বিদ্যার্থীদের কোনও বৃত্তিমূলক পরীক্ষায় ভালো ফল করবে। বিবাহ প্রার্থীদের এখন ভালো সময়। ভাই ও বোনদের ... বিশদ
উম-পুনের তাণ্ডবে বিপর্যস্ত রাজ্যের ন’টি জেলা। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দুই ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি ও কলকাতা। সবমিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ রাজ্যের হিসেবে এক লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। কেন্দ্রের হাতেও এই হিসেব তুলে দিয়েছে নবান্ন। কিন্তু অগ্রিম বাবদ এক হাজার কোটি টাকা দিয়ে দায় সেরেছে কেন্দ্র। পরিস্থিতি সামাল দিতে ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য। সীমিত আর্থিক ক্ষমতার মধ্যে যাতে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা উপকৃত হন, সেটাই চান মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু কিছুদিন ধরেই প্রায় প্রতিটি জেলায় ত্রাণ বণ্টনে কম বেশি অনিয়মের অভিযোগ উঠছে। বিক্ষোভও হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। সূত্রের খবর, নবান্নেই জমা পড়েছে দু’হাজারেরও বেশি অভিযোগ। বস্তুত, এইসব অভিযোগ কানে আসতেই কঠোর হন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসনের কাছে তাঁর সাফ বার্তা—‘ত্রাণ বণ্টনে দলবাজি, দুর্নীতি, স্বজন-পোষণ আমি বরদাস্ত করব না।’ বুধবার নবান্নে সর্বদলীয় বৈঠকেও তাঁর এই কড়া অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা। প্রয়োজনে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
শুধু কথার কথাই নয়। মুখ্যমন্ত্রীর এই বার্তা বৃহস্পতিবারই পৌঁছে গিয়েছে জেলাশাসক থেকে শুরু করে একেবারে পঞ্চায়েত স্তরে। নেত্রীর নির্দেশ পালনে সক্রিয় হয়ে উঠেছে তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব। এদিনই আবার দলের জেলা সভাপতিদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সুব্রত বক্সি। সেখানেও পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ হলেই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই কড়া ব্যবস্থা নিতে পারবেন সভাপতিরা। তাতে কাজও হচ্ছে দ্রুত। স্ত্রীর নামে সরকারি অনুদান নেওয়ার অভিযোগে বরখাস্ত হয়েছেন হুগলির গরলগাছা পঞ্চায়েতের প্রধান নরেন্দ্রনাথ সিং। টাকা ফেরতের মুচলেকাও দিতে হচ্ছে জেলার অভিযুক্ত নেতা-কর্মীদের। পূর্ব মেদিনীপুরে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের একটি তালিকা নবান্নে জমা পড়েছিল। তাতে প্রায় ১৫ হাজার উপভোক্তার নাম রয়েছে। নাম ধরে ধরে জেলায় তদন্ত চালাচ্ছে জেলা পুলিস-প্রশাসন। রামনগর ২ ব্লকে ভুয়ো তথ্য দিয়ে সরকারি সাহায্য নেওয়া মোট ৪০ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাঁদের কাছ থেকে টাকা ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছে ব্লক প্রশাসন। প্রতিটি জেলার পঞ্চায়েত স্তরেই গঠন করা হয়েছে বিশেষ কমিটি।
এদিন সকাল থেকেই বিডিও, এসডিওদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক পি উলগানাথন। ভুয়ো তথ্য দিয়ে সরকারি অনুদান নেওয়া দলীয় নেতাদের কাছ থেকে টাকা ফেরত নিতে সক্রিয় হন জেলার বেশ কয়েকজন বিধায়ক। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এদিনই পঞ্চায়েত সদস্য ও তাঁদের স্বচ্ছল আত্মীয়রা বিডিওর দেওয়া অ্যাকাউন্টে টাকা ফেরত দিতে শুরু করেছেন। জানা গিয়েছে, সাগরের ১১ জন টাকা ফেরত দিয়েছেন। মথুরাপুর-২ ব্লকের ৩৫ জনও সাত লাখ টাকা ফেরত দিয়েছেন বিডিওর কাছে।
উত্তর ২৪ পরগনায় পঞ্চায়েত প্রধানদের কাছে টাকা ফেরত দেওয়ার আবেদনপত্র পাঠাচ্ছে জেলা প্রশাসন। টাকা ফেরাতে হবে চেক বা ড্রাফটে। দেগঙ্গা ব্লকে পুলিস ও ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকদের টিম ৪০ শতাংশ এলাকায় সমীক্ষা চালিয়েছে। এদিন, পঞ্চায়েত প্রধানদের সঙ্গে পৃথক পৃথক বৈঠক করে টাকা ফেরাতে বলেছে ব্লক প্রশাসন।
স্বরূপনগর ব্লকে প্রায় ১৭ হাজার মানুষের নাম ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় রয়েছে। অভিযোগ, তাঁদের সিংগভাগই শাসক দলের জনপ্রতিনিধিদের আত্মীয়। বসিরহাট, বনগাঁ ও বারাসত মহকুমার বিভিন্ন ব্লক ও পুরসভার চিত্রটাও একই। দুর্নীতির অভিযোগে এদিন গ্রামবাসীদের হাতে নিগৃহীত হয়েছেন বনগাঁর ধর্মপুকুরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সুখপুকুরিয়া গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য গোপাল দে। তাঁকে ঝাঁটাপেটা করা হয় বলে অভিযোগ। তবে গোপালবাবুর দাবি, তিনি কোনওভাবেই স্বজন-পোষণের সঙ্গে যুক্ত নন। সব মিলিয়ে ত্রাণ বণ্টনে দুর্নীতি রোধে মুখ্যমন্ত্রীর এই নজিরবিহীন হস্তক্ষেপে খুশি সাধারণ মানুষ। ফাইল চিত্র