কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতির সূচনা। ব্যবসায়ীদের উন্নতির আশা রয়েছে। বিদ্যার্থীদের সাফল্যযোগ আছে। আত্মীয়দের সঙ্গে মনোমালিন্য দেখা দেবে। ... বিশদ
আসা যাক মহারাষ্ট্রর কথায়। দেবেন্দ্র ফড়নবিশের নিরবিচ্ছিন্নভাবে পাঁচ বছর মহারাষ্ট্র শাসনের মধ্যে দিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে বেশ কিছু কাঠামগত পরিবর্তন সূচিত হয়েছে। যেমন—(ক) মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে বিজেপি ছিল শিবসেনার জুনিয়র পার্টনার। গত পাঁচ বছরে শিবসেনা পরিণত হয়েছে বিজেপির জুনিয়র পার্টনারে। এবারের নির্বাচনে রাজ্যে ২৮৮টি আসনের মধ্যে বিজেপি ১৬২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও, শিবসেনার ভাগ্যে জুটেছে মাত্র ১২৬ আসন। ১০ বছর আগেও সিংহ ভাগ আসনে কিন্তু লড়ত শিবসেনা। (খ) কিছু কাল আগেও বিদর্ভ, মারাঠাওয়ারা অঞলে এনসিপি বা কংগ্রেস ছাড়া বিজেপির তেমন কোনও প্রভাব ছিল না। আখ চাষিদের মধ্যে শারদ পাওয়ারের দলের দশকের পর দশক ধরে প্রভাব ছিল প্রশ্নাতীত। রাজ্যে বিজেপির পাঁচ বছর শাসন করবার পর বিদর্ভ, মারাঠাওয়ারা অঞলে এনসিপি বা কংগ্রেসের শক্তি যেমন একদিকে হ্রাস পেয়েছে, অন্যদিকে ওইসব এলাকাতে বিজেপির প্রভাবও যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদর্ভ, মারাঠাওয়াড়া অঞলে এনসিপি বা কংগ্রেসের একাধিক আঞলিক নেতা দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। (গ) শিবাজিকে সামনে রেখে শিবসেনার জাতীয়তাবাদ এখন বিজেপির ঘরের সম্পদ। মোদি-অমিত শাহ-রা লোকসভা নির্বাচনের মতো এবারের বিধানসভা নির্বাচনেও শিবাজির জাতীয়তাবাদকে সামনে রেখে মারাঠিদের প্রভাবিত করতে চাইছেন।
২০১৪-র বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি এবং শিবসেনা আলাদাভাবে লড়ে বিজেপি ১২২টি আসন এবং শিবসেনা ৬৩টি আসন পায়। সরকার গঠনের সময় শিবসেনা বিজেপির সঙ্গে হাত মেলায়। তবে দেবেন্দ্র ফড়নবিশের সরকারের সঙ্গে থাকলেও শিবসেনাকে বিভিন্ন ইস্যুতে বিজেপির সমালোচনায় সরব হতে দেখা গেছে। এমনকী শিবসেনা নেতাদেরও বারবার নানা ইস্যুতে দিল্লির মোদি সরকারের সমালোচনা করতে দেখা গেছে। লোকসভা নির্বাচনে মোদির বিপুল জয়ের ফলে শিবসেনার পক্ষে বিজেপির সঙ্গে আর দর কষাকষি করবার মতো পরিস্থিতি ছিল না। এবারের নির্বাচনে তাই উদ্ধব ঠাকরেকে বিজেপির শর্তেই আসন সমঝোতায় রাজি হতে হয়েছে।
২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে মহারাষ্ট্রে বিজেপি-শিবসেনা জোট ৪৮টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৫০.৮৮ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে ৪১টি আসন লাভ করেছে। এরমধ্যে বিজেপি পেয়েছিল ২৩টি আসন এবং শিবসেনা ১৮টি আসন। পাঁচ বছর শাসনের পর বিজেপি একদিকে যখন স্বচ্ছ দায়বদ্ধ এবং দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসনের সাফল্যের দাবি করছে তখন অন্যদিকে একাধিক এনসিপি নেতা দুর্নীতির অভিযোগে জেলে বন্দি (যেমন ছগন ভুজবল) অথবা দুর্নীতির প্রশ্নে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। বিগত পাঁচ বছরে মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে আপেক্ষিকভাবে অচেনা দেবেন্দ্র ফড়নবিশ যখন বিজেপি শিবিরে নিজের কতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে রাজ্য রাজনীতিতে প্রধান মুখ হয়ে উঠেছেন তখন কংগ্রেস-এনসিপি শিবির অন্তর্দ্বন্দ্বে বিদীর্ণ। একের পর এক নেতার দলত্যাগের পাশাপাশি এনসিপি শিবিরে অজিত পাওয়ার এবং সুপ্রিয়া সুলের দলের ভেতরেও ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে যেমন বিবাদ রয়েছে তেমন কংগ্রেস শিবিরেও তেমন কোনও বিশ্বাসযোগ্য নেতৃত্ব নেই।
