কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত পরিশ্রমে শারীরিক ও মানসিক কষ্ট। দূর ভ্রমণের সুযোগ। অর্থ প্রাপ্তির যোগ। যে কোনও ... বিশদ
আগামীকাল ২ অক্টোবর, গান্ধীজির ১৫০ বছর জন্মদিবস উপলক্ষে হাইকমান্ডের নির্দেশে প্রদেশ কংগ্রেসের সদর দপ্তর বিধান ভবনের সামনে একটি চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন সোমেনবাবুরা। তিনদিনের এই প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য প্রদেশ সভাপতি সিপিএম, আরএসপি, সিপিআই এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের শীর্ষ নেতৃত্বকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এদিন সকালে আলিমুদ্দিনে ফ্রন্টের এই প্রধান চার শরিক দলের নেতৃত্ব পূর্ব নির্ধারিত বৈঠকে বসে। দুর্গাপুজো শেষ হলেই ১০ থেকে ২০ অক্টোবর রাজ্যজুড়ে এনআরসি এবং জিনিসপত্রের আকাশছোঁয়া দামের ইস্যুতে প্রচার চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সেখানে। একই সঙ্গে বিমানবাবুরা ঠিক করেন, বিজেপি-তৃণমূলের বিরুদ্ধে সার্বিক ঐক্যের স্বার্থে সোমেনবাবুর আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে তাঁরা এদিন বিকেলে সদলবলে বিধান ভবন যাবেন গান্ধী প্রদর্শনী দেখতে।
সেইমতো বিকেলে প্রদর্শনী দেখতে সিপিএমের তরফে বিমানবাবু-সূর্যকান্তবাবুর পাশাপাশি বিধান ভবনে হাজির হন আরএসপির ক্ষিতি গোস্বামী-মনোজ ভট্টাচার্য, সিপিআইয়ের স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়-মঞ্জুকুমার মজুমদার এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের নরেন চট্টোপাধ্যায়-হাফিজ আলম সাইরানির মতো শীর্ষস্থানীয় বাম নেতারা। প্রদর্শনী দেখার পর সোমেনবাবুর ডাকে সাড়া দিয়ে তাঁরা এই প্রথমবার বিধান ভবনের তিনতলায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির ঘরে যান। সেখানে বাটিক প্রিন্টের উত্তরীয় পরিয়ে বাম নেতাদের স্বাগত জানান সোমেনবাবু। তারপর চলে চা খাওয়ার পর্ব। একদা প্রতিপক্ষের এভাবে পরিস্থিতির চাপে পড়ে কাছাকাছি আসার নয়া নজির তৈরিকে উভয় শিবির ঐতিহাসিক ঘটনা বলে বর্ণনা করে রুদ্ধদ্বার কক্ষে আলোচনা শুরু করে। সেখানে ধর্মনিরপেক্ষতা, সংবিধান রক্ষা এবং গণতন্ত্র বাঁচানোর ইস্যুতে নরেন্দ্র মোদি ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের বিরুদ্ধে হাতে হাত ধরে রাস্তায় নামার আশু প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন সকলেই। প্রদেশ দপ্তরে আসার জন্য কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করে বিমানবাবুদের উদ্দেশে প্রদেশ সভাপতি বলেন, এখন রাজ্য রাজনীতির যে অবস্থা তৈরি হয়েছে, তাতে আপনারা বা আমরা কেউই এককভাবে কিছু করে উঠতে পারব না। এই অবস্থায় গান্ধীজির বহুত্ববাদের তত্ত্বকে সামনে রেখে এখন ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্র রক্ষার লড়াই যৌথভাবেই করতে হবে। এ নিয়ে আমরা আমাদের দলের সব স্তরে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত করেছি। পাল্টা সূর্যবাবুও বলেন, আমাদের তরফেও এই আলোচনা হয়েছে। এই সব ইস্যুতে একসঙ্গে রাস্তায় নামতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। শেষমেশ অল্পক্ষণের এই বৈঠকে ঠিক হয়, পুজোর পর উভয় পক্ষের নেতৃত্ব ফের আলোচনায় বসে নির্দিষ্ট কর্মসূচি স্থির করবে।
পরে বিমানবাবু সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আমরা গান্ধীবাদী নই। কিন্তু স্বাধীনতা সংগ্রামে গান্ধীজির কিছু ইতিবাচক ভূমিকার কথা অস্বীকার করি না। বিশেষ করে সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে তাঁর অনেক পদক্ষেপ ছিল অবিস্মরণীয়। এমন একজন মনীষীর সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত চিত্র প্রদর্শনী দেখার জন্য আমন্ত্রণে সাড়া দিয়েছি আমরা। সেই সঙ্গে সোমেনবাবুর সঙ্গে চা খেতে গিয়ে কিছু কথাবার্তা হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রের প্রশ্নে একসঙ্গে পথে নামার ক্ষেত্রে উভয়পক্ষের কোনও অসুবিধা যে নেই, তা এই আলোচনায় উঠে এসেছে। তবে কবে, কোথায় আমরা একসঙ্গে পথে নামব, তা পরে আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হবে।