পারিবারিক মঙ্গল অনুষ্ঠান ও পুজোপাঠে আনন্দলাভ। বন্ধু বিবাদের যোগ আছে। বিদ্যাচর্চায় উন্নতি। ... বিশদ
রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ দিলীপকুমার পাল বলেন, নতুন সুপার দায়িত্বভার নিতে অস্বীকার করেছেন। বিষয়টি স্বাস্থ্যভবনে জানিয়ে দিয়েছি। নতুন সুপার কাজে যোগ না দেওয়ায় বিদায়ী সুপারকে রিলিজ করাও সম্ভব হয়নি। প্রিয়ঙ্কর রায় বলেন, আমি হাসপাতাল সুপারের দায়িত্ব নেব না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সেটা ইতিমধ্যে জানিয়েও দিয়েছি। কেন হাসপাতালের নতুন সুপার দায়িত্ব নিতে চাইছেন না? এনিয়ে এখন চিকিৎসক ও কর্মীমহলে জল্পনা চলছে।
জেলা হাসপাতাল থেকে উন্নীত হয়ে রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রায় বছরখানেক আগে পঠনপাঠন শুরু হয়। ওই সময় হাসপাতালের ভাইস প্রিন্সিপাল তথা হাসপাতাল সুপার হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন সুরজিৎকুমার মুখোপাধ্যায়। মূলত চিকিৎসা পরিষেবা সংক্রান্ত পুরো বিষয়টি দেখভাল করেন হাসপাতাল সুপার। স্বচ্ছ ভাবমূর্তির ও কড়া প্রশাসক হিসেবে সুরজিৎবাবু একের পর এক অনৈতিক কাজকর্ম নিয়ে সরব হয়ে অনেকের রোষানলে পড়েছিলেন। চিকিৎসা পরিষেবা দিতে নিযুক্ত একশ্রেণীর ফাঁকিবাজ কর্মী থেকে চিকিৎসক, কাউকে ছেড়ে কথা বলতেন না সুপার। এখানেই থামেননি, হাসপাতালের কর্মী নয় অথচ মাসের পর মাস টাকা নিয়ে যাচ্ছে, এমন অনেকের বিল তিনি আটকে দিয়েছিলেন। প্রাক্তন সৈনিকদের জন্য সংরক্ষিত আসনে সাধারণ কিছু মানুষকে দিয়ে কেন নিরাপত্তাররক্ষীর কাজ করানো হচ্ছে, সেব্যাপারেও প্রশ্ন তুলেছিলেন সুরজিৎবাবু। দিনদিন কড়াকড়ি করতে থাকায় অনেক মৌচাকেই ঢিল পড়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছিল। গত ডিসেম্বর মাসে সুরজিৎবাবুকে ফোনে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। বিষয়টি তিনি স্বাস্থ্যভবনের কর্তাদের জানালে তাঁদের নির্দেশেই গত ১৬ ডিসেম্বর থেকে ছুটিতে চলে যান তিনি। সম্প্রতি স্বাস্থ্যভবন সুরজিৎবাবুকে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অধ্যাপক হিসেবে বদলির নির্দেশ জারি করে। পাশাপাশি প্রিয়ঙ্করবাবুকে নতুন সুপার হিসেবে কাজে যোগ দিতে নির্দেশ পাঠায়। হাসপাতালের পরিষেবার ক্ষেত্রে শীর্ষপদে নিযুক্ত করা হলেও প্রিয়ঙ্করবাবু সেই লোভনীয় সন্মানজনক পদে যোগ দিতে এতটুকু আগ্রহ দেখাননি। কিছুদিন আগে কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিল যে তিনি ওই দায়িত্ব নেবেন না। সোমবার কলেজের অধ্যক্ষের উপস্থিতিতে দায়িত্বভার হস্তান্তর ও গ্রহণের প্রক্রিয়া হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ওই পদে যোগ না দেওয়ার কথা অধ্যক্ষকে জানিয়ে দিয়েছেন প্রিয়ঙ্করবাবু।
এদিকে গত ১৬ ডিসেম্বর থেকে হাসপাতাল সুপার ছুটিতে থাকায় স্বাস্থ্যভবনের নির্দেশে অস্থায়ীভাবে ওই কাজের দায়িত্ব অধ্যক্ষকে দেওয়া হয়েছিল। দিলীপবাবু বলেন, নতুন সুপার কাজে যোগ না দেওয়ায় বিদায়ী সুপারকে রিলিজ করতে পারিনি। বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছি। প্রাণনাশের হুমকির পর দীর্ঘদিন গরহাজির থাকলেও বিদায়ী সুপার সুরজিৎকুমার মুখোপাধ্যায় সোমবার হাসপাতালে দায়িত্বভার হস্তান্তর করতে আসেন। কিন্তু রিলিজ অর্ডার না পাওয়ায় বিষয়টি তিনি সমস্যায় পড়ে গিয়েছেন।
রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দালালরাজ, আয়ারাজ, বেআইনি ট্রলিম্যানদের দৌরাত্ম্য ইত্যাদি বহু অভিযোগ রয়েছে। বিদায়ী সুপার দাললমুক্ত উন্নত পরিষেবা দিতে উদ্যোগ নিলেও একটি প্রভাবশালী চক্র হাসপাতাল প্রশাসনকে বারবার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে সব চেষ্টাই ব্যর্থ করে দিয়েছে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, হাসপাতালে কার্যকরী গুন্ডারাজ সামাল না দিলে কেউ যেচে ওই ‘বিপজ্জনক’ পদের দায়িত্ব নিতে চাইছেন না।