দেবেন্দ্র ফড়নবীশের সরকার একাধিক শহরের মেট্রো প্রকল্পের কাজকে সামনে রেখে উন্নয়নের ধ্বজা প্রচারে ওড়াচ্ছেন। যদিও বিরোধীদের তরফ থেকে সামাজিক নিরাপত্তার অভাব, কৃষকের আত্মহত্যা, বেকারত্বের ইস্যুকে সামনে এনে বিজেপি-শিবসেনার বিরুদ্ধে প্রচার চালান হচ্ছে। ফড়নবিশ বিজেপির মহারাষ্ট্রের মনোহর যোশির পরে দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী যিনি ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ভুক্ত হলেও সমাজের অন্যান্য বর্গ—ওবিসি, তফসিলি জাতি, উপজাতি সকলকে একসূত্রে বাধতে সক্ষম হয়েছেন। এক্ষেত্রে বৃহত্তর হিন্দুত্বের যে ভাবনা মোদি, অমিত শাহরা বিজেপির রাজনীতিতে কার্যকর করেছেন তার ফসল দেবেন্দ্র ফড়নবিশ এবারের মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনের পাবেন বলে সমস্ত প্রাক নির্বাচনী জনমত সমীক্ষায় উঠে এসেছে। লোকসভা নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর দিশাহীন কংগ্রেস–এনসিপি জোটের পক্ষে আদতেও লড়াই দেওয়া সম্ভব কিনা তার জন্য চলতি মাসের ২৪ তারিখ ফলাফলের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে।
এবার চোখ রাখা যাক হরিয়ানার নির্বাচনে। হরিয়ানার রাজনীতিতে তিন দশক ধরে চলে আসা দেবীলালের পরিবারতন্ত্র এবং ভূপেন্দ্র সিং হুড্ডার প্রভাব প্রতিহত করে বিজেপি রাজ্যে প্রথমবার ক্ষমতায় আসে। দেবীলালের পরিবারের প্রভাব হ্রাসের সঙ্গে সঙ্গে হরিয়ানায় দীর্ঘদিন ধরে চলা জাঠদের প্রভাব উপেক্ষা করে বিজেপি নেতৃত্ব মনোহরলাল খাট্টারের মতো জাঠ সম্প্রদায়ের বাইরে কাউকে মুখ্যমন্ত্রী করবার সাহস দেখাতে পেরেছিল। বিজেপির অঙ্ক ছিল সমস্ত ওবিসি ও তফসিলি সম্প্রদায়ের ভোটারদের একত্র করে তিন দশক ধরে চলে আসা হরিয়ানার রাজনীতিতে জাঠদের প্রভাব হ্রাস করার পাশাপাশি আই এন এল ডি’কে কোণঠাসা করে রাজ্য রাজনীতিতে কংগ্রেসের বিকল্প শক্তি হিসেবে উঠে আসা। বলাই বাহুল্য ২০১৪ -র বিধানসভা নির্বাচনে মোদি-অমিত শাহ জুটি লক্ষ্য অর্জনে একশ ভাগ সাফল্য পেয়েছিল। ২০১৪-র নির্বাচনে বিজেপি ৩৩ শতাংশ ভোট এবং ৪৭টি বিধানসভা আসন পেয়ে প্রথমবার ক্ষমতা দখল করে। লোকদল ২৪ শতাংশ ভোট পেয়ে ১৯টি এবং কংগ্রেস মাত্র ২১ শতাংশ ভোট পেয়ে ১৫টি আসন পেয়েছিল।
বিধানসভা নির্বাচনের পর রাজ্য রাজনীতিতে অনেক উত্থান পতন পরিলক্ষিত হয়েছে। দেবীলালের পরিবারের ভাঙন এবং পরিবারের একেক জন সদস্যের একেক দলে যোগদানের ফলে আইএনএলডি দুর্বল হয়েছে। অজয় চৌতালা জননায়ক জনতা পাটি (জেজেপি) গঠন করে নির্বাচনে অবতীর্ণ হয়েছেন। এবারের নির্বাচনে জেজেপি লোকদলের অবশিষ্ট ভোট ব্যাঙ্কে থাবা বসাতে পারে। ভাঙন ধরেছে কংগ্রেস ও ভজনলালের গড়া হরিয়ানা জনহিত কংগ্রেসেও। লোকসভা নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর