নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: দুই প্রার্থীর বিরুদ্ধে এফআইআর, তিন প্রিসাইডিং অফিসারকে সরানো, এক প্রার্থীকে শো-কজ, কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ, মারামারির অভিযোগ, তার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ—এসবের মধ্যে দিয়েই পঞ্চম দফার ভোট পার করল নির্বাচন কমিশন। তবে এবার কমিশনের সব থেকে মাথাব্যথা ছিল বারাকপুর নিয়ে। গত কয়েকদিন বারাকপুর নিয়েই সব থেকে বেশি অভিযোগ এসেছে কমিশনে। এদিন ভোট শুরু হতেই অভিযোগের পর অভিযোগে জেরবার হতে হয় কমিশনকে। তবে অভিযোগ আসা মাত্রই ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলা নির্বাচনী আধিকারিকদের। খানিক বাদে সেই ঘটনা সম্পর্কে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তাও জানতে চাওয়া হয় জেলা প্রশাসনের কাছে। এমনকী, টিভি চ্যানেলে যেসব ঘটনা দেখানো হয়েছে, তা দেখেও ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে সকালের দিকে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ আসে ইভিএম বিকল নিয়ে। এদিন ২০৬টি ভিভিপ্যাট বিকল হয়। ব্যালট ইউনিট খারাপ হয় ৬০টি। ভোট শেষে এক সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক আরিজ আফতাব রাজ্য পুলিসের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) সিদ্ধিনাথ গুপ্তাকে পাশে বসিয়ে জানিয়ে দেন, কয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া মোটের উপর ভোট শান্তিপূর্ণ হয়েছে।
এদিন সাতটি লোকসভা কেন্দ্রে পাঁচটি এফআইআর হয়েছে বলে জানিয়েছেন এডিজি আইনশৃঙ্খলা। তিনি বলেন, ৪২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার মধ্যে নির্দিষ্ট কেসে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জগদ্দল থেকে একটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। ১২ জন আহত হয়েছেন। তার মধ্যে সংবাদমাধ্যমের পাঁচজন রয়েছেন। সংবাদমাধ্যমের পাঁচটি গাড়ি ভেঙেছে। হুগলির বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায় এবং বারাকপুরের বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিংয়ের বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে।
গত ক’দিন ধরেই এই দফার ভোটকে ঘিরে প্রবল উত্তেজনা ছিল। এই পর্বের ভোটে বহিরাগতদের নিয়ে আসা হয়েছে বলে কমিশনের পুলিস পর্যবেক্ষক বিবেক দুবের কাছে অভিযোগ জমা পড়ে। এমনকী ভিনরাজ্য থেকেও বাহুবলি এসেছে বলে বারাকপুর থেকে কমিশনে অভিযোগ জমা পড়ে। কমিশনের নির্দেশে রবিবার গভীর রাতে বারাকপুর এলাকার বিভিন্ন হোটেল, রিসর্ট, আবাসনে তল্লাশি চালায় পুলিস। সেখান থেকে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়। এদিন সকাল থেকেই বারাকপুরে উত্তেজনার পারদ চড়তে থাকে। সকালে মোহনপুরে গিয়ে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন অর্জুন সিং। গণ্ডগোলে তাঁর মুখ ফেটে যায়। সেখানে অজিত দাস নামে এক ব্যক্তি অর্জুন সিংয়ের বিরুদ্ধে এফআইআর করেন। এছাড়া ধনেখালির একটি বুথে ইভিএম ভাঙচুরের অভিযোগে বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। তাঁর গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় পাল্টা এফআইআর হয়েছে বলে এডিজি আইনশৃঙ্খলা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, গয়েশপুর, উলুবেড়িয়া ও হাওড়ায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে অভিযোগ এসেছে। এ ব্যাপারে বিএসএফের আইজি’কে ডেকে সতর্ক করা হয়েছে।
মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক জানিয়েছেন, তারকেশ্বরের ১১০ নং বুথে অভিযোগের ভিত্তিতে প্রিসাইডিং অফিসারকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। হাওড়ার ২২৬ নম্বর বুথে প্রিসাইডিং অফিসারকে মারধর করা হয়েছে। সেখানে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। ঠাকুরনগরের ৯৭ নং বুথে বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুর দলীয় প্রতীক সহ উত্তরীয় পরে বুথে ঢোকায় সেখান থেকে প্রিসাইডিং অফিসারকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। হিংলিতে বোমাবাজির ঘটনা ঘটেছে। দু’জন আহত হয়েছেন। তার মধ্যে একজন কনস্টেবল রয়েছেন। সব মিলিয়ে ১৪টি ঘটনা ঘটেছে। সবক’টির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।