মেষ: পঠন-পাঠনে আগ্রহ বাড়লেও মন চঞ্চল থাকবে। কোনও হিতৈষী দ্বারা উপকৃত হবার সম্ভাবনা। ব্যবসায় যুক্ত ... বিশদ
ধ্যান প্রাথমিকভাবে দুই ধরনের — প্রতীকের ধ্যান (objective) এবং অহং-এর ধ্যান (subjective)। নাম বা রূপ অথবা দুইকে নিয়েই সাধক যখন ধ্যান করেন তখন তা প্রতীক-ধ্যান। নাম হল ইষ্টমন্ত্র এবং রূপ হল ইষ্টমূর্তি। অবশ্য ‘রূপ’ অন্যরকমও হতে পারে, যেমন যোগীদের চক্র, খ্রীষ্টাণদের ক্রুশ ইত্যাদি। আর ‘নাম’ ইষ্টমন্ত্র না হয়ে শুধু বীজমন্ত্রও হতে পারে। রূপ ও নাম আলাদাভাবে বা একসঙ্গে সাধকের মনে একটি ভাব জাগিয়ে তোলে। এই ভাবটিই হল আসল। কোনো-কোনো সাধক নাম বা রূপে সাহায্য না নিয়ে ভাবের ধ্যানও করেন, যেমন বৌদ্ধ সাধন-প্রণালীতে করুণা, মৈত্রী ইত্যাদি ভাবের ওপর ধ্যান করা হয়। বৈষ্ণবদের মধ্যেও এই ভাব-সাধনা সুপ্রচলিত। শান্ত, দাস, বন্ধু, বাৎসল্য ও প্রেমিক — ঈশ্বরের প্রতি এর কোনও একটি ভাব আরোপ করে এই সাধনা তারা করেন।
অহং-এর ধ্যানে(subjective meditation)নাম-রূপ-ভাবের প্রতি ততটা গুরুত্ব না দিয়ে সাধক দেখতে চান কোথা থেকে এগুলি উঠছে। যেহেতু আমি-বোধই (I-awareness) তারসমস্ত চিন্তা ও কাজের উৎসে রয়েছে, সাধক সেজন্যে এটির ওপর ধ্যান করেন। Objective ধ্যানে সাধক বাইরের কোনো কিছুর (নাম বা রূপ বা দুই-ই) সাহায্য নেন কিংবা বাইরের কিছুর প্রভাবে যে ভাব উৎপন্ন হয় সেটির সাহায্য নেন, কিন্তু subjectiveধ্যানে বাইরের কোনো কিছুর বা তার প্রভাবিত কোনো মানসিক বৃত্তির সাহায্য নেন না, তিনি অন্তরের মূল অনুভূতিকে ধ্যান করেন। আমাদের মনে সব সময়ই বিভিন্ন চিন্তা-কামনা-ভাব ইত্যাদি উঠছে বলে মনের গভীরে কী আছে তা জানতে পারি না। একটি পুকুরের জলে যদি সব সময়ই ঢেউ ওঠে বা জল ঘোলা থাকে, তবে পুকুরের নীচে যে মাটি আছে তা দেখা যায় না। পুকুরের জলের সঙ্গে যদি মনের তুলনা করি তবে বলা যায় ঢেউ হল কামনা বা চিন্তা মাছগুলি বিভিন্ন সংস্কার যারা ঢেউ তোলে, আর জলের মধ্যে ডুব দিলে আলোর তারতম্যের জন্যে যেমন জলের বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন রং দেখা যায় সেগুলি হলো মনের গভীরে নানান অবস্থা। আমরা আমাদের চেতনাকে (awareness, consciousness) বিভিন্ন মানসিক বৃত্তির সঙ্গে মিশিয়ে দিই বলে এই চেতনাকে বৃত্তিহীন অবস্থায় সাধারণত ধরতে পারি না।
স্বামী সৌমেশ্বরানন্দের ‘দৈনন্দিন জীবনে ধ্যান ও শান্তি’ থেকে