কংগ্রেস সমেত বিরোধীরা এবারের নির্বাচনে দিশাহীন মনে হচ্ছে। কংগ্রেস শিবির শেষ লগ্নে সভাপতি পদে ভূপিন্দর সিং হুড্ডাকে এনেছে সঙ্কট সামাল দিতে। তবে রাজ্য রাজনীতিতে ভূপিন্দর সিং হুড্ডার সঙ্গে কুমারী শৈলজার দ্বন্দ্ব সুবেদিত। তার প্রভাব ইতিমধ্যে নির্বাচনে পড়তে শুরু করেছে। ২০১৪ বিধানসভা নির্বাচনে বিভিন্ন দল থেকে জেতা অনেক বিধায়ক নিজ নিজ দলত্যাগ করে বিজেপিতে যোগদান করেছেন। কেবলমাত্র আইএনএলডি থেকে ১৬জন বিধায়ক বিজেপিতে যোগদান করেছেন। এতে বর্তমানে শাসক দলের বিধায়ক সংখ্যা ৪৭ থেকে বেড়ে ৬৩টিতে পৌঁছেছে। অর্থাৎ বিধানসভা নির্বাচনের আগে হরিয়ানায় একদিকে যেমন বিরোধীরা ভেঙে চুরমার হয়েছে, অন্যদিকে শাসক দল বিজেপি রাজ্যে প্রভাব ক্রমশ বাড়িয়ে চলেছে।
তবে মনোহরলাল খাট্টারের সরকার বিগত পাঁচ বছর যে বিরাট কোনও সাফল্য পেয়েছে তা বলা যাবে না। বরং জাঠদের সংরক্ষণ আন্দোলনে নাজেহাল মনোহরলাল খাট্টারের অপসারণের ভাবনা দিল্লিতে পর্যন্ত উঠে এসেছিল। রাম-রহিম-বাবাকে কেন্দ্র করে হরিয়ানা উত্তাল হলে যেভাবে মনোহরলাল খাট্টারের সরকার শেষ পর্যন্ত সামাল দিয়েছিল তা বিজেপির অন্দরমহলে প্রশংসা পেয়েছিল। তবে মনোহরলাল খাট্টার সবসময় বিতর্কিত মন্তব্য করে সর্বদাই সংবাদের শিরোনামে থেকেছেন। কর্মসংস্থানের অভাব, জলকষ্ট, কৃষি সমস্যায় সরকার জর্জরিত। কিন্তু একই সঙ্গে প্রশাসন পরিচালনায় স্বচ্ছতা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইকে কেন্দ্র করে মনোহরলাল খাট্টারের সরকারের জনমনে ভালো ভাবমূর্তি রয়েছে। অতীতে ভজনলাল, দেবীলাল, চৌতালা, হুড্ডা সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও মনোহরলাল খাট্টারের সরকারের বিরুদ্ধে কিন্তু পাঁচ বছরে তেমন কোনও বড় দুর্নীতির অভিযোগ নেই। বিজেপি এবারের নির্বাচনে হরিয়ানার রাজনীতিতে চলে আসা পরিবারতন্ত্র এবং ভজনলাল, দেবীলাল, চৌতালা, হুড্ডা সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগগুলো নিয়ে ব্যাপক প্রচারের পাশাপাশি মনোহরলাল খাট্টারের সরকারের স্বচ্ছ ভাবমূর্তিকেও ভোটারদের সামনে তুলে ধরছে।
লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে রাজ্যে ৯০টি বিধানসভার আসনের মধ্যে ৭৯টি আসনে বিজেপি এগিয়ে রয়েছে। বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ছিল ৫৮ শতাংশ। অন্যদিকে কংগ্রেস ২৮ শতাংশ ভোট পেয়েছিল ও মাত্র ১০ টি বিধানসভা কেন্দ্রে এগিয়ে ছিল। লোকসভা নির্বাচনের পর কাশ্মীরের ৩৭০ ধারার বিলোপ, তিন তালাক বাতিল বিল সংসদে পাশ করানো, মোদির আমেরিকা সফরের পর হরিয়ানার মানুষ এখনই সরকারের বিরুদ্ধে ভোট দেবেন বলে মনে হয় না। ২১ অক্টোবর হরিয়ানার ১ কোটি ৮৪ লক্ষ ভোটারের অনেকেই রাজ্যে দ্বিতীয়বারের জন্য বিজেপির পক্ষে রায় দিতে পারে বলে সমস্ত জনমত সমীক্ষায় উঠে এসেছে। বিজেপির প্রার্থী তালিকাতেও রয়েছে চমক। দুইজন কুস্তিগির—ববিতা ও যগেশ্বর যেমন রয়েছেন, তেমনি রয়েছেন প্রাক্তন ভারতীয় হকি টিমের ক্যাপ্টেন সন্দীপ সিং। বহুমুখী লড়াইয়ে বিরোধী ভোটের বিভাজনের সুবিধে বিজেপিকে অতিরিক্ত সুবিধা দিতে পারে। ৯০ আসনের বিধানসভায় সর্বমোট ১১৬৮ জন প্রার্থী নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয়েছেন। ফল ২৪ অক্টোবর।