কর্মের প্রসার ও উন্নতি হবে। ব্যবসায়ীদের দিনটি অনুকূল। অর্থকড়ি প্রাপ্তি যোগ শুভ। অর্থ সঞ্চয় বাড়বে ... বিশদ
এই বক্তব্যকে সামনে রেখে বেঁকেই বসেছিল রেশন ডিলারদের জয়েন্ট ফোরাম। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অক্টোবর মাসে দুয়ারে রেশনের পাইলট প্রকল্পে তারা অংশ নেবে না। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, জয়েন্ট ফোরামের কথা সব ডিলার শোনেননি। বিভিন্ন জেলার সংশোধিত রেশন (এমআর) এলাকায় অধিকাংশ রেশন দোকানে এই কর্মসূচি চলছে। তবে সংগঠনের নেতিবাচক মনোভাবের প্রভাব অনেকটাই পড়েছে বিধিবদ্ধ রেশন (এসআর) এলাকায়। আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল ছাড়া এসআর এলাকায় খুব কম সংখ্যক ডিলার দুয়ারে রেশনে অংশ নিয়েছেন। এই প্রকল্পে গ্রাহকদের বাড়িতে খাদ্যশস্য পৌঁছে দেওয়ার পাইলট প্রকল্পটি সেপ্টেম্বরে চালু হয়েছে। পুজোর ছুটি থাকার কারণে এমাসের প্রথম দিকে গতি কিছুটা শ্লথ হয়েছে। ১৭ অক্টোবর থেকে আটটি নির্দিষ্ট দিনে দুয়ারে রেশন প্রকল্পটি চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে তিনটি দিন পেরিয়ে গিয়েছে। সংশোধিত ও বিধিবদ্ধ এলাকা মিলিয়ে রাজ্যে মোট রেশন ডিলার ২১ হাজারের মতো। অক্টোবরে গ্রামীণ এলাকা ও জেলা শহরগুলি মিলিয়ে সংশোধিত রেশন এলাকার হাজার দশেক ডিলারকে দুয়ারে রেশনের আওতায় এনেছে খাদ্যদপ্তর। অন্যদিকে, বড় শহরের বিধিবদ্ধ রেশন এলাকায় আনা হয়েছে ১০৮৭ জন ডিলারকে। এখনও পর্যন্ত এমআর এলাকায় ৮৩০৮ জন ডিলার এবং এসআর এলাকায় ২০৮ জন ডিলার এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। এসআর এলাকার মধ্যে আসানসোল-দুর্গাপুর, পুরনো বারাকপুর মহকুমা, হুগলি-হাওড়া জেলার শহরাঞ্চল এবং উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতা রয়েছে। আসানসোল-দুর্গাপুরের ৬৪ জন ডিলারই এতে অংশ নিয়েছেন। বারাকপুরে ৩১৫ জনের মধ্যে ১৩ জন, হুগলিতে ১৩২ জনের মধ্যে ৭ জন, হাওড়ায় ১১৬ জনের মধ্যে ১১ জন, উত্তর কলকাতায় ২২৬ জনের মধ্যে ৬৪ জন এবং দক্ষিণ কলকাতায় ২৩৪ জনের মধ্যে ৪৯ জন অংশ নিয়েছেন। তবে সব ডিলারই অংশ নিয়েছেন ঝাড়গ্রাম এবং উত্তর দিনাজপুরে। হাওড়ার সংশোধিত রেশন এলাকায় অংশ নিয়েছেন প্রায় সবাই। আরও কয়েকটি জেলায় ডিলারদের অংশগ্রহণের হার ৯০ শতাংশের বেশি।
জয়েন্ট ফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু স্বীকার করেছেন, জেলাগুলিতে এমআর এলাকায় সাংগঠনিক দুর্বলতার জন্য ডিলারদের বড় অংশকে বিরত রাখা সম্ভব হয়নি। তাঁর অভিযোগ, প্রকল্পটি চালিয়ে যাওয়ার জন্য অফিসাররা নানাভাবে চাপ দিচ্ছেন। সংগঠনের দুই আহ্বায়ক বিশ্বম্ভর বসু ও নিখিলেশ ঘোষের পক্ষ থেকে খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষকে ফের চিঠি পাঠিয়ে কয়েকটি দাবি জানানো হয়েছে। উৎসবের মরশুম শেষ হলেই সব ডিলারকে দুয়ারে রেশনের আওতায় আনার পরিকল্পনা আছে সরকারের। ডিলার সংগঠনের বিরোধিতা সত্ত্বেও পাইলট প্রকল্পে যে সাড়া মিলছে, তাতে খুশি খাদ্যদপ্তর। ইচ্ছুক ডিলারদের সংখ্যা আরও বাড়বে বলেও তারা আশা করছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার এবং খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের এই দৃঢ় ভূমিকা প্রশংসনীয়। বস্তুত বাংলার গণবণ্টন ব্যবস্থার কদর্য চেহারা পাল্টে ফেলার জন্য রীতিমতো লড়াই করে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বাম জমানায় গ্রাহকদের মনে এই ধারণাই বদ্ধমূল হয়েছিল যে, রেশন একটা ফালতু ব্যবস্থা। প্রত্যেক সপ্তাহে/মাসে খাদ্য, কেরোসিন ইত্যাদি মেলে না। কালেভদ্রে পাওয়া গেলেও অতি নিম্নমানের এবং ওজনে কম দেওয়া হয়। তাই মুখ্যমন্ত্রীর লড়াইটা একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের জনবিরোধী নীতি এবং রেশন ব্যর্থতার গভীরে প্রোথিত অস্বচ্ছতার বিরুদ্ধে। ডিলার সংগঠনগুলির উচিত, সরকারের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করা। এটা তাঁদের মানবিক মুখ দেখাবার এবং ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করারও সুযোগ বটে। সরকারের সঙ্গে অসহযোগিতার নীতি
নিলে গরিব মানুষের কষ্ট বাড়বে এবং সামাজিকভাবে ডিলাররা সেই তিমিরেই ফিরে যাবেন।