দীর্ঘকাল ধরে চলা সম্পত্তি মামলায় বিজয়। যাচাই না করে সম্পত্তি ক্রয় বা আর্থিক লেনদেনে ক্ষতির ... বিশদ
এবং ভয়ানক নিন্দনীয় পদক্ষেপ। এর বিরুদ্ধে বিরোধীরা এতটাই সরব ছিল যে পি ভি নরসিমহা রাও পরবর্তী পদক্ষেপ স্থগিত রাখতে চেয়েছিলেন। পদক্ষেপ স্থগিত রাখার যে ইচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর ছিল সেটি বাস্তবায়নের ভান করেছিলেন মনমোহন সিং। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ডেপুটি গভর্নর সি রঙ্গরাজনকে পাওয়া যায়নি এবং ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই আর একদফা অবমূল্যায়নের ঘোষণা দিয়ে ফের তূর্য বাজানো হয়েছিল! এটি ছিল একটি পূর্ব পরিকল্পিত ও দুই ধাপের একটি নৃত্য প্রদর্শনী এবং পরিবেশন করা হয়েছিল দুর্দান্ত দক্ষতার সঙ্গে।
যা অনুসৃত হয়েছে তা দুটিমাত্র শব্দে সংক্ষিপ্ত করা যেতে পারে: বিশুদ্ধ সাহস। সরকার পর্যায়ক্রমে দ্রুত ঘোষণা করে বাণিজ্য নীতির সংস্কার, নতুন শিল্পনীতি এবং একটি যুগান্তকারী বাজেট। সরকারের সাহস, স্বচ্ছতা ও গতি প্রত্যক্ষ করে সারা দুনিয়া নড়েচড়ে বসে। স্বভাবসিদ্ধ দুলকি চাল ছেড়ে হাতিও যেন তেড়েফুঁড়ে নৃত্যে মেতে উঠল।
মুক্ত বাজার অর্থনীতি নিশ্চিতকরণ
কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারই উদারীকরণের যুগের সূচনা করেছিল। তারপর থেকে গত ৩০ বছরে দেশ সম্পদসৃষ্টি করেছে। নতুন ব্যবসা-বাণিজ্য হয়েছে। নতুন নতুন উদ্যোগপতি তৈরি হয়েছেন। একটি বিশাল মধ্যবিত্ত শ্রেণি সৃষ্টি হয়েছে। চাকরি হয়েছে লক্ষ লক্ষ বেকার যুবক-যুবতীর। এছাড়া হয়েছে বিপুল রপ্তানি বাণিজ্য। ওই সময়ে ২৭ কোটি মানুষ দারিদ্র্র্যের অভিশাপমুক্ত হয়েছেন। সব মিলিয়ে ভীষণভাবে উপকৃত হয়েছে দেশ। তবুও সন্দেহের অবকাশ নেই যে একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ চরম দারিদ্র্যকে সঙ্গী করেই বেঁচে রয়েছেন। বিশ্ব ক্ষুধা সূচক (গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স) ২০২১-এ, ভারতের র্যাঙ্ক ১১৬টি দেশের মধ্যে ১০১—এটাই প্রমাণ করে যে এখানে ক্ষুধা রয়েছে। অন্যদিকে, জাতীয় পারিবারিক স্বাস্থ্য সমীক্ষা-৫ (এনএফএইচএস-৫) রিপোর্ট পরিষ্কার দিয়েছে যে, নারী ও শিশুদের মধ্যে অপুষ্টি রয়েছে সর্বত্র। শিক্ষা বিষয়ক বার্ষিক রিপোর্ট (অ্যানুয়াল স্টেটাস অব এডুকেশন রিপোর্টস) সূত্রে জানা যাচ্ছে, প্রতিষ্ঠান থেকে ছেলেমেয়েরা বিশেষ কিছু শিখতে পারছে না। ব্যাপক বেকারত্ব তো রয়েছেই। আর আছে পর্যায়ক্রমিক উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি। আয়, সম্পদ ও লিঙ্গ বৈষম্য বেড়ে চলেছে। রয়েছে মারাত্মক আঞ্চলিক বৈষম্য। অনেক শ্রেণির মানুষ ন্যায্য ও সমান সুযোগ থেকে বঞ্চিত।
মুক্ত, উদার ও বাজার অর্থনীতির পথ থেকে আমরা সরে যেতে পারি না। সেটা হবে আত্মঘাতী পদক্ষেপ। তবুও, আমাদের অবশ্যই সার্বিক মূল্যায়ন করতে হবে এবং সারা পৃথিবীর ও ভারতের উন্নয়নের সত্য বিবেচনায় রেখে আমাদের অর্থনৈতিক নীতিগুলি ফের নির্ধারণ করতে হবে। তার জন্য প্রয়োজন ১৯৯১-এর সাহস, স্বচ্ছতা এবং গতি।
সারা বিশ্বের ও দেশীয় উন্নয়ন
বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন চিত্রে চোখ রাখুন। ধনী দেশগুলি আরও ধনী হয়েছে এবং উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায়—চীন ও ভারতের মধ্যে ব্যবধানটি হয়েছে অনেক চওড়া। ২০২২ সালে চীনের নমিনাল জিডিপির পরিমাণ দাঁড়াবে ১৬.৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং সেটা ভারতের ক্ষেত্রে হবে ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। ডিজিটাল প্রযুক্তি মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের দখল নেবে। ডেটা হবে নতুন সম্পদ। অটোমেশন, রোবোটিক্স, মেশিন লার্নিং এবং
