উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
শুনতে অবাক লাগলেও খোদ প্রথম বিশ্বের দেশ ইংল্যান্ডের ফ্যামিলি ফিজিশিয়ানরা নিজেদের রোগীদের সুস্থ রাখতে এমন কর্মসূচি নিতে শুরু করেছেন খুল্লমখুল্লাই। আর তা নিয়ে সারা পৃথিবীতে শুরু হয়েছে তুমুল চর্চা। আরও একটু খোলসা করা যাক। ইংল্যণ্ডের ওয়েলসে এই নিয়ে শুরু হয়েছে রীতিমতো একটি কর্মসূচি। কর্মসূচিটি হল, রোগীদের সুস্থ রাখার জন্য ওষুধের বদলে বিকল্পের খোঁজ। যেমন প্রেসক্রিপশনে লিখে দেওয়া হচ্ছে—‘যান, সাইকেল চালান’। সেখানকার কার্ডিফের দুটি হাসপাতাল রোগীদের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে এই দাওয়াই দিয়েছে। শুধু তাই নয়, রোগীদের সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট করে বিনামূল্যে সাইকেল চালানোর জন্য গ্রাহকও করা হচ্ছে। ভারত বা বাংলায় কি এ ধরনের বিষয় সম্ভব? বা কেউ কি লিখছেন? তেমন জটিল রোগ না হলে, শুধুমাত্র জীবনযাপনের পরিবর্তন করেই যদি রোগ সারানো যায়, সেই পন্থা কোনও প্রেসক্রিপশনের মতো আইনি কাগজে লেখার সাহস কি দেখাচ্ছেন কেউ? বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ আশিস মিত্র বললেন, কেন লিখব না? যদিও সত্যিই দেখি, রোগীর অসুখ তেমন জটিল নয়।
স্রেফ লাইফস্টাইলে একটু পরিবর্তন আনলেই অনেক ভালো থাকবেন—তাহলে কেন ফালুত ওষুধ লিখব? ডাঃ মিত্র বলেন, এই তো ক’দিন আগে এক রোগী আমার কাছে এলেন কনস্টিপেশনের সমস্যা নিয়ে। আমি তো কোনও ওষুধ লিখিনি। বললাম, ছানার জল খান। লিখতেও সমস্যা নেই। অনেক সময়ই স্রেফ ব্যায়াম করার কথা বলি। সাঁতার সম্ভব হলেও তাও করতে বলি। হ্যাঁ, সেকথা লিখিও।
আশিসবাবু বললেন, কিছুদিন আগে এক রোগী ঘুমের সমস্যা নিয়ে এসে বললেন, ডাক্তারবাবু, আমায় ভালো ঘুমের ওষুধ লিখে দিন। আমি কিন্তু, স্পষ্টাস্পষ্টি বললাম, বিদেশ হলে কিন্তু ঘুমের ওষুধ ডাক্তাররা লিখতেন না। ওখানে ওইভাবে ঘুমের ওষুধ পাওয়াও যায় না। আসলে, কিছু না লিখলে রোগীর মনস্তত্ত্বে আঘাত পড়বে। তিনি অন্য ডাক্তারের কাছে চলে যাবেন। পসার নষ্ট হবে— এই ভেবে বহু চিকিৎসক ওষুধ লেখেন। যদিও প্রবীণ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ সুকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, ইংল্যান্ডের ওই প্রেসক্রিপশনকে আমি অতি আধুনিক প্রেসক্রিপশনই বলব। মনে রাখতে হবে, প্রেসক্রিপশন একটি মেডিকো লিগাল নথি। শুধু সাইকেল চালান, বা সাঁতার কাটুন ইত্যাদি লেখা ঝুঁকির হতে পারে। অন্তত এ দেশে তো বটেই। আমিও এসব অনেক সময় রোগী বুঝে লিখি বটে, তবে পাশাপাশি ওষুধও থাকে।
যদিও ভিন্নমত প্রাক্তন ফার্মাকোলজি’র অধ্যাপক এবং রাজ্যের প্রাক্তন স্বাস্থ্য অধিকর্তা (শিক্ষা) ডাঃ সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, এইখানেই গোলমাল। সারা পৃথিবী যখন রেজিস্ট্যান্সের ভয়ে, সুপারবাগের ভয়ে মুড়িমিছরির মতো অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে লাগাম টানছে, সেখানে আমরা এখনও কিছু ওষুধ লিখতেই হবে ভেবে, ওষুধ দিয়ে যাচ্ছি অনেক সময়। হয়ত বহুক্ষেত্রে ওষুধ লেখারই প্রয়োজন নেই। সকালে হাঁটুন বা সাইকেল চালান, বা সাঁতার কাটুন বা লিফট ছেড়ে সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করুন বা কায়িক পরিশ্রম বাড়ান— ইত্যাদি নিদান দিলে এবং সেগুলি মানলেই যেখানে ভালো কাজ হতে পারে, সেখানে আমরা অতিরিক্ত পরিমাণ ওষুধনির্ভর হয়ে আছি। আমার মত যদি বলেন, সঠিক করছেন ইংল্যান্ডের ডাক্তাররা। এর ফলে অহেতুক ওষুধ খাতে কত খরচ বাঁচে বলুন তো?