প্রণয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকবে। কারও কথায় মর্মাহত হতে হবে। ব্যবসায় শুরু করা যেতে পারে। কর্মে সুনাম ... বিশদ
বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার তমলুকের রিজিওনাল ম্যানেজার শ্যামল হাজরা বলেন, ৪০হাজারের বেশি ইলেক্ট্রিক পোস্ট ভেঙে পড়েছে। দু’হাজারের বেশি ট্রান্সফর্মার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কয়েক হাজার কিলোমিটার বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গিয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে খানিকটা সময় লাগবে। আমরা নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে চলছি। যেখানে খুঁটি এবং অন্যান্য সরঞ্জাম পাওয়া যাবে, জরুরি ভিত্তিতে সেসব সংগ্রহ করে পুনর্গঠনের কাজ করার নির্দেশ আছে। আমরা ইতিমধ্যেই চার হাজার খুঁটি এবং ৫০০কিলোমিটার তার পেয়েছি। এরকম ভয়াবহ বিপর্যয় এর আগে কখনও হয়নি।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার চারটি ডিভিশনের অধীন ২৮টি সাপ্লাই অফিস রয়েছে। উম-পুন সাইক্লোনে সবক’টি সাপ্লাই এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মহিষাদলের গেঁওখালিতে পাম্পের সাহায্যে রূপনারায়ণ নদ থেকে জল তুলে হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে জল সরবরাহ করা হয়। গেঁওখালিতে প্রচুর পরিমাণ গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ায় গোটা এলাকায় বিদ্যুৎ বিপর্যয় নেমে আসে। যেকারণে সেখানে পাম্প চালানো যায়নি। কার্যত নির্জলা অবস্থা গোটা হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সারাদিন সেখানে ভেঙে পড়া বিদ্যুতের খুঁটি সরিয়ে মেরামতের কাজ চলে। ডব্লুবিএসইডিসিএলের রিজিওনাল ম্যানেজারের তদারকিতে ৪৮ঘণ্টার বেশি সময় ধরে কাজ হয়। শনিবার রাতে সেখানে সংযোগ আনা গিয়েছে বলে শ্যামলবাবু জানান।
উম-পুন এর ছোবলে নন্দীগ্রাম ও খেজুরি একেবারে তছনছ হয়ে গিয়েছে। নন্দীগ্রাম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল সহ গোটা তল্লাট বিদ্যুৎহীন। হাসপাতালে সংযোগ আনার জন্য দু’দিন প্রচুর ভেঙে পড়া খুঁটি সরানো হয়েছে। বসানো হয়েছে নতুন খুঁটি। মাকড়শার জালের মতো ঝুলে থাকা তার ঠিকঠাক করা হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যা নাগাদ সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ আনা হয়েছে বলে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার রিজিওনাল ম্যানেজার জানান। তবে, নন্দীগ্রাম, খেজুরি, দেশপ্রাণ ব্লকের অনেক গ্রামে একটিও ইলেক্ট্রিক পোস্ট আস্ত নেই। দুর্গত ওইসব এলাকায় পৌঁছতে আরও বেশ খানিকটা সময় লাগবে।
এদিকে বিদ্যুৎ না থাকায় মানুষজন ধৈর্য হারিয়ে ফেলছেন। বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে পাম্প অচল। জল মিলছে না। গরমের মধ্যে জল না পাওয়ায় মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছেন। অবরোধ, বিক্ষোভ শুরু হয়েছে নানাপ্রান্তে। পরিষেবা স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে বিরামহীন লড়ে যাচ্ছেন বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার ১৪২জন ইঞ্জিনিয়ার, অফিসার থেকে ২০০টি ঠিকাদার সংস্থার প্রায় দু’হাজার কর্মী।
তমলুক, হলদিয়া, কাঁথি, এগরা এবং পাঁশকুড়া পুরসভার কিছু জায়গায় এখনও পর্যন্ত পরিষেবা মোটামুটি স্বাভাবিক করা হয়েছে। পুরসভা এলাকায় মূলত পাম্পের সাহায্যে জল তুলে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু, বিদ্যুতের অভাবে ওই কাজ বিঘ্নিত হচ্ছিল। তবে, আপাতত পুরসভা এলাকায় পরিষেবা স্বাভাবিক হওয়ার পথে। তবে, গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক হতে আরও বেশ খানিকটা সময় লাগবে। কারণ দুর্গত প্রচুর গ্রামে এখনও যেতেই পারেননি মেনটেন্যান্সের কাজে নিযুক্ত কর্মীরা। প্রত্যেক সাপ্লাই এলাকায় শ’য়ে শ’য়ে খুঁটি ভেঙে পড়ে রয়েছে। ছেঁড়া সুতোর মতো কয়েক হাজার কিলোমিটার তার পড়ে আছে। শ্যামলবাবু বলেন, উম-পুনের পর আমার বাড়িতে এখনও বিদ্যুৎ আসেনি। আমাদের একটাই অনুরোধ, একটু ধৈর্য ধরুন। আমাদের খানিকটা সময় দিন।