দীর্ঘকাল ধরে চলা সম্পত্তি মামলায় বিজয়। যাচাই না করে সম্পত্তি ক্রয় বা আর্থিক লেনদেনে ক্ষতির ... বিশদ
যাত্রীটির হাবভাব তখন উদভ্রান্তের মতো। আন্তরিকভাবে সেবিকা জিজ্ঞেস করলেন, কী হয়েছে? বিমানে ওঠার পর ইংরেজিতেই কথা বলছিলেন যাত্রীটি। এবার বেরিয়ে এল মাতৃভাষা। ‘পিতাজি গুজর গ্যয়ে। থোড়া দের পহেলে মুঝে ছোড়নে এয়ারপোর্ট তক আয়েথে।’ (বাবার মৃত্যু হয়েছে। কিছুক্ষণ আগে আমাকে ছাড়তে বিমানবন্দর অবধি এসেছিলেন।) ‘মুঝে উতার না হ্যয়। যানে দিজিয়ে’। (আমাকে নামতে হবে। যেতে দিন।) আচমকা বজ্রাঘাত হলেও হয়তো এতটা বিহ্বল হয়ে পড়তেন না পোড় খাওয়া বিমান সেবিকা।
এরপর সেবিকা মারফত খবর গেল কেবিন ক্রুয়ের কাছে। তাঁর মাধ্যমে জানলেন অ্যাসিস্টান্ট পাইলট। তারপর জানলেন পাইলট। বিমানে ততক্ষণে দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়ে গিয়েছে। তখন রানওয়েতে গতি নিতে শুরু করেছে বিমানটি। এমিরেটস বিমানটির পাইলট থেকে বাকি আধিকারিকরা যেন ধর্মসঙ্কটের সামনে। বিমান থামানোর হাজারো ঝক্কি। এতজন যাত্রীর সময়ে পৌঁছনোর প্রশ্ন। রানওয়েতে অন্য বিমান আটকে যাওয়ার আশঙ্কা। ভেবে কূল পাচ্ছিলেন না পাইলট। বেশি ভাবারও সময় নেই হাতে। তবে সিদ্ধান্ত নিতে সময় নিলেন না। গতি কমিয়ে দিলেন বিমানের। মৃত ব্যক্তির সম্মান সবার আগে। বাবাকে শেষবার দেখতে চাওয়ার আকাঙ্খাকে সম্মান দেওয়াটাই মানব ধর্ম। থেমেই গেল এমারেটস সংস্থার ই কে ৫৭১ নম্বর বিমানটি। বিমান থামার সঙ্গে সঙ্গে তরিৎ গতিতে কৈফিয়ৎ তলব দমদম বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের। ঠান্ডা গলায় প্রশ্নের জবাব দিলেন পাইলট। ঘটনার গুরুত্ব বুঝে সংবেদনশীল ভূমিকা নিলেন এটিসির কর্তব্যরত আধিকারিকও। না উড়ে ফিরল বিমান।
মণিকান্ত ঝাকে নিয়ে তখন ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বিমানে থাকা অন্যান্য যাত্রীরাও। ‘বাবাকে শেষবারের জন্য দেখতে যাক মানুষটি। তার জন্য দেরি হয় হোক’—বক্তব্য অধিকাংশ যাত্রীর। ঘড়িতে তখন সকাল ৯-৫০। এর ঘণ্টা দেড়েক আগেই মণিকান্তের বাবা দমদমে এসেছিলেন ছেলেকে ছাড়তে। কর্মসূত্রে ইস্তানবুল যাচ্ছে ছেলে। তার দুটো ব্যাগের একটা বাবা বয়েছেন সারা রাস্তা। এয়ারপোর্টে ঢোকার আগে ১০০ টাকা হাতে দিয়ে আশীর্বাদ করেছেন। তারপর বাড়ির পথ ধরেছেন। কে জানত সেই যাওয়াই তাঁর শেষ বাড়ির পথে যাওয়া। বাড়ি ফিরে প্রবল শ্বাসকষ্ট। বুকে অসহ্য ব্যথা। একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে শেষরক্ষা হয়নি। হাসপাতাল থেকেই ছেলে মণিকান্তের কাছে ফোন যায়।
মঙ্গলবার সকাল ৯-৪৫ এ ছেড়েছিল ই কে ৫৭১। বিমানটি ফিরে আসে। তবে যাত্রীদের বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। ১১-১৯ মিনিটে বিমানটি ফের রওনা দেয় গন্তব্য দুবাইয়ের উদ্দেশে।