সংবাদদাতা, ময়নাগুড়ি: জম্মুতে সুড়ঙ্গ ধসে মৃত ধূপগুড়ির পাঁচ শ্রমিকের দেহ মঙ্গলবার গ্রামে পৌঁছল। পরিযায়ী ওই শ্রমিকদের বাড়ির কাছাকাছি নদীর পাড়ে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। এদিন একে একে শ্রমিকদের দেহ পৌঁছতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁদের নিকটাত্মীয় সহ প্রতিবেশীরা। অনেকের বাড়িতেই এদিন হাঁড়ি চড়েনি। আগে থেকে জানানো হয়েছিল মঙ্গলবার মৃতদেহগুলি গ্রামে আসবে। তাই ভোর থেকে গ্রামে বেড়ে ওঠা ছেলেগুলিকে শেষবারের মতো দেখতে রাস্তার অধীর অপেক্ষায় ছিলেন শ’য়ে শ’য়ে বাসিন্দা। সকালে প্রথমে দু’জনের দেহ পৌঁছয় মাগুরমারি-২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। ওই গ্রামের পশ্চিম মল্লিকপাড়ার যাদব রায় (২৩) ও গৌতম রায়ের (২২) কফিনবন্দি দেহ গাড়িতে করে নিয়ে আসা হয়। চোখের জলে তাঁদের বিদায় জানান মাগুরমারির বাসিন্দারা। বিকেলের দিকে গধেয়ারকুঠি পঞ্চায়েতের তিন পরিযায়ী শ্রমিক পরিমল রায় (৩৫), দীপক রায় (৩০) ও সুধীর রায়ের (৩১) দেহ। একসঙ্গে তিনজনের মৃতদেহ পৌঁছতেই শোকস্তব্ধ হয়ে পড়ে গোটা গ্রাম। চারদিকে তখন শুধুই কান্নাররোল। পরিবারের সদস্যরা ঘনঘন সংজ্ঞা হারান। সংসারের হাল ধরতে বাড়তি রোজগারের জন্য এঁরা জম্মুতে কাজের সন্ধানে পাড়ি দিয়েছিলেন। স্থানীয়দের দাবি, এভাবে তাঁদের কফিনবন্দি দেহ ফিরবে, কেউ আঁচ করতে পারেননি। এতবড় দুর্ঘটনা যে হতে পারে, তা তাদের কল্পনাতেও ছিল না। গধেয়ারকুঠি পঞ্চায়েতের প্রধান ধর্মনারায়ণ রায় বলেন, বিকেলে আমাদের গ্রামের তিনজন পরিযায়ী শ্রমিকের মৃতদেহ এসে পৌঁছয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিবারের লোকজনের হাতে দেহ তুলে দেওয়া হয়। পরে ওই শ্রমিকদের বাড়ির সামনেই তাঁদের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। এর আগে ওই ছেলেরা কেরল সহ দেশের অন্য রাজ্যে কাজ করতে গিয়েছিল। তারা সেখান থেকেই কাজের সূত্রে জানতে পেরেছিল জম্মুতে যে কাজ রয়েছে, তাতে টাকা বেশি। সে কারণেই তাঁরা সেখানে কাজে গিয়েছিলেন। আমাদের দাবি, নির্মাণকারী সংস্থা যেন ওই পরিবারগুলির পাশে দাঁড়ায়।
মাগুরমারি-২ পঞ্চায়েতের প্রধান সীমা রায় বলেন, আমার গ্রামের মৃত দু’জন পরিযায়ী শ্রমিকের বাড়ির সামনে নদীর ধারে তাঁদের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। পরিবারগুলিকে কীভাবে সমবেদনা জানাব, বুঝে উঠতে পারছি না। আমরা পরিবারগুলির পাশে রয়েছি।
গ্রামে কাজের অভাব। তাই কাজের সন্ধানে ধূপগুড়ির অনেক যুবকই ভিনরাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজে যান। কিন্তু, সেখানে গিয়ে এভাবে দুর্ঘটনায় তাঁদের মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না গ্রামবাসীরা। মৃত যুবকদের যাঁদের পরিবারে মা, বাবা, স্ত্রী, সন্তানরা আছেন। তাঁরা কার্যত ভেঙে পড়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার রাতে জম্মুর রামবনে একটি নির্মীয়মান সুড়ঙ্গ ধসে ধূপগুড়ির এই পাঁচ শ্রমিকের মৃত্যু হয়। সেই খবর পৌঁছতেই এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।