মেষ: পঠন-পাঠনে আগ্রহ বাড়লেও মন চঞ্চল থাকবে। কোনও হিতৈষী দ্বারা উপকৃত হবার সম্ভাবনা। ব্যবসায় যুক্ত ... বিশদ
সৎকে সকলেই গ্রহণ করতে পারে, অসৎকে যে গ্রহণ করে তারেই বলিহারি যাই। বিদ্যাসাগর মহাশয়, কেশব সেন, বিজয় গোস্বামী, ডাক্তার মহেন্দ্র সরকার—এঁরা সব পরমহংসদেবকে খুব শ্রদ্ধা-ভক্তি করতেন। এরা কেউ মূর্খ নন, সকলেই পণ্ডিত। কিছু-না-কিছু একটা বুঝেছেন, তবে তো মানেন। গুণ না থাকলে মানবে কেন? একদিন না হয় দু’দিন জোর মানবে, কিন্তু তারপর ভক্তি-বিশ্বাস সব পালিয়ে যাবে।
হয় খুব মূর্খ, নয় খুব পণ্ডিত হওয়া ভাল। মাঝামাঝি হলেই যত গোল বাধে। স্বামীজী বলতো—যা পড়েছি, তা ভুলে গেলেই ভাল হয়। ঠাকুরের সঙ্গে অনেক কথা নিয়ে খুব তর্ক করতো। আগে বুঝতে পারিনি। শেষে বলেছিল—উনি যা বলতেন, সবই ঠিক। স্বামীজী সংশয় তুলে তর্ক করলে ঠাকুর কিন্তু খুব খুশী হতেন। তিনি বারবার বুঝিয়ে দিতেন— কখনও বিরক্ত হতেন না। ঠিক ঠিক গুরু এমনি হয়।
ঠিক ঠিক মাস্টার (শিক্ষক) ভেতরে ভালবাসবে, বাইরে একটু কড়া হবে।
কায়মনোবাক্য গুরুর আদেশ পালন ও ভিক্ষা করে গুরুর সেবা করবে। তিনি সন্তুষ্ট হলে তাঁর কৃপাতে অচিরে শান্তি পাওয়া যায়, সকল সন্দেহ দূর হয়ে যায়। সেবা করা কি কম কথা রে? সেবাতে ভগবান পর্যন্ত সন্তুষ্ট হন—আর মানুষ তো হবেই।
আমি কি তোদের হাতে খেলনার পুতুলের মত থাকবো, তোরা যেমন নাচাবি, তেমন নাচবো? তা আমার দ্বারা হবে না। আহা! কত লোক ভগবদ্বিষয়ে আলোচনা করতে আসে, ঠাকুরের কথা শুনতে আসে! তাদের আসতে বারণ করবো? তাদের এই শুভ ইচ্ছায় আমি বাধা দিতে পারবো না। দেহ তো আজ না হয় দুদিন পরে যাবেই, তার জন্য ঈশ্বরীয় কথা ছেড়ে শরীরের যত্ন করবো? দুঃখ করিসনি, তা আমি পারবো না।
চৈতন্যদেব অত বড় ত্যাগী-ভগবান। লোকে অবতার বলে তাঁকে পুজো করে। তিনি কেশব ভারতীর কাছে সন্ন্যাস নিলেন। পরমহংসদেব তোতাপুরীর কাছে সন্ন্যাস নিলেন। দেখ অবতার-পুরুষরাও গুরুকরণ করেছেন। গুরুকরণ শাস্ত্রের বিধান। সকলের গুরু করা উচিত। আবার দেখ, ঠাকুরের কি গুরুনিষ্ঠা, কি গুরুভক্তি! গুরুকে কত সম্মান করতেন—কখন ভুলেও তোতাপুরীর নাম মুখে উচ্চারণ করতেন না, ন্যাংটা বলতেন!
দুই-তিন জন্ম রাজত্বের পর ঠিক ঠিক বৈরাগ্য হয়। অনেক সাধুকে দেখা যায়—বেশ ভজন করছে, কিন্তু দিন কতক পরে সে মঠ-ফঠ করে একজন হয়ে পড়েছে। আবার গুরুর কৃপা হলে সহজও বটে।
সাধুর শিষ্য হওয়া ভাগ্য বইকি। সে তাঁর (গুরুর) কিছু কিছু গুণ অর্থাৎ দয়া-ধর্ম পাবেই। সাধুকে ভালবাসলে কি হয় জানিস?— সাধুই হয়।
এ জগতে গুরু হওয়া বড়ই কঠিন। গুরু মন্ত্র দিলে শিষ্য গুরুকে শ্রদ্ধা-ভক্তি ক’রল; কিন্তু গুরু যদি সেরূপ উপযুক্ত না হয়, তা হলে তাঁর উপরওয়ালা একজন আছেন, তিনি সব জানেন। তাঁর অগোচর কিছুই নেই। তিনি গুরুরূপে অন্তরে উদিত হয়ে পথ দেখিয়ে নিয়ে যান।
সাধু ও গুরুর নিন্দা করলে অকল্যাণ হবেই। গুরু সকলেরই সমান— রাজারও যেমন, ফকিরেরও তেমন। যার যে গুরু, তার কাছে সে প্রধান। তাঁকে ভক্তি-শ্রদ্ধা কর—তাঁর উপর সংশয় করা উচিত নয়। হে জীব, আপন গুরুকে মান। গুরুর নিন্দা করো না।
স্বামী অদ্ভুতানন্দের বাণী ‘সৎকথা’ (স্বামী সিদ্ধানন্দ সংগৃহীত) থেকে