বিদ্যার্থীদের কোনও বৃত্তিমূলক পরীক্ষায় ভালো ফল করবে। বিবাহ প্রার্থীদের এখন ভালো সময়। ভাই ও বোনদের ... বিশদ
দুনিয়ার অধিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। করোনা ভাইরাস সবার আগে হানা দিয়েছিল চীনে। সেখান থেকে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে যা মহামারীর আকার ধারণ করেছে। স্তব্ধ করে দিয়েছে গোটা বিশ্বকে। আর চীন যখন এই রোগের প্রকোপ থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজে নিয়েছে, তখন একে একে আক্রান্ত হয়েছে আমেরিকা, ইউরোপ, দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলি। জিনপিং ভেবেছেন, এটাই সময়। বাকিরা ধুঁকছে... আর চীন সেই সুযোগ নিয়ে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে নেবে নিজের অর্থনীতি। শুধু তাই নয়, একটু একটু করে গ্রাস করবে দক্ষিণ এশিয়াকে। কখনও অর্থ জুগিয়ে, আবার কখনও দাদাগিরি করে। গত এপ্রিল মাসেই একটি ভাষণে তিনি বলেছিলেন, ‘বিপর্যয়ের ধ্বংসস্তূপের উপরই গড়ে ওঠে নতুন ইতিহাস’। রাজনৈতিক দিক থেকে মাও সে তুংকে অনুসরণ না করলেও জিনপিংয়ের লক্ষ্য যে অন্য কেউ নন, সেটাই আর একবার বুঝিয়েছিলেন তিনি। বিপর্যয় এখানে করোনা মহামারী। আর নতুন ইতিহাস? চীনের একচ্ছত্র আধিপত্য। কিন্তু সময়ের চাকা কি সেই পথেই গড়াচ্ছে?
হংকংকে স্বাধিকারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল চীন। কথা রাখেননি জিনপিং। তাই মহামারীর আবহেও বিক্ষোভ স্তিমিত হয়নি ওই একফালি ‘রাষ্ট্রে’। বরং বাড়ছে। সেনকাকু দ্বীপ জাপানের অধীনে। সেখানে খবরদারি করতে শুরু করেছে চীন। দক্ষিণ চীন সাগরে ক্ষমতা জাহিরের জাহাজ ভাসিয়েছে তারা। তাইওয়ানকে দমন করতে চাইছে। সীমান্তে বাঁধ নির্মাণ করে জল বন্ধ করে দিয়েছে ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়ার। আর সবশেষে আঘাত হেনেছে ভারতের সার্বভৌমত্বে। শুধু বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পে থমকে থাকেননি জিনপিং। লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা টপকেছে লালফৌজ।
বেল্ট অ্যান্ড রোড চীনের দীর্ঘদিনের অভিসন্ধি। ২০১৩ সালে এই প্রকল্পের ঘোষণা করেছিলেন জিনপিং। সড়ক, রেল এবং জলপথে জুড়বে এশিয়া, মধ্য ও পূর্ব ইউরোপ এবং আফ্রিকা। পশ্চিমে চীনের ইতিহাস-প্রাচীন বাণিজ্য পথ, উত্তরে মার্কো পোলো ও ইবন বতুতার সিল্ক রুট এবং দক্ষিণে অ্যাডমিরাল ঝেং হে’র সমুদ্রপথ। মুখে বলছেন, পারস্পরিক বাণিজ্যপথ সহজ করার, সংস্কৃতি আদান-প্রদানের মাস্টার প্ল্যান। আসলে এর নেপথ্যে অন্য অঙ্ক রয়েছে জিনপিংয়ের। এই তালিকায় নাম লেখানো ৭০টা দেশ ও সংগঠন বাণিজ্য ক্ষেত্রে ওঠবস করবে চীনের কথায়। চীনা ঋণের জালে জড়িয়ে যাবে একের পর এক দেশ। বাধ্য হবে বাণিজ্য ও স্ট্র্যাটেজিক স্বার্থে চীনকে জমি ব্যবহারে অনুমতি দিতে। অন্য দেশেও গড়ে উঠবে চীনের বেস। নামবে যুদ্ধবিমান। আর দ্বিতীয়ত, চারদিক থেকে ঘিরে ফেলা যাবে ভারতকে। তারপর জিনপিং ধীরে ধীরে গ্রাস করবেন উপমহাদেশের বাজার অর্থনীতি। ভারতের সার্বভৌমত্ব। যা জিনপিংয়ের অন্তর্নিহিত অভিপ্রায়। করোনা আবহে নেট দুনিয়ার মারাত্মকভাবে চলছে একটি শব্দবন্ধ—‘নিউ নর্মাল’। চীনও অর্ধেক দুনিয়াকে এমনই এক ‘নিউ নর্মাল কলোনি’তে পরিণত করার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে আসরে নেমেছে।
