রাহুল চক্রবর্তী, বোলপুর: অনুব্রত মণ্ডলকে চেনেন? রামপুরহাট স্টেশনের বাইরে অটো স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন শুনে এমন ভাবে তাকালেন, যেন কেন্দ্রীয় এজেন্সির জেরার ভয়! যাইহোক খানিক থমকে উত্তর এল, ‘একটা সময় গোটা বীরভূম জেলায় একটা চারা গাছ কেউ কাটলে, তার খবর চলে যেত কেষ্টদার কাছে। সেই অনুব্রত মণ্ডলকে চেনেন না, বীরভূমের এমন কোনও মানুষ নেই।’ সঙ্গে আরেকটু সংযোজন করলেন ওই ব্যক্তি, ‘জানেন! সময় পরিবর্তনশীল। একটা সময় ওজনদার কেষ্টদার যে দাপট আর ক্যারিশ্মা সবাই দেখেছিল, আজ তা উধাও। নতুন করে কোনও নেতার মধ্যে তা পাওয়াও যাবে না!’রামপুরহাটের ওই ব্যক্তির কথার সূত্র ধরে এটা সত্য যে, ভোট এলেই কেষ্ট কিন্তু ছিলেন হিট। ভোটকে জড়িয়ে ‘চড়াম চড়াম’, ‘নকুলদানা, গুড়-বাতাসা’ আর ‘উন্নয়ন রাস্তার দাঁড়িয়ে’ একের পর এক মারকাটারি ডায়লগ, যা সিনেমার সংলাপকেও হার মানাতে বাধ্য। এহেন অনুব্রত ওরফে কেষ্ট মণ্ডল বছরখানেক ধরে তিহার জেলে বন্দি। কেন্দ্রীয় এজেন্সির হাতে গোরু পাচার মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন তিনি। লোকসভার মতো হাই ভোল্টেজ নির্বাচনে কেষ্টহীন বীরভূম! সংগঠন দেখভালের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন জেলার কোর কমিটির নেতারা। তার উপর স্বয়ং তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নজর তো রয়েছেই। প্রতি মুহূর্তে খোঁজখবর নিচ্ছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কিন্তু এত সবেরপরেও ভোটবাজারে কেষ্টর মারকাটারি ডায়লগ মিস করছেন বীরভূমের মানুষ। তারাপীঠ মন্দিরের মূল গেটের বাইরে সোমনাথ ঘোষের চায়ের দোকান। চা বানাতে বানাতেই নাগাড়ে বলে চললেন, ‘সত্যিই ভোট এলে কেষ্টদা যেন নির্বাচনের উত্তাপ আরও বাড়িয়ে দিতেন। তাঁর সেই সব ডায়লগগুলি নিয়ে দোকানের সামনে লোকের আলোচনা চলত সারাদিন। কিন্তু আজ বীরভূমহীন কেষ্টদা, কোনও ডায়লগ নেই, তাই আলোচনাও নেই। তীব্র গরমে তারাপীঠমুখীও হচ্ছেন না তেমন কেউ। কেমন যেন একটা নিরামিষ ব্যাপার!’ দোকানে চা খেতে বসেছিলেন সৈকত তালুকদার। কথার প্রসঙ্গে উত্তর দিলেন, ‘গত ৪-৫ বছর ধরে বীরভূমের যে কোনও ভোট হিট হয়েছিল শুধুমাত্র কেষ্টদার সৌজন্যে। তিনি মুখ খুললেই খবর।’
সত্যিই তাই! ২০২১’এ সালে বিজেপি যখন ২০০ আসন পাওয়ার দাবি করেছিল, তখন অনুব্রত বলেছিলেন, ‘ভয়ঙ্কর খেলা হবে’। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে যখন গেরুয়া শিবির ডানা ঝাপটাচ্ছে, তখন অনুব্রত মণ্ডল ‘নকুল দানা’ তত্ত্বের কথা সামনে আনেন। ভোটের দিন কমিশন তাঁকে নজরবন্দি করেছিল। তবে সেদিন দুপুরেই বলে দিয়েছিলেন, শতাব্দী রায় জিতে গিয়েছেন। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে ‘গুড়-বাতাসা’ দাওয়াইয়ের কথা বলে বিরোধীদের কড়া সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছিলেন বীরভূমের তৎকালীন জেলা তৃণমূলের সভাপতি কেষ্ট। ঝড় তুলেছিল ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে অনুব্রত’র ডায়লগ—‘চড়াম চড়াম করে ঢাক বাজবে’!
বৈশাখে পড়ন্ত দুপুরে সোনাঝুরি হাটে বিক্রেতা মল্লিকা দাস বললেন একজন এসে খোঁজ করছিলেন কেষ্টদা তো নেই, তাঁর ডায়লগ লেখা কোনও টি-শার্ট বা কুর্তা হবে। এমন চাহিদা শুনে আমি তো অবাক! না থেকেও এবার বীরভূমের ভোটে রয়ে গিয়েছেন ‘বিতর্কিত কেষ্ট’।