কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত পরিশ্রমে শারীরিক ও মানসিক কষ্ট। দূর ভ্রমণের সুযোগ। অর্থ প্রাপ্তির যোগ। যে কোনও ... বিশদ
পুজোর ছবির বাজারে আবারও পদচারণা করলেন বাঙালির প্রিয় গোয়েন্দা ব্যোমকেশ। এবারে নতুন পরিচালক— সায়ন্তন ঘোষাল। স্বভাবতই কাস্টিংয়ে বড়সড় রদবদল। ‘ব্যোমকেশ’ পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন ‘অজিত’ রুদ্রনীল ঘোষ। ছবির নাম ‘সত্যান্বেষী ব্যোমকেশ’। যেটি ‘মগ্ন মৈনাক’ গল্প অবলম্বনে তৈরি।
যাঁরা ব্যোমকেশের একনিষ্ঠ পাঠক, তাঁদের গল্পটি জানা। আর যাঁরা গল্পটি পড়েননি, তাঁদের উদ্দেশে বলতে হয় গোয়েন্দা ছবির গল্প বলতে নেই, তাতে রসভঙ্গ হয়। তবে, পরিবর্তনটা অবশ্যই আলোচনাযোগ্য। ‘স্বাধীনতা লাভের পর পনেরো বছর অতীত হইয়াছে...’ লাইনটি দিয়ে ‘মগ্ন মৈনাক’ গল্পটির শুরু। অর্থাৎ শরদিন্দুর এই গল্পটির প্রেক্ষাপট ১৯৬২ সাল। তবে, ‘যকের ধন’, ‘আলিনগরের গোলকধাঁধা’র পরিচালক তাঁর ‘সত্যান্বেষী ব্যোমকেশ’ ছবিতে গল্পটি ১৯৭১ সালে নিয়ে গিয়ে ফেঁদেছেন। এনেছেন এপার বাংলার নকশাল আন্দোলন এবং ওপার বাংলার মুক্তিযুদ্ধের অনুষঙ্গ। মূল গল্পে কংগ্রেসী নেতা (দলের নাম উল্লেখ না থাকলেও ইঙ্গিতে বোঝা যায়) সন্তোষ সমাদ্দার পরিবর্তিত হয়ে ছবিতে হয়েছে যুক্তফ্রন্ট সরকারের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী সন্তোষ দত্ত (সুমন্ত্র মুখোপাধ্যায়)। গল্পের পরিণতি মোটামুটি একই রাখলেও শিল্পীর স্বাধীনতা নিয়েছেন চিত্রনাট্যকার।
তবে, যেহেতু একটি বিশেষ সময়কে প্রেক্ষাপট করে গল্পটি এগিয়েছে তাই ইতিহাস রক্ষার দায়বদ্ধতা অবশ্যই পরিচালকের ছিল। ’৬৭ ও ’৬৯ সালে এ রাজ্যে যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠিত হয়েছিল। ’৭১ সালে মাস তিনেকের জন্য অজয় মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন একটি জোট সরকার গঠিত হয়েছিল। যেহেতু ছবির গল্পে সন্তোষ দত্তকে যুক্তফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রী দেখানো হয়েছে, তাই ধরে নিতে হয় ’৭১ সালের এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে গল্পটি দেখানো হচ্ছে। সন্তোষ দত্ত বার বার সামনে ভোটের কথা বলছেন। অথচ, ইতিহাস বলছে, ওই সরকারের পতন হয়েছিল রাষ্ট্রপতি শাসনের মাধ্যমে। এ রাজ্যে ১৯৭১ সালের ২৯ জুন থেকে ’৭২-এর ২০ মার্চ পর্যন্ত চলেছিল রাষ্ট্রপতিশাসন। আবার মন্ত্রীমশাইয়ের বাড়ির ছাদ থেকে গঙ্গা আর বালির ব্রিজ দেখা যায়। গঙ্গার ওপারে দক্ষিণেশ্বর মন্দির থেকে ভেসে আসে ঘণ্টাধ্বনি। তাহলে ধরে নিতে হয় সন্তোষ দত্তের বাড়ি হাওড়ার বালি অঞ্চলে। অথচ, এই বাড়ির নেংটি দত্ত নামে কিশোর মাঝে মধ্যে সিগারেট আর বইয়ের লোভে দক্ষিণ কলকাতার কেয়াতলায় ব্যোমকেশের বাড়িতে ঢুঁ মারতে যায়! এককথায় বললে ‘টাইম অ্যান্ড স্পেস’ বেশ গুলিয়েছে। আবার চোখের সামনে পড়ে থাকা গুলিবিদ্ধ আইবি অফিসারকে একবারও বাঁচানোর চেষ্টা হল না— এটাও ঠিক ব্যোমকেশসুলভ আচরণ নয়।
প্যান্ট-শার্ট পরা দৃশ্যগুলিতে পরমব্রতকে একটু কমবয়সি মনে হলেও ধুতি-পাঞ্জাবিতে তাঁকে ব্যোমকেশ চরিত্রে বেশ মানিয়েছে। রুদ্রনীলও যথাসাধ্য অজিত হওয়ার চেষ্টা করেছেন। এই জুটির ভবিষ্যৎ কী হয় দর্শক বলবেন। মন্ত্রীর সেক্রেটারি রবি বর্মার চরিত্রে অঞ্জন দত্ত যথাযথ। মন্ত্রীর চরিত্রে সুমন্ত্রও ভালো কাজ করেছেন। আবহসঙ্গীত ও সম্পাদনাও ঠিকঠাক। তবে, পুরো ছবিতে আগাগোড়া একটা সিফিয়া টোন রাখা হয়েছে। টাইটেল কার্ডও বেশ চমকপ্রদ। তবে, নতুন ‘টিম ব্যোমকেশ’ বক্সঅফিসের রহস্যভেদ করতে পারবেন কিনা, সেটা জনতা জনার্দনই বলবেন।