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিশ্ব শাসন করবে এবং মানুষের ভূমিকা সংজ্ঞায়িত হবে আর একবার। ফাইভ জি, ইন্টারনেট ৩.০, ব্লকচেইন, মেটাভার্স এবং
অজ্ঞাত বিষয়গুলি নয়া বিশ্বের নানা স্পেস-এর ব্যাখ্যা দেবে। জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণতি আছড়ে পড়বে এবং মানবজাতি তারই মোকাবিলায় লড়তে থাকবে। জীবাশ্ম জ্বালানি আমরা শেষ করে ফেলব এবং এই গ্রহে বেঁচে থাকতে ‘ক্লিন এনার্জি’-র উত্স বাড়াতে বাধ্য হব।
দেশীয় উন্নয়নের কথা ভাবুন। টোটাল ফার্টিলিটি রেট (টিএফআর) ২.০-এ নেমে এসেছে, যা রিপ্লেসমেন্ট রেটের নীচে। ১৫ বছরের কম বয়সি জনসংখ্যার অনুপাত ২০১৫-১৬ সালে ছিল ২৮.৬ শতাংশ, সেটি ২০১৯-২১ সালে ২৬.৫ শতাংশে নেমে এসেছে। এটি ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের শেষের সূচনা বলে চিহ্নিত করে। গড়পড়তা কৃষকরা বেশিই ফসল ফলাচ্ছেন, তবুও তাঁদের জীবনযাপনের মানের উন্নতি হয়নি। অতএব, একজন কৃষক বিশ্বাস করেন যে কৃষিকাজে বাস্তবিক কোনও লাভ নেই এবং তাঁদের সন্তানরাও আর কৃষিকাজকে জীবিকা হিসেবে নিতে চায় না। নগরায়ণ হচ্ছে দ্রুত এবং হু হু করে বাড়ছে শহুরে বেকারত্বের হার। প্রসার ঘটছে ডিজিটাইজেশনের। গরিব এবং মধ্যবিত্ত/ধনীর মধ্যে অনুরূপ ডিজিটাল বিভাজনও ঘটছে। সংখ্যাগরিষ্ঠের আধিপত্যচিন্তা জায়গা পাচ্ছে সাধারণ নাগরিকদের কথাবার্তায়। মেরুকরণ ও ঘৃণার রাজনীতি অর্থনীতির উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। জনসংখ্যার ২০ শতাংশকে দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো থেকে বাদ রেখে কোনও জাতি ইকনমিক পাওয়ার বা অর্থনৈতিক শক্তি হয়ে উঠতে পারে না।
বর্জন হল আত্ম-পরাজয়
পুনর্নির্ধারণ অনিবার্য। গত কয়েক বছরে যেমনটা হয়েছে—চাকরি-বাকরি নেই—এমন একটি বৃদ্ধি দেশ মেনে নেবে না। ‘চাকরি’-ই হবে বৃদ্ধির ভিত্তি। এক-একটি চাকরি সৃষ্টির স্রোতেই বাকি কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে। বছরে ২ কোটি চাকরি সৃষ্টির উচ্চকিত প্রতিশ্রুতি থেকে মোদি সরকার ‘পাকোড়া বিক্রি করা’ একটি চাকরির পক্ষে করুণ যুক্তিজাল বিস্তার করেছে। যেসব পরিশ্রমী পরিবার ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করার জন্য তাদের যথাসর্বস্ব ব্যয় করে দেখছে চাকরিই নেই—মোদি সরকার তাদের হতাশ করেছে। হিন্দুত্বের আবেগে ভাসিয়ে দিয়ে মোদি সরকার হয়তো সাময়িকভাবে পিঠ বাঁচাতে পারবে, কিন্তু তরুণরা অচিরেই বুঝতে পারবেন যে হিন্দুত্ব (এবং একটি মেরুকৃত ও বিভক্ত সমাজ) কাউকে চাকরি দেবে না—তিনি নারী/পুরুষ, হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, শিখ, অন্যকোনও ধর্মবিশ্বাসী কিংবা নাস্তিক যেটাই হোন না কেন।
এই আলোচনা আমাদের, অনিবার্যভাবে, কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের পরিবর্তিত ভারসাম্যের দিকে নিয়ে যায়। সম্পর্কগুলি অতীতে এতটা আশঙ্কাভরা ছিল না। আগে রাজ্যগুলির অর্থব্যবস্থাও এতটা নাজুক ছিল না কখনও। রাজ্যগুলির নিজস্ব সম্পদ হ্রাস পেয়েছে। জিএসটির প্রতি হতাশা ক্রমে বাড়ছে। এর জন্য এর পরিচালন ব্যবস্থাকেই দায়ী করতে হয়। কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির মধ্যে আস্থার সম্পর্কে সম্পূর্ণ ভাঙন ধরেছে। এমনকী ‘ব্রেক্সিট’ ধাঁচে, কথাবার্তা চলছে ‘জিএসটি-এক্সিট’ নিয়ে। রাজ্যগুলির আইন প্রণয়নের এক্তিয়ারের দখল নিয়েছে কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলি যাতে সেসব চুপচাপ মেনে নেয় তার জন্য কেন্দ্রের নির্বাহী ও আর্থিক ক্ষমতার অপব্যবহার করা হচ্ছে। শুধু মোদি সরকারের নীতিই নয়, এরা যে পন্থায় এগচ্ছে তাতে ফেডারেল কাঠামোটি ধ্বংস হয়ে যাবে।