বিতর্ক-বিবাদ এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। প্রেম-পরিণয়ে মানসিক স্থিরতা নষ্ট। নানা উপায়ে অর্থোপার্জনের সুযোগ।প্রতিকার: অন্ধ ব্যক্তিকে সাদা ... বিশদ
২০০৩ সালের ৭ জুলাই লালগ্রহের উদ্দেশে রওনা হয়েছিল ‘অপরচুনিটি’। বৈজ্ঞানিক নাম ‘মার্স এক্সপ্লোরেশন রোভার’। বিজ্ঞানীরা আদর করে ডাকতেন ‘ওপি’ বলে। পরের বছর ২৫ জানুয়ারি মঙ্গলের ‘মেরিডিয়ানি প্লেনাম’-এ নামে সে। তার পর থেকে নাসাকে একের পর এক তথ্য পাঠিয়েছে ‘অপরচুনিটি’। সেইসঙ্গে বিভিন্ন নৈসর্গিক ছবি। একাধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার সঙ্গে মাটির গভীরে জলের অস্তিত্ব খুঁজেছে।
এই ‘অপরচুনিটি’ই নিশ্চিত করে পৃথিবীবাসীকে জানিয়েছিল, এক সময়ে জলের ধারা বইত লাল-মাটির উপর দিয়ে। কখনও সে অনুসন্ধান চালিয়েছে ভিক্টোরিয়া ক্রেটারে, তো কখনও এনডেভার ক্রেটারে। কিন্তু, ২০১১ সালে এক ভয়ানক ধুলোঝড়ের মুখে পড়তে হয় মঙ্গলযানটিকে। সে বার সামলে উঠলেও গত বছর আর ধাক্কা সামলাতে পারেনি সে। গত বছরের জুনে ধুলোঝড়ের কথা শেষবারের মতো জানিয়েছিল ওপি। কিন্তু, তারপর থেকে আর খোঁজ নেই। যদিও, গত আট মাসে হাল ছাড়েনি নাসার কর্তা-ব্যক্তিরা। অবশেষে ১৩ ফেব্রুয়ারি নাসার ‘সায়েন্স মিশন ডিরক্টরেট’-এর অন্যতম শীর্ষকর্তা টমাস জার্বুচেন সাংবাদিক বৈঠকে ঘোষণা করেন, ‘অপরচুনিটি আর নেই। প্রায় ১৫ বছর ধরে মঙ্গল আর পৃথিবীর মধ্যে যোগাযোগের অন্যতম সেতু হিসেবে কাজ করার পর অপরচুনিটি চলে গিয়েছে শেষ ঘুমে। অভিযান শেষ হয়েছে তার।’
গত বছরের জুনেই পাসাডেনায় নাসার জেট প্রোপালসান ল্যাবরেটরি (জেপিএল)-র সঙ্গে শেষ বারের মতো কথাবার্তা হয়েছিল অপরচুনিটির। তারপর সেই ভয়ঙ্কর ঝড় ওঠে মঙ্গলে। অপরচুনিটি ছিল তখন মঙ্গলের প্রেজারভেন্স উপত্যকায়। সেই ধুলোঝড়েই ‘অন্ধ’ হয়ে যায় রোভার অপরচুনিটির ক্যামেরা, সিগন্যাল রিসিভার ও সেন্ডার যন্ত্রগুলি। তখন থেকে এ বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ১ হাজারটি সিগন্যাল পাঠানো হয়েছিল অপরচুনিটিকে। কখনও আদরের নাম ‘ওপি’ ডেকে বলা হয়, ‘জেগে ওঠো। সাড়া দাও, প্লিজ।’ আবার কখনও বলা হয়, ‘হাই ওপি, হাই... হ্যালো’। কিন্তু, আর সাড়া দেয়নি অপরচুনিটি।
মঙ্গলের মাটিতে পা দেওয়ার পর নাসার বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন, খটখটে, রুক্ষসূক্ষ লাল গ্রহে খুব বেশি ৯০টি দিন (মঙ্গলের দিন) টিকে থাকতে পারবে অপরচুনিটি। কিন্তু, যাবতীয় জল্পনা-কল্পনার হিসেব ওলটপালট করে দিয়ে মঙ্গলে ৫ হাজার দিন (মঙ্গলের দিন) হেঁটে-চলে বেড়িয়েছে অপরচুনিটি। এখনও পর্যন্ত মঙ্গলের বুকে আর কোনও রোভারের এত দীর্ঘদিন সক্রিয় থাকার রেকর্ড নেই। সেই নজির গড়েছে অপরচুনিটি। আর সেকারণেই অপরচুনিটির স্মৃতিতে বিভোর বিজ্ঞানীকুল। মঙ্গলযানের প্রাক্তন ফ্লাইট ডিরেক্টর মাইক সেবার্ট ওপিকে ‘কুইন’ আখ্যা দিয়েছেন। ট্যুইটে লিখেছে, ‘মঙ্গলের রানির জয় হোক!’ অপরচুনিটির মৃত্যুর পর মঙ্গলের মাটিজুড়ে এখন শুধুই ‘মিস কৌতূহল’। কেননা ২০১২ সালে লালগ্রহে পৌঁছয় নাসার আর এক মঙ্গলযান ‘কিউরিয়োসিটি’।
দেবজ্যোতি রায়