বিদ্যার্থীদের পঠনপাঠনে আগ্রহ বাড়বে। কর্মপ্রার্থীদের কর্মপ্রাপ্তির যোগ। বিশেষত সরকারি বা আধা সরকারি ক্ষেত্রে যোগ প্রবল। ... বিশদ
বাংলার ভোটকে পাখির চোখ করে রাজ্য দখলের জন্য পদ্ম শিবির দুর্নীতিকে ব্রহ্মাস্ত্র করছে। সেই অস্ত্রে তৃণমূল সরকারকে ঘায়েল করতে মরিয়া। এমন সময়ে গরিব কৃষকদের স্বার্থে করা কেন্দ্রের কিষান নিধি প্রকল্পের টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে বড়সড় অনিয়মের ঘটনা সামনে আসায় অভিযোগের তির ঘুরে গেল সেই কেন্দ্রে দিকেই। রাজ্যে বাম আমলে বিপিএল-এর সুযোগ সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে এমন অনিয়মের অভিযোগ প্রায়ই উঠত। শোনা যেত, স্কুলের শিক্ষক বা প্রধানশিক্ষক, সরকারি কর্মী এমনকী মহাজনের নামও থাকত বিপিএল তালিকায়। স্বচ্ছ ভারত গঠনের কাণ্ডারী প্রধানমন্ত্রীর মোদির জমানাতে আয়কর দেন এমন মানুষের নাম কিষান নিধি প্রকল্পে থাকায় প্রকল্পের স্বচ্ছতাই এখন প্রশ্নের মুখে। কারণ শর্ত ছিল, মাসে ১০ হাজার টাকার বেশি পেনশন পেলে বা কর দিলে কৃষকরা এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন না। ছিল আরও নানা শর্ত। তাহলে শর্তপূরণ না করা সত্ত্বেও ‘অযোগ্য চাষিরা’ কীভাবে প্রকল্পের সুবিধা পেলেন? যে প্রকল্পের উদ্দেশ্য ‘ছোট ও প্রান্তিক চাষি’ পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করা সেখানে নাকি কৃষি জমির প্রতিষ্ঠাতা মালিক সহ বহু সম্পন্ন কৃষকের নাম টাকা প্রাপকের তালিকায় রয়েছে। অর্থাৎ গরিব কৃষকের বদলে সুবিধা পাচ্ছেন বড়লোক কৃষক! তাহলে? প্রকল্পের সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়েছে বলে যদি অভিযোগ ওঠে তাহলে তা কি অনুচিত হবে? এদেশে আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা অনেক ঘটেছে। এই মোদি জমানাতেই দেশের টাকা নিয়ে বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন একাধিক ব্যক্তি। এখনও এমন বহু টাকা উদ্ধার করতে পারেনি সরকার। কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রক নাকি বলেছে, কিষান নিধির যে-অর্থ অযোগ্য ব্যক্তিদের হাতে গিয়েছে তা উদ্ধার করা হবে। প্রশ্ন হল, কেন্দ্র কীসের ভিত্তিতে ওই টাকা তাঁদের দিল? কীভাবেই বা টাকা উদ্ধার হবে? এই বিষয়টিও কি বিদেশে চলে যাওয়া দেশের টাকা ফিরিয়ে আনার মতো হবে? তাই দুর্নীতির প্রশ্নে অন্যের বিরুদ্ধে আঙুল তোলার আগে কেন্দ্রের যাবতীয় কাজকর্মে স্বচ্ছতা বজায় রাখাটা জরুরি ছিল। না-হলে এমনভাবেই তির উল্টোমুখো হয়ে নিজের তিরেই নিজে বিদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল।
কিষান নিধি প্রকল্পের বাস্তবায়নে ‘ভুল’ হাতে টাকা দেওয়ার অভিযোগ ওঠায় অস্বস্তিতেই পড়ল বিজেপি নেতৃত্ব। এমনিতেই নয়া তিন কৃষি আইনের কারণে কেন্দ্র কোণঠাসা। মমতা সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাতে গিয়ে কেন্দ্রের কিষান নিধিকে প্রচারের হাতিয়ার করছিল বিজেপি নেতৃত্ব। তারা বোঝাবার চেষ্টা করছিল, রাজ্য সরকারের কারণেই বঙ্গের কৃষকরা কেন্দ্রের এই প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। কিন্তু শর্তপূরণ না করা সত্ত্বেও বহু কৃষককে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার বিষয়টি সামনে আসায় প্রশ্নটি একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গেল কেন্দ্রের দিকেই। কী করে ‘অযোগ্য’ ব্যক্তিদের হাতে তারা টাকা তুলে দিল তার জবাব তো মোদি সরকারকেই দিতে হবে। এই ভুলের দায়ও বহন করতে হবে। না-হলে কোন মুখে গেরুয়া নেতারা বলবেন, দরিদ্র কৃষকদের আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে কেন্দ্র? তাই সর্ষের মধ্যে ভূত থাকলে তা তাড়াতে হবে তাঁদেরই।