বিশেষ কোনও কর্মের আর্থিক সংস্থান নিয়ে মানসিক চিন্তা বৃদ্ধি পাবে। আর্থিক ঝুঁকি নেবার আগে দুবার ... বিশদ
ঘটনা হল, দ্বিতীয় ধাপে নতুন ৭৫ লক্ষ গ্যাস সংযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিটি জেলায় একটি করে কমিটি (উজ্জ্বলা কমিটি) গঠনের শর্ত চাপায় কেন্দ্র। পছন্দের লোকেদের নিয়ে তৈরি সেই কমিটিতে রাজ্য সরকারের একজন মাত্র আধিকারিককে রাখার কথা বলা হয়। শুধু সই করার জন্য। এতেই সেই কমিটিতে যোগ দিতে অস্বীকার করে রাজ্য। এরপর কেন্দ্র ঠিক করে, রাজ্যের প্রতিনিধি ছাড়াই কমিটি তৈরি হবে। কিন্তু অবাক করা বিষয় হল, নিজেদের দেওয়া সেই নির্দেশ নিজেরাই কার্যকর করেনি। ফলে এমন কোনও কমিটিও বাংলায় দিনের আলো দেখেনি। এই কারণে ১৪ লক্ষ আবেদনকারী গ্যাসের সংযোগ পাননি। এটা অবশ্য ‘সরকারি’ কারণ। আসল কারণ হল, মমতা সরকারের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর ওই অভিযোগের ইঙ্গিত বুঝে এ রাজ্যে প্রকল্পটি নিয়ে এগনোর সাহসই দেখাননি কেন্দ্রের আমলারা। তাঁরা বুঝে যান, ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে প্রকল্পটি নিয়ে না এগনোর কৌশলী বার্তা হয়তো দিয়েছেন মোদি। এতে অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্যপূরণের অসুবিধা হয়নি। কারণ, পরবর্তীকালে কেন্দ্র দাবি করেছে, ২০২৪-এর জুলাই মাসের মধ্যে ৭৫ লক্ষ গ্যাস সংযোগ পেয়ে গিয়েছেন নতুন গ্রাহকরা। মোদির চোখে, প্রকল্পের লক্ষ্যপূরণ করে সাপও মারা গেল, আবার কেন্দ্রীয় প্রকল্প রূপায়ণে রাজ্যের বাধার কথা জানিয়ে লাঠিও অক্ষত রাখা হল। কিন্তু এমন ছলচাতুরি করেও অবশ্য বিগত লোকসভা ভোটে বাংলায় বিজেপির আসন কমেছে। ১৮-র জায়গায় ১২তে থামতে হয়েছে গেরুয়া শিবিরকে।
আসলে প্রথম থেকেই এই প্রকল্পটি নিয়ে লেজেগোবরে অবস্থা কেন্দ্রীয় সরকারের। প্রথমে প্রচার হয়েছিল গরিব মানুষকে বিনা পয়সায় গ্যাস দেওয়া হবে। অথচ দেওয়া হল বিনা পয়সায় গ্যাসের সংযোগ। সেইসঙ্গে কিস্তিতে ওভেন বা চুল্লি কেনার সুযোগ। সরকারি হিসেবে, দেশে ১০ কোটি ৩৩ লক্ষ পরিবার প্রবল উৎসাহে গ্যাসের সংযোগ নিয়েছে। কিন্তু দিল্লির রিপোর্টই বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ১ কোটি ৪০ লক্ষ ৪৮ হাজার পরিবার একটিও সিলিন্ডার কেনেনি। ওই সময়ে বছরে একটি মাত্র সিলিন্ডার কিনেছে এমন পরিবারের সংখ্যা ১ কোটি ৬৬ লক্ষ ৫২ হাজার। তার মানে, ৩০ শতাংশের বেশি পরিবারই উজ্জ্বলা প্রকল্পের সুবিধা নিতেই পারেনি। এই অবস্থায় ২০২৪-এর অক্টোবরে সিলিন্ডার পিছু ৩০০ টাকা ভর্তুকি দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়। কিন্তু তাতে একটি সিলিন্ডার কিনতে ৫০০ টাকা খরচ করতে হয়। গরিব বহু পরিবারের এই টাকা খরচের সামর্থ্য না থাকায় প্রধানমন্ত্রীর সাধের উজ্জ্বলা প্রকল্প অনুজ্জ্বলই রয়ে গিয়েছে। গরিব পরিবারের মহিলাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রশ্নে যে প্রকল্পটির যাত্রা শুরু হয়েছিল তার সম্পূর্ণ সুফল যে মিলছে না তা জলের মতো পরিষ্কার। ভাবা হয়েছিল, উজ্জ্বলার সুবাদে কাঠ-পাতার জ্বালানির ক্ষতিকর ধোঁয়া-কালি থেকে রক্ষা পাবেন গ্রামীণ গরিব পরিবারের মহিলারা। কিন্তু মোদি জমানায় গ্যাসের দাম যে হারে বেড়েছে তাতে ভর্তুকি দেওয়া গ্যাস কেনারও সামর্থ্য নেই বহু পরিবারের। এর পরিণতিতে গ্যাসের সংযোগ থাকলেও অর্থাভাবে দিন কাটানো বহু পরিবারই ন্যূনতম একটি গ্যাসও কিনতে পারছে না। সরকারি রিপোর্টেই যা স্পষ্ট। ফলে উজ্জ্বলা নিয়ে যতই ঢাক পেটানো রাজনীতি চলুক, প্রকল্পের ঔজ্জ্বল্য কিন্তু ক্রমশই কমছে।