দিব্যেন্দু বিশ্বাস, নয়াদিল্লি: নামকরণ হয়েছে—‘মোদি কি গ্যারান্টি’। ইস্তাহারে প্রতিশ্রুতি থাকবেই, তাতে সংশয়ের অবকাশ নেই। কিন্তু নরেন্দ্র মোদির ‘গ্যারান্টি’র ইস্তাহারে প্রতিশ্রুতি এবং আম আদমির উন্নয়নের দিশাটাই যেন ‘কম পড়িয়া গেল’। ছত্রে ছত্রে ফিরিস্তি শুধু মোদি কী করেছেন, তার। সিএএ, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি এবং এক দেশ এক ভোট—ইস্তাহারে জ্বলজ্বল করছে প্রধানমন্ত্রীর পছন্দসই যাবতীয় ইস্যু। আর থাকল না কী? বারবার কৃষকদের জন্য ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বৃদ্ধির কথা বললেন, অথচ ইস্তাহারে নেই এমএসপি আইনের প্রসঙ্গ। মধ্যবিত্তদের কর্মসংস্থানের কথা বলেন, কিন্তু সরকারে এলে আগামী পাঁচ বছর কত চাকরির ব্যবস্থা করবেন, সে কথা বললেন না মোদি। একটি বুলেট ট্রেন নিয়েই নাজেহাল। অথচ, প্রতিশ্রুতি শোনা গেল আরও তিনটি করিডরে বুলেট ট্রেনের। নজর করার বিষয় হল, তার মধ্যে রয়েছে দেশের পূর্বাঞ্চলও। আগের ইনিংসের প্রতিশ্রুতি ছিল, ২০২২ সালের মধ্যে সবার মাথায় পাকা ছাদ। কিন্তু এবারের ‘গ্যারান্টি’তে মিলল আরও তিন কোটি পাকা বাড়ির প্রতিশ্রুতি। ফলে বিরোধীদের প্রশ্ন, সবার মাথায় পাকা ছাদ যে হয়নি, সেটা তাহলে প্রধানমন্ত্রী স্বীকার করে নিলেন! সস্তায় প্রত্যেক বাড়িতে নলবাহিত গ্যাস সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিলেন। কিন্তু কত গরিব মানুষ মূল্যবৃদ্ধির জ্বালায় উজ্জ্বলার গ্যাস সংযোগ ছেড়ে দিয়েছেন, সেই হিসেব মিলল না। বিনামূল্যে বিদ্যুতের প্রতিশ্রুতি দিল বিজেপির ইস্তাহার। অথচ, কত মানুষ এখনও ফুটপাতেই দিন গুজরান করেন, সেটা জানা গেল না। অর্থাৎ, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী তথা ইস্তাহার কমিটির চেয়ারপার্সন রাজনাথ সিং, বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডাকে পাশে নিয়ে প্রচুর জাঁকজমক করে ইস্তাহার প্রকাশ হল ঠিকই, কিন্তু ঢাকা পড়ল না বাস্তব প্রশ্নগুলোই।
বিজেপি ঘোষণা করল, ৭০ বছর এবং তার বেশি বয়সের প্রত্যেককে আয়ুষ্মান ভারতের স্বাস্থ্যবিমার অধীনে নিয়ে আসা হবে। আরও তিন কোটি মহিলা লাখপতি-দিদি, অটো-ট্যাক্সি-ট্রাক চালকদের সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনার কথাও বলা হয়েছে প্রকাশিত ইস্তাহারে। বলা হয়েছে মৎস্যজীবীদের কথাও। চাকরির ব্যাপারে সেভাবে কিন্তু উচ্চবাচ্যই এবার করেনি বিজেপি। উৎপাদন শিল্পে কর্মসংস্থানের কথা বলা হয়েছে প্রচার পুস্তিকায়। কিন্তু দেশের ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিটের পরিস্থিতি কি এখন বিপুল নিয়োগের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ? এই প্রশ্নও তুলেছে বিরোধীরা।
নজর করার মতো বিষয় হল, বিনামূল্যে আরও পাঁচ বছর রেশনের ঘোষণা। অথচ মোদি নিজেই বারবার বলেছেন, তিনি দেশের ২৫ কোটি দরিদ্র মানুষকে গরিবির রেখার বাইরে নিয়ে এসেছেন। তাহলে তারপরও পাঁচ বছর ফ্রি রেশনের প্রয়োজন কেন? কংগ্রেস নেতা পবন খেরার কটাক্ষ, ‘এমন গোলপোস্ট পরিবর্তন করার সরকার আগে দেখা যায়নি। বিজেপি ২০৪৭-এর কথা বলছে। ততদিন কি ওরা ক্ষমতায় থাকবে? পাঁচ বছরে কী করবে, সেটা বলুক!’ তৃণমূলের ডেরেক ও’ ব্রায়েনের কটাক্ষ, ‘কীসের ইস্তাহার? মোদি গ্যারান্টি ইকুয়াল টু জিরো ওয়্যারান্টি।’
শব্দের মারপ্যাঁচই প্রধানমন্ত্রীর ইউএসপি। এদিনও অন্যথা হয়নি। ইস্তাহারে ‘জ্ঞান’ বণ্টন করেছেন তিনি। কী এই জ্ঞান? গরিব (G), যুব (Y), কৃষক বা অন্নদাতা (A) এবং নারীশক্তি (N)। তবে হ্যাঁ, লোকসভা ভোটের ইস্তাহার প্রকাশের জন্য সময়টা মোক্ষম বেছেছেন নরেন্দ্র মোদি—বি আর আম্বেদকরের জন্মদিবস। শুধু জ্ঞানে হবে না, চাই যে দলিত আবেগও।