বিদ্যার্থীদের পঠনপাঠনে আগ্রহ বাড়বে। কর্মপ্রার্থীদের কর্মপ্রাপ্তির যোগ। বিশেষত সরকারি বা আধা সরকারি ক্ষেত্রে যোগ প্রবল। ... বিশদ
‘পরাক্রম দিবসের’ ঘোষণা করেই দায় সারল মোদি সরকার। সেই সঙ্গে নেতাজির জন্মদিনটিকে ‘দেশপ্রেম দিবস’ অথবা ‘দেশনায়ক দিবসের’ দাবিকে উপেক্ষা করে কার্যত অসংখ্য মানুষের ভাবাবেগেই আঘাত করল। কেউ বলছেন, আচমকা কেন্দ্র এই ঘোষণা করে নেতাজির প্রতি অবমাননাই করল। পরাক্রম মানে বিক্রম, বীরত্ব, দাপট। কখনওবা এই শব্দটার মধ্যে মনে হয় একটা দেখনদারির মনোভাব কাজ করে। কিন্তু নেতাজি তো ভারত দখল করতে চাননি বা দেখাতে চাননি তাঁর দাপট। তিনি তো ভারতকে ব্রিটিশের হাত থেকে দখলমুক্ত করতে চেয়েছিলেন। তাই সঙ্গত কারণেই অনেকে দেশপ্রেম দিবস বা দেশনায়ক দিবসের পরিবর্তে ‘পরাক্রম দিবস’ শব্দটাতে আপত্তি তুলছেন। পাশাপাশি জাতীয় ছুটি ঘোষণার ব্যাপারেও এখনও কেন্দ্র নীরব। তাই প্রশ্ন উঠছে, সত্যিই কি এই মহান দেশনায়ককে মোদি সরকার তাঁর প্রাপ্য সম্মান জানাতে আগ্রহী? আসলে আমজনতার দাবিকে কখনওই এই সরকার গ্রাহ্যের মধ্যে আনে না। যাবতীয় সিদ্ধান্তও নেয় একতরফা। বিরোধী মতকে অগ্রাহ্য করে স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবের নজির রেখেছে বারবার। তা কৃষি আইন তৈরির ক্ষেত্রেই হোক অথবা নেতাজি জন্মজয়ন্তী পালনে। যেমন কেন্দ্রই নেতাজি জন্মজয়ন্তী পালনের জন্য কমিটি করেছে। সেই কমিটিকে অন্ধকারে রেখে দিনটিকে ‘পরাক্রম দিবস’ হিসেবে পালনের ঘোষণা করে দিল আচমকাই। আরও কিছু ঘোষণাও তারা করেছে। বিরোধীরা তো বটেই, সরকারের এই একতরফা সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে প্রবল আপত্তি জানিয়েছেন বসু পরিবারের অন্যতম সদস্য বিজেপি নেতা চন্দ্রকুমার বসুও। দলীয় সদস্যের এ ব্যাপারে ক্ষোভ উগরে দেওয়ার ঘটনায় মোদি সরকার সত্যিই কতটা অস্বস্তিতে পড়ল তা বিতর্কের বিষয়। কারণ কোনও উদ্দেশ্য নিয়েই কেন্দ্র ঘোষণাটি করেছে। তবে রাজ্যের দাবি, বাঙালির আবেগকে অগ্রাহ্য করে সরকার যেভাবে ঘোষণাটি করল তা তাদের সেই একরোখা মনোভাবেরই বহিঃপ্রকাশ। বিরোধী বক্তব্যকে এই সরকার কখনওই মান্যতা দেয় না। গণতন্ত্রের ধার ধারে না। দেশে অনেক সরকার এসেছে। কোনও সরকারই নেতাজিকে তাঁর প্রাপ্য সম্মান দেয়নি। মোদি সরকারও আসন্ন বাংলার ভোটে বাঙালি আবেগকে উস্কে দেওয়ার স্বার্থে যা করল তা ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানির’ সমান। সঙ্গত কারণেই বাম ডান সকলেই প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে। কারণ দেশপ্রেম দিবসের দাবিটি দীর্ঘদিনের। ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বলা যায় নেতাজিকে নিয়ে মোদি সরকারের এহেন ভূমিকার প্রতিবাদে অবিজেপি রাজনৈতিক দলগুলি যেভাবে একসুরে কথা বলেছে তা বিধানসভা ভোটের আগে কেন্দ্রের শাসকদলের পক্ষে খুব একটা স্বস্তিদায়ক হবে না।
বাঙালি মননে মহানায়ক নেতাজিকে মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন, ‘প্যাট্রিয়ট অব প্যাট্রিয়টস’। বিজেপি সরকার অবশ্য স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসকে সেভাবে গুরুত্ব দিতে চায় না। তা তাদের মনোভাবেই স্পষ্ট। বিতর্কের রাস্তা খুলে দিয়ে তারা প্রচারের আলোয় আসতে চায়। এই কারণেই সম্ভবত রাজ্যের দাবিকে নস্যাৎ করে কেন্দ্র আচমকাই নেতাজির জন্মদিনটিকে পরাক্রম দিবস হিসেবে পালনের ঘোষণা করল। মানা হল না ২৩ জানুয়ারি জাতীয় ছুটি হিসেবে ঘোষণার দাবিটিও। কেন্দ্রের এমন আচরণে বঙ্গবাসী অখুশি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে তাঁরা অবশ্য এই দিনটিকে দেশনায়ক দিবস হিসেবেই পালন করবেন।