নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: শিশুপাচারের পর এবার পর্ন কাণ্ডে ধৃতের সঙ্গেও নাম জড়াল বিজেপির জনপ্রতিনিধির। এক সপ্তাহ আগে বাঁকুড়ার শিশুপাচারের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া কেন্দ্রীয় স্কুলের প্রিন্সিপালের সঙ্গে কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রমন্ত্রী সুভাষ সরকারের ছবি সামনে এসেছিল। এবার বিধাননগরের পর্ন কাণ্ডে একই কারণে আঙুল উঠল আসানসোলের বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পলের দিকে। মডেলিংয়ের টোপ দিয়ে মহিলাদের অশালীন ছবি ও ভিডিও তুলে পর্ন সাইটে বিক্রির অভিযোগে রবিবার বিধাননগর সাইবার ক্রাইম থানা গ্রেপ্তার করেছে ফটোগ্রাফার প্রতাপ ঘোষকে। এহেন ব্যক্তির সঙ্গে বঙ্গবিজেপির মহিলা মোর্চার সভানেত্রী অগ্নিমিত্রার অজস্র ছবি জ্বলজ্বল করছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। বিষয়টি সামনে আসায় প্রবল শোরগোল রাজনৈতিক মহলে। পরপর এমন ঘটনায় অস্বস্তিতে গেরুয়া শিবির।
শুধু প্রফেশনাল ফটোগ্রাফি নয়, বিধায়কের ছেলের জন্মদিন কিংবা বাবার সঙ্গে ছবি—সবেতেই উজ্জ্বল ভূমিকা নিয়েছেন অভিযুক্ত ফটোগ্রাফার। তাঁদের ‘যোগাযোগ’ এখানেই থেমে থাকেনি। গত লোকসভা ভোটের আগে অগ্নিমিত্রার সমর্থনে রাজনৈতিক পোস্ট করেছিলেন প্রতাপ। বিজেপি নেত্রীকে টিকিট দেওয়ার সওয়াল করে তিনি তোপ দাগেন দলের রাজ্য সহ সভাপতি রাজু ব঩ন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও। রাজ্য মহিলা মোর্চার সভানেত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে নানা সময় সরব হয়েছেন অগ্নিমিত্রা। বাংলার মহিলাদের প্রতি অন্যায় হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন। এখন তাঁর সঙ্গেই পর্ন কাণ্ডে ধৃত ফটোগ্রাফারের ঘনিষ্ঠতা প্রকাশ্যে আসায় পাল্টা সোচ্চার হয়েছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। গোটা ঘটনায় বিজেপি বিধায়কের যোগ রয়েছে কি না, তা জানতে তদন্তের দাবি জানিয়েছে তারা।
প্রতিক্রিয়া জানার জন্য অগ্নিমিত্রা পলকে বারবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। হোয়াটসঅ্যাপে একাধিকবার মেসেজ করা হয় তাঁকে। দীর্ঘক্ষণ পর তিনি জানান, ‘আমি বিধানসভায়, কালীচরণের সঙ্গে কথা বলুন।’ পরে বিধায়কের যে ভিডিও বার্তা কালীচরণ পাঠান, সেখানে প্রতাপের ওই রাজনৈতিক পোস্টের কোনও উল্লেখ ছিল না। তিনি শুধু জানান, ‘নিজের সিভি উজ্জ্বল করার জন্যই প্রতাপ ঘোষ আমার ছবি দিয়ে থাকতে পারে। এটা নিয়ে নিম্নরুচির রাজনীতি করা হচ্ছে।’ তৃণমূল রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন দাসু অবশ্য সাফ বক্তব্য, ‘এটাই কি বিজেপির স্বচ্ছতা, পবিত্রতা? আমরা এখনই বলছি না এই কাণ্ডগুলিতে তাঁরা যুক্ত। কিন্তু, আমরা চাই এদের বিরুদ্ধে তদন্ত হোক। সঠিক সত্য মানুষের সামনে আসুক।’ 
অগ্নিমিত্রা পেশায় একজন ফ্যাশন ডিজাইনার। পেশার প্রয়োজনেই ফটোগ্রাফারদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ থাকা অসম্ভব কিছু নয়। কিন্তু, অ঩ভিযুক্ত প্রতাপ ঘোষ যে সেই পর্যায়ে পড়েন না, তা বিধায়কের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকেই স্পষ্ট। তবে সব ছাপিয়ে গিয়েছে ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ অগ্নিমিত্রা ও তঁার বাবা অশোক রায়কে ট্যাগ করা অভিযুক্ত ফটোগ্রাফারের পোস্টটি। লোকসভা ভোটের প্রাকমুহূর্তে তিনি লিখেছিলেন, ‘একেই বলে রাজনীতি! ফ্যাশন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পলকে যেখান থেকে টিকিট দেওয়ার কথা, সেই বর্ধমান থেকে শোনা যাচ্ছে রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় নামে একজনকে টিকিট দেওয়া হবে। একদিকে মানুষের জন্য কাজ করার ইচ্ছা রেখেছে অগ্নিমিত্রা পল, অন্যদিকে রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে এলপিজি ডিস্ট্রিবিউটারশিপে মানুষের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে...।’ রাজু অবশ্য জানিয়েছেন, ‘প্রতাপ ঘোষকে আমি চিনি না। যে যেমন কর্ম করবে, সে তেমন ফল পাবে।’