ডার্বিশায়ার: আকারে ছোটখাট। একঝলক তাকালে টি-পট বলে মনে হওয়া স্বাভাবিক। ডার্বিশায়ারের বছর একান্নর ভদ্রলোক বস্তুটিকে ছেলেবেলা থেকে চায়ের পাত্র বলেই জানতেন। কিন্তু আটপৌরে টি-পট থেকে যে সেটা অনেকটাই আলাদা, তা পাত্রটির গায়ের সূক্ষ্ম কারুকাজ দেখেই মালুম হত। তারপর বছর ঘুরেছে। বাড়ির পুরনো জিনিস এখানে-সেখানে পাঠিয়েছেন। কিছু জিনিস ফেলে দিয়েছেন। কাউকে আবার উপহারও দিয়েছেন। তবে, রঙচঙে ওই চায়ের পাত্রটি কখনও হাতছাড়া করেননি তিনি। লকডাউনের অবসরে ফের পুরনো জিনিস গোছাগাছ শুরু করেন ওই ব্যক্তি। সেই সময় অনেক বছর বাদে টি-পটটি তাঁর নজরে আসে। আর সঙ্গে সঙ্গে কৌতূহলের বশে পাত্রটি সম্পর্কে ইন্টারনেটে খোঁজখবর নিতে শুরু করেন তিনি। এরপর মাউসের ক্লিকেই আসল ব্যাপারটি খোলসা হয়ে পড়ে। ভদ্রলোক বুঝতে পারেন, যাকে তিনি এতদিন চায়ের পাত্র বলে মনে করতেন, তা আসলে ‘ওয়াইন জাগ’। চীনের একটি নিলাম সংস্থার ওয়েবসাইটে এমনই আরেকটি পাত্রের ছবি দেখেন তিনি। সঙ্গে বর্ণনার সামান্য অংশটুকু পড়ে অনুমান করেন, বাহারি ওয়াইনের পাত্রটির ঐতিহাসিক মূল্যও নিছক কম নয়! যার টানেই লকডাউনের মধ্যে স্থানীয় হানসন্স নিলাম ঘরের কর্মকর্তা এডওয়ার্ড রায়কর্টের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ভদ্রলোক। সবকিছু খুলে বলেন। এরপর রায়কর্ট বস্তুটি নেড়েচড়ে দেখার পর বলেন, ‘আপনার অনুমান পুরোপুরি ঠিক। পাত্রটি আঠারো শতকের চীনের কোনও রাজবংশের সামগ্রী। হাতঘুরে কোনওভাবে তাঁর কাছে চলে এসেছে। নিলামে তোলা হলে এর দাম দাঁড়াতে পারে ভারতীয় মুদ্রায় ৯৫ লক্ষের কাছাকাছি!
ইতিহাসের সালতামামি ঘেঁটে রায়কর্ট জানান, পাত্রটির বাইরের নকাশায় চীনা শিল্পীর হাতের ছাপ স্পষ্ট। এর আয়তনও ক্ষুদ্র। মাত্র ১৫ সেন্টিমিটার। রঙের ব্যবহার চড়া নয়। চারিদিকে হলুদ রঙের প্রলেপ। আর তার মধ্যে ফুটে রয়েছে পাতাভরা বাহারি ফুল। চীনা ঐতিহ্য অনুযায়ী, রাজদরবারে আগত অতিথিদের বহুমূল্য পাত্রে ওয়াইন সরবরাহ করা হতো। আঠারো শতকের শেষ পর্বে চীনের শাসক ছিলেন কুইআন লং। রায়কর্টের অনুমান, ওয়াইন পাত্রটি একসময় সেই রাজার ব্যক্তিগত সম্পত্তি ছিল। আর তিনি যে ভুল কিছু বলছেন না, তা ডার্বিশায়ারের ভদ্রলোকও স্বীকার করে নিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমার ঠাকুর্দা চীনে মোতায়েন ছিলেন। হয়তো তিনিই দেশে ফেরার সময় পাত্রটি সঙ্গে করে আনেন।’ পারিবারিক ঐতিহ্য বহনকারী সেই পাত্রটির মায়া এবার ত্যাগ করতে হচ্ছে ভদ্রলোককে। আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর ঐতিহাসিক পাত্রটির ভার্চুয়াল নিলামে তোলার বিষয়ে সবুজ সংকেত দিয়ে ফেলেছেন তিনি।