উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
টিকিট বিক্রিতে অনিয়মের অভিযোগ পরিবহণ নিগমের অন্দরে দীর্ঘদিন। তার জন্য রাজ্য সরকার রাজস্ব ক্ষতির মুখেও পড়ে। নিগম কর্তাদের একাংশের অভিযোগ, অনেক সময়ই যাত্রীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে টিকিট না দিয়েই কম ভাড়া নেওয়া হয়। অনেক সময় আবার কম মূল্যের টিকিটও ইস্যু করা হয়। এই ‘রেওয়াজ’-এ শামিল বাসচালকদের একাংশও। বেনিয়মে আদায় করা টাকা রাখার জন্য এতদিন ‘সেফ কাস্টডি’ ছিলেন তাঁরাই। কারণ, এতদিন চালকদের ব্যক্তিগত টাকার খতিয়ান নেওয়া হত না। লোকসভা ভোটের আগেই পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ নিগমের এমডি নারায়ণ স্বরূপ নিগম নিজে একজনকে ধরেছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়।
এই প্রবণতা বন্ধ করতেই নতুন নির্দেশিকা জারি হয়। সিএসটিসি, সিটিসি এবং ভূতল পরিবহণ মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ নিগম তৈরি হলেও এতদিন কন্ডাক্টরদের ‘ব্যাগ মানি’ এবং ‘পার্সোনাল মানি’র নিয়মে সামঞ্জস্য ছিল না। এবার পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ নিগমের প্রত্যেক চালক-কন্ডাক্টরকে একটি নির্দিষ্ট নিয়মের অধীনে আনা হল। প্রথমে জারি করা সার্কুলারে বলা হয়েছিল, চালক এবং কন্ডাক্টর উভয়ই ব্যক্তিগত ৫০ টাকার বেশি নিজের কাছে রাখতে পারবেন না। সে নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ শুরু হওয়ায় পরবর্তী সার্কুলারে টাকার পরিমাণ বাড়িয়ে ১০০ করা হয়। দূরপাল্লার বাসের ক্ষেত্রে যা করা হয়েছে ২০০ টাকা। তাতেও অবশ্য ক্ষোভের প্রশমন হয়নি। নিগম কর্তারা অবশ্য দাবি করছেন, সামগ্রিক পরিস্থির কথা বিবেচনা করে ‘ব্যাগ মানি’ এবং ‘পার্সোনাল মানি’র পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। এসি বাসের কন্ডাক্টররা টিকিট কাটার জন্য ‘ব্যাগ মানি’ হিসেবে নিতে পারবেন ২০০ টাকা করে। নন-এসি বাসের ক্ষেত্রে তা ১০০ টাকা। নিগম সূত্রের খবর, ভাড়া কাটায় বেনিয়ম এড়াতে চেকিং ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হচ্ছে। বিভিন্ন রুটে যাত্রীদের থেকেও ফিডব্যাক নেওয়া হচ্ছে। নিগমের এক কর্তা বলেন, দরকারে কড়া ব্যবস্থা নেব আমরা। নিগমের রাজস্ব ক্ষতি মেনে নেওয়া হবে না।
যদিও বাসকর্মীরা এই নির্দেশিকা নিয়ে এখনও ক্ষুব্ধ। এসি বাসের এক কন্ডাক্টর মঙ্গলবার বলেন, ‘ফার্স্ট ট্রিপের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সমস্যা। দিনের শুরুতে আমাদের পাঁচ টাকার কয়েনে মোট ২০০ টাকা খুচরো দেওয়া হয়। এবার বাসে উঠতেই যাত্রীরা ১০০ টাকা, ২০০ টাকা, ৫০০ টাকার নোট ধরিয়ে দেন। ৩৫ টাকার টিকিট কেটে ব্যালেন্স আপনাকে যদি ৫ টাকার কয়েনে দেওয়া হয়, আপনি নেবেন? যদিও বা প্যাসেঞ্জার নেন, আমাদের খুচরোও শেষ হয়ে যাবে। তখন কী করব? আগে আমরা নিজেদের টাকা থেকে খুচরো দিতাম। এখন ১০০ টাকা নিয়ে বেরতে হয়। সারা দিনের খাওয়া খরচই ওঠে না। খুচরো দেব কীভাবে?’ বেশি ক্ষোভ অবশ্য চালকদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চালক বলছিলেন, ‘আমাদের ৮০ শতাংশ ড্রাইভার এখন বাইরে থেকে এসে কাজ করে। কেউ ক্যানিং থেকে, কেউ লিলুয়া থেকে...। ছ’দিন-সাতদিন ডিপোয় থেকে একটা ছুটির দিন বাড়ি যায়। আমরা টাকা কোথায় রাখব? কর্তাদের বলেছি। যদি আমাদের টাকা রাখতে দেওয়া না হয়, তাহলে মামলাতেও যেতে পারি।’