মোকাবিলা করছে ভারত। শহিদ হচ্ছেন সেনা জওয়ানরা। ৫০০ মিটারের মধ্যে দাঁড়িয়ে টক্কর দিচ্ছে ভারতের বাহিনী। আকাশসীমায় উড়ছে মিগ, সুখোই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সর্বদল বৈঠকে বলছেন, চীন আমাদের ভূখণ্ড অধিকার করেনি। তাহলে এই সীমান্ত-টেনশন কেন? বক্তব্য নিয়ে জলঘোলা হলে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে সাফাই-বিবৃতি দেওয়া হচ্ছে। আর তারপর মোদিজি ‘মন কি বাত’-এ বলছেন, আমাদের ভূখণ্ডে নজর দেওয়া লোকজনকে কড়া জবাব দেওয়া হয়েছে। বাস্তবটা কী? চীনের নামটা পর্যন্ত জনসমক্ষে মোদি কেন উচ্চারণ করছেন না? লাদাখে ঠিক কী হচ্ছে? এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর ধোঁয়াশায় ঢেকে রয়েছে। বিরোধীরা চেঁচামেচি করছেন—সঠিক চিত্রটা আমাদের দেখাতে হবে। কিন্তু বিজেপির নেতৃত্বাধীন সরকার তা করছে না। বরং খবর আসছে সেনা মোতায়েনের। তিন বাহিনীর হাঁকডাকের। অর্থটা কী? চীন কি সত্যিই ভারতের ভূখণ্ড অধিকার করেছে? আর সেটা যদি সত্যি হয়, তাহলেও কি ভারত শুধু হম্বিতম্বি করেই চুপ করে যাবে? জিনপিংয়ের কমিউনিস্ট সরকার যদি সত্যিই এমন কোনও ঘটনা ঘটিয়ে থাকে, তাহলে কিন্তু শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যাবে না। নরেন্দ্র মোদি মাল্লাপুরমে জি জিনপিংয়ে ডেকে দোলনায় দুলবেন, দু’দেশের ঐতিহ্যের বাণী শোনাবেন, আর তারপর চীন আমাদের জমি দখল করে নেবে... এই বিদেশনীতি তামাম ভারতবাসী মেনে নেবে না।
আর একটা সম্ভাবনা অবশ্য আন্তর্জাতিক মহলে এখন ঘোরাফেরা করছে। সেটা হল, নতুন অক্ষের জল্পনা। অস্ট্রেলিয়া, জাপান, আমেরিকা জোটবদ্ধ হচ্ছে চীনের বিরুদ্ধে। পাশে দাঁড়াচ্ছে ভারতের। কথাবার্তা চলছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে। আর এটা গুজব নয়। শত্রু বাড়ছে জিনপিংয়ের। অর্থনীতি হোক বা সমরশক্তি... আমেরিকা, জাপান, ইউরোপকে একসঙ্গে টক্কর দেওয়ার ক্ষমতা কি চীনের আছে? কারণ, যুক্ত হবে পরমাণু শক্তিধর ভারতও। বন্ধু পাকিস্তানকে দিয়ে আর যাই হোক, ভারত-আমেরিকাকে ঠেকানো যাবে না। খুব বেশি হলে করাচি বন্দর বা লাহোর এয়ারস্পেস ব্যবহার করবে চীন। সেটাও যথেষ্ট নয়। কারণ, এই সংঘাতে কোনও জোটসঙ্গী পাবে না বেজিং। কতদিন আর সাইবার সন্ত্রাস দিয়ে বিশ্বকে বোকা বানানো যাবে?
সহজ সত্য। অথচ সেটাই হেলায় উড়িয়ে, ক্ষমতার স্বপ্নে বুঁদ হয়েছেন জিনপিং। সমরসজ্জায়, প্রশিক্ষণে শত শত কোটি ডলার খরচ করছেন তিনি। কোটি কোটি মানুষ কিন্তু এখনও চীনে দারিদ্রসীমার নীচে বাস করেন। সেদিকে তাঁর নজর নেই। বরং জি জিনপিং একটা লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছেন। ২০৪৯ সাল। কমিউনিস্ট শাসনের শতবর্ষ। ওই বছরের মধ্যে শেষ হবে বেল্ট অ্যান্ড রোড। ওই বছরই বিশ্বে আধিপত্যের ছড়ি ঘোরাবে চীন... এটাই জিনপিংয়ের উচ্চাকাঙ্ক্ষা। আর একটা তারিখ মনে পড়ছে... ২৬ এপ্রিল, ১৯৮৬। সোভিয়েত সরকারের পতনের ইঙ্গিত নিয়ে এসেছিল চেরনোবিলে পারমাণবিক বিপর্যয়। আকাশ থেকে মাটিতে আছড়ে পড়ার মতো ছিল সেই পতন।
তারিখটা জিনপিং ভুলে যেতে পারেন। ঘটনাটা ভোলা উচিত নয়।