বিশেষ কোনও কর্মের আর্থিক সংস্থান নিয়ে মানসিক চিন্তা বৃদ্ধি পাবে। আর্থিক ঝুঁকি নেবার আগে দুবার ... বিশদ
প্রয়াগ কুম্ভমেলা ২০২৫ শুরুর আগে থেকেই আরম্ভ হয়ে গিয়েছিল হাজারো গাওনা বাজনা। তার মধ্যে প্রথম হচ্ছে নামকরণ। লোকে যেটাকে ‘পূর্ণকুম্ভ’ বলে জানে, তার নাম দেওয়া হল ‘মহাকুম্ভ’। অন্যবার যে বিশেষ স্নানকে ‘শাহিস্নান’ বলা হয়েছে, তা এবার নাম নিয়েছিল ‘অমৃতস্নান’। বিভিন্ন মহল থেকে দাবি করা হল, পুণ্যার্থীর সমাগমে সর্বকালীন রেকর্ড গড়বে ‘মহাকুম্ভ’—৪০ কোটি ছাড়াবে! এমনকী, লক্ষ্মীলাভেও নজির স্থাপনের লক্ষ্যস্থির হল। বণিক মহলের আশা, এবার পূর্ণকুম্ভকে কেন্দ্র করে সর্বমোট ২ লক্ষ কোটি টাকার বাণিজ্য পাবে দেশ। মেলার শুরু ১৩ জানুয়ারি, চলবে টানা ৪৫ দিন, শিবরাত্রি অর্থাৎ ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। কুম্ভকে ঘিরে মোট কত টাকার বাণিজ্য হয়েছে এবং হবে, সেই হিসেব পরে নিশ্চয় মিলবে। কিন্তু শোনা যাচ্ছে, তার আগেই নাকি ৫০ কোটি মানুষ প্রয়াগের ত্রিবেণীসঙ্গমে পুণ্যস্নান সেরে ফেলেছেন। শুধুমাত্র মৌনী অমাবস্যারই পুণ্যস্নানে ১০ কোটি তীর্থযাত্রীর সমাগম হয় বলে প্রশাসনের দাবি ছিল। কিন্তু এই যে অভূতপূর্ব ‘আমন্ত্রণ’ তার জন্য যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণও তো জরুরি ছিল। তা কোথায় পাওয়া গেল! প্রস্তুতিতে যে ভয়াবহ গলদ ছিল তার প্রমাণ দিয়েছে মৌনী অমাবস্যা। ভাবা গিয়েছিল, ওই ঘটনা থেকে মোদি এবং যোগীর ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকার শিক্ষা নেবে। কিন্তু সেই বিলম্বিত শিক্ষাও যে তারা নেয়নি, তার প্রমাণ মিলেছে মেলাপ্রাঙ্গণে একাধিক অগ্নিকাণ্ডে।
ডাবল ইঞ্জিন প্রশাসনের চূড়ান্ত অপদার্থতার মূল্য দিল মহাকুম্ভ থেকে বহুদূরে নয়াদিল্লিও। শনিবার রাত ১০টা। স্টেশন চত্বর ভিড়ে ভিড়াক্কার। অবস্থা এমনই যে দেড় হাজার জেনারেল টিকিট ইস্যু করা হচ্ছিল প্রতি ঘণ্টায়! প্ল্যাটফর্মে পৌঁছে যাত্রীরা জানতে পারলেন, স্বতন্ত্র সেনানী এক্সপ্রেস ও ভুবনেশ্বর রাজধানী এক্সপ্রেস দেরিতে চলছে। অন্যদিকে, পূর্ণকুম্ভে স্নানযাত্রার জন্য প্রয়াগরাজ এক্সপ্রেস ধরতে হাজির ছিলেন বহু পুণ্যার্থী। ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়েছিল ট্রেনটি। অভিযোগ, এমন ভয়ঙ্কর বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে এসকালেটর এবং লিফট বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে ভিড় উপচে পড়ে ওভারব্রিজে। লাইন টপকেও অন্য প্ল্যাটফর্মে যাওয়ার তাড়া ছিল যাত্রীদের। সে এক তীব্র হুড়োহুড়ির পরিস্থিতি। সব মিলিয়ে শনিবার রাতে নয়াদিল্লি স্টেশনে ফিরল মৌনী অমাবস্যায় কুম্ভমেলায় পদপিষ্ট হওয়ার সেই ভয়ঙ্কর স্মৃতি। হুড়োহুড়ির মধ্যে পায়ের চাপেই মারা গিয়েছেন অন্তত ১৮ জন। তাঁদের মধ্যে ১০ মহিলা এবং তিনটি শিশুও রয়েছে। ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী নীতিন গাদকারি গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশও দিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। রেল মন্ত্রকের ঘোষণা, মৃতদের পরিবার পিছু দেওয়া হবে ১০ লক্ষ টাকা। আর গুরুতর আহতদের দেওয়া হবে আড়াই লক্ষ টাকা। অল্প আহতরা পাবেন মাথাপিছু ১ লক্ষ টাকা করে সরকারি সাহায্য। সবটাই ব্যর্থতা ঢাকার চেনা কৌশল—জনগণের করের টাকায় নেতাদের পিঠ বাঁচানো ছাড়া কিছুই নয়। বস্তুত, এটাই মহাকুম্ভের ‘সাফল্য’, যা ঢক্কানিনাদসহকারে জগৎসভায় তুলে ধরার জন্য কোটি কোটি টাকার আদ্যশ্রাদ্ধ করেছেন মোদি-যোগীরা। ভারত রাষ্ট্রে সরকারি প্রশাসনের অদূরদর্শিতা, ব্যর্থতা কত বড় হতে পারে, সেটাই দেখল বিশ্ববাসী। ‘মহাবিপর্যয়’ এবং তার দ্রুত পুনরাবৃত্তি যাঁদের জন্য দেশ তাঁদের বিচারের কাঠগড়ায় দেখতে চায় এখনই।