পারিবারিক সম্পত্তি ভাগাভাগিতে লাভবান হবেন । ব্যবসায়িক ক্ষেত্রটি কম বেশি চলবে। শিক্ষার্থীদের পক্ষে দিনটি শুভ। ... বিশদ
তিনি অহঙ্কারবিহীন হ’য়ে গুরু অগ্নি অতিথি ও বৃদ্ধ প্রভৃতির সেবানিরত ও প্রাণীমাত্রেরই সুহৃদ, সাধু ও মিতবাক্ ছিলেন। একদিন পিতার আজ্ঞায় বনে গিয়ে পুষ্প সমিধ্ কুশ নিয়ে ফির্ছেন এমন সময় পথে মদ্যপানে মত্ত এক শূদ্র ও শূদ্রাণীকে ক্রীড়াসক্ত দেখ্লেন। তাদের বস্ত্রাদি যথাস্থানে ছিল না। সেই মাতাল শূদ্র ব্রাহ্মণের সুমুখেই শূদ্রাণীকে আলিঙ্গন ক’রে হাস্য পরিহাস ক্রীড়া কৌতুক কর্তে লাগলো। তাদের এ অবস্থা দেখে ব্রাহ্মণ যুবকের মন চঞ্চল হ’য়ে উঠ্লো। তিনি জ্ঞান ও ধৈর্য্যের দ্বারা চঞ্চল চিত্তকে শান্ত কর্বার যথেষ্ট চেষ্টা কর্লেন, কিন্তু কিছুতেই মনকে সেই শূদ্রাণীর চিন্তা হ’তে প্রতিনিবৃত্ত করতে পার্লেন না। তখন সৎকুলসম্পন্না যুবতী ভার্য্যা, পিতা মাতা, আপনার তপস্যা, সংযম, জ্ঞান সব বিসর্জ্জন করত সেই শূদ্রাণীর পাদমূলে আশ্রয় নিলেন। তার সন্তোষের জন্য পৈতৃক অর্থাদির দ্বারা যত্ন কর্তে লাগলেন।
এমনও হয়?
হয় বৈকি। মানুষের কখন কি অবস্থা এসে উপস্থিত হবে কে তা বল্তে পারে। তারপর সেই দুশ্চরিত্রা শূদ্রাণীর সংসর্গে তাঁর সমস্ত সদ্গুণ নষ্ট হ’য়ে গেল। তিনি যে ব্রাহ্মণ এ স্মৃতি পর্য্যন্ত থাক্লো না। একে একে শূদ্রাণীর গর্ভে তাঁর দশটি পুত্র জন্মগ্রহণ কর্লো। সংসার প্রতিপালনের জন্য জুয়াখেলা, চুরি, লোককে বঞ্চনা ইত্যাদি অসদ্ উপায় অবলম্বন কর্লেন। কোনদিন বৃদ্ধ পিতামাতা, যুবতী পত্নীর কথা মনে হতো না। মদ্যপান, চুরি, শূদ্রাণীর সংসর্গ—এ ভিন্ন অন্য কোন কাজ ছিল না।
তাঁর ছোট ছেলেটির নাম নারায়ণ রেখেছিলেন। সেইটিকে অত্যন্ত ভালবাস্তেন। পান, ভোজন ও শয়নের সময় সেইটিই কাছে থাক্তো। সে যখন খেলা কর্তো ব্রাহ্মণ আনন্দিত মনে তাঁর খেলা দেখ্তেন। ব্রাহ্মণের সবটুকু হৃদয়ই কনিষ্ঠপুত্র “নারায়ণ” অধিকার করেছিল। এরূপভাবে ৮৮ বৎসর কেটে গেল। এই সময় তাঁর মৃত্যুকাল উপস্থিত হল। তিনজন বিকটকার যমদূত বন্ধন কর্বার রজ্জু সহ তাঁর নিকট এলো। তাদের ভীষণ আকৃতি দেখে ব্রাহ্মণের বুক্টা কেঁপে উঠলো। কি কর্বেন কিছুই স্থির কর্তে পার্লেন না। দূরে নারায়ণ আপন মনে খেলা কর্ছিল। তখন তিনি প্রাণভেদী উচ্চৈঃস্বরে “নারায়ণ” ব’লে ডাক্লেন। যেমন মৃত্যুকালে “নারায়ণ” নাম উচ্চারণ করেছেন, তৎক্ষণাৎ রূপের প্রভায় চতুর্দ্দিক আলোকিত ক’রে কয়েকজন শ্রীভগবানের পার্ষদ সেখানে এসে উপস্থিত হলেন। তাঁদের সকলের পীত কৌশেয় বসন, মাথায় মুকুট ও কর্ণে কুণ্ডল, গলায় পদ্মমালা শোভা পাচ্ছে সকলের চতুর্ভুজ হাতে ধনু, পৃষ্ঠে তৃণ, গদা, চক্র ও পদ্ম। তাঁরা বল্লেন—“তোমরা এঁকে স্পর্শ ক’রো না।”
যমদূতগণ বল্লে, “তোমরা কে? তোমাদের দেহের জ্যোতিতে চারদিক আলো হ’য়ে গেছে। সূর্য্যের জ্যোতিও তোমাদের দেহ জ্যোতিতে ম্লান দেখাচ্ছে। তোমরা কার লোক আর কি জন্য এই মহাপাপীকে নিয়ে যেতে বারণ কর্ছো? তোমরা দেবতা না উপদেবতা অথবা সিদ্ধশ্রেষ্ঠ? আমরা ধর্ম্মরাজের দূত। তোমরা তাঁর আজ্ঞা পালন কর্তে কেন নিষেধ কর্ছো?”
বিষ্ণুদূতগণ তাদের কথা শুনে হাস্য করত মেঘগম্ভীর স্বরে বল্লেন—“তোমরা যদি ধর্ম্মরাজের দূত তা হ’লে বল দেখি—ধর্ম্মের স্বরূপ লক্ষণ কি? কি প্রকারে দণ্ড দিতে হয়? দণ্ডের যথার্থ পাত্র কে এবং কি জন্য দণ্ডনীয় হয়?”