ্য করেছে।
২০২২ সালের ৩ আগস্ট প্রকাশিত পিআইবি’র একটি প্রেস বিবৃতি অনুসারে জানানো যায় যে, কেন্দ্রীয় সরকারের মোট পেনশনভোগীর সংখ্যা ছিল ৬৯ লক্ষ ৭৬ হাজার ২৪০ জন। পেনশনের জন্য ২০২৪-২৫ সালে বাজেট ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২ লক্ষ ৪৩ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা। মিডিয়া রিপোর্ট অনুসারে, ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত এনপিএস গ্রাহক সংখ্যা ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের ২৩ লক্ষ ৮০ হাজার এবং রাজ্য সরকারের ক্ষেত্রে ৬০ লক্ষ ৭০ হাজার। সংখ্যা দুটি চলতি বছরে সামান্য কমবেশি হতে পারে, তবে আমরা জানি সংখ্যাটিতে বড় কোনও হেরফের হবে না। এই আলোচনা যেমনই হোক তা ভারতের মোট জনসংখ্যার সামান্য এক ভগ্নাংশ নিয়েই।
একটি তহবিলবিহীন পেনশন স্কিম (ওপিএস এমনটাই ছিল) আর্থিক জাহাজ ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে অর্থনীতিকে। সরকারগুলি বর্তমান রাজস্ব থেকে ‘যতটুকু ভোগ করবে ততটুকুরই দাম মেটাবে (পে অ্যাজ ইউ গো)’ নীতিতে চলতে পারে না। এই প্রকল্প চালিয়ে যেতে কাউকে না কাউকে অর্থের জোগান অব্যাহত রাখতেই হবে। তহবিল ঠিক রাখতে টাকা দিতে হবে—হয় সরকারকে, নয়তো কর্মচারীদের কিংবা উভয় পক্ষকেই। এনপিএস এমন একটি স্কিম ছিল যাতে সরকার (১৪ শতাংশ) এবং কর্মচারী (১০ শতাংশ) উভয়কেই অর্থের সংস্থান করতে হয়েছে। ‘ফান্ডিং’ হল সুষ্ঠু অর্থনীতি।
সরকারের তরফে ঘোষিত ইউনিফাইড পেনশন স্কিমটি (ইউপিএস) সরকার (১৮.৫ শতাংশ) এবং কর্মচারীর (১০ শতাংশ) যৌথ অর্থায়নের একটি প্রকল্প। অবসর পূর্ববর্তী ১২ মাসের মূল বেতনের গড় অঙ্কের ৫০ শতাংশ একজন ন্যূনতম পেনশন হিসেবে পাবেন। ইউপিএস এই নিশ্চয়তাও দিয়েছে। তবে শর্ত হল সেই পেনশন প্রাপককে কমপক্ষে ২৫ বছর চাকরি করতে হবে। মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষাসহ প্রতিমাসে ন্যূনতম ১০ হাজার টাকা পেনশনের নিশ্চয়তাও এখানে দেওয়া হয়েছে। এখন পরীক্ষা প্রার্থনীয়।
এই লেখার সময় পর্যন্ত, বেশিরভাগ রাজ্য সরকার ইউপিএস নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। কংগ্রেসসহ প্রধান রাজনৈতিক দলগুলি ইউপিএস নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছে। তবে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের বেশ কয়েকটি সংগঠন এবং একাধিক কেন্দ্রীয় শ্রমিক ইউনিয়ন পেনশন তহবিলে ‘কর্মচারীদের কনট্রিবিউশন’ করার প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে।
তহবিল জোগান, কে এবং কীভাবে?
একটা ভয়ানক দোলাচলের মধ্যে পড়ে গিয়েছে সরকার, রাজনৈতিক দলগুলি এবং কর্মচারী সংগঠনগুলি। সম্পূর্ণত আর্থিক-সচেতনতার দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায় যে, ইউপিএস’কে চটজলদি প্রত্যাখ্যান করা উচিত নয়। তবে কিছু প্রশ্নও থেকে যায়:
১. কর্মচারী এবং সরকারের কনট্রিবিউশনের মধ্যে ফারাকটা এখন ৮.৫ শতাংশ। এটা কি ভবিষ্যতে বেড়ে যেতে পারে?
২. টি ভি সোমানাথন বলেছেন যে, ‘সরকার
ঘাটতি পূরণ করবে।’ এটা কি ‘যতটুকু ভোগ করবে ততটুকুরই দাম মেটাবে (পে অ্যাজ ইউ গো)’ নীতি থেকে এক ধাপ দূরে নয়?
৩. কনট্রিবিউশনের ১০+১০ শতাংশ অনুমোদিত পেনশন ফান্ড ম্যানেজারদের উপর ন্যস্ত করা
হবে। তার থেকে ৮.৫ শতাংশ কনট্রিবিউশন কি লগ্নি করা হবে? আর সেটা যদি করাই হয়, তা কে এবং কোথায় করবেন?
৪. প্রথম বছরের জন্য ৬,২৫০ কোটি টাকার অতিরিক্ত তহবিলকে ছোট করে দেখানো হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। এটা কি সত্যি?
৫. কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় ইউপিএস অনুমোদিত হওয়ার আগে কি রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে কোনোরকম পরামর্শ করা হয়েছিল? কর্মচারী সংগঠনগুলিও কি বোর্ডে আসবে?
দেখা যাক, সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলি দোলাচল কীভাবে কাটিয়ে ওঠে।