বিতর্ক-বিবাদ এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। প্রেম-পরিণয়ে মানসিক স্থিরতা নষ্ট। নানা উপায়ে অর্থোপার্জনের সুযোগ।প্রতিকার: অন্ধ ব্যক্তিকে সাদা ... বিশদ
গত মার্চ মাসে জেলা সফরে এসেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি প্রশাসনিক বৈঠকে রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দালাল রাজের প্রসঙ্গ তোলেন। দালাল রাজ বরদাস্ত করা হবে না বলে সেসময় কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তিনি। তারপরই টনক নড়ে প্রশাসনের। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দালাল ধরতে তৎপর হয়ে ওঠে জেলা প্রশাসন। ময়দানে নামানো হয় সিআইডিকে। কয়েকজন দালালকে গ্রেপ্তারও করা হয়। কিন্তু, দালাল রাজ বন্ধ করা যায়নি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। বৃহস্পতিবারের ঘটনা তারই জলজ্যান্ত প্রমাণ।
জানা গিয়েছে, পেশায় দিনমজুর গোলাম সাবিরের শিশু সন্তান এসএনসিইউ বিভাগে ভর্তি ছিল। এদিন শিশুটিকে ছুটি দেওয়া হয়। এদিন সকালে হাসপাতাল থেকে ছুটি পাওয়ার আগে এক ‘দালাল’ গোলামের কাছে ২০০ টাকা চায়। টাকা নেওয়ার সময় তাকে হাতেনাতে ধরে ফেলে অন্যান্য রোগীর পরিবারের লোকজন। তাকে মারধর করা হয়। পরে পুলিস এসে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। গোলামের অভিযোগ, আমার স্ত্রী ফোন করে ডেকেছিল ছুটি দেওয়া হবে বলে। তখন এক দালাল এসে ২০০ টাকা চায়। আমি টাকা দিয়েও দিই। এরপর অন্যান্য লোক এসে তাকে পাকড়াও করে। গোলাম বলেন, আমরা গরীব মানুষ। ২০০ টাকা আয় করতে হলে সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনি খাটতে হয়। দালালদের এই অত্যাচার বন্ধ হোক।
অন্যান্য রোগীর আত্মীয়দের অভিযোগ, এই হাসপাতালে দালালদের টাকা না দিলে রোগীর ছুটি হয় না। এটাই অলিখিত নিয়ম। টাকা না দিলে রোগীর পরিবারের লোকজনকে হেনস্থার মুখে পড়তে হয়। রোগীকে বাইরে নেওয়া যাবে না বলেও হুমকি দেওয়া হয়।
এদিকে যার বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অভিযোগ সে নিজেকে ‘কর্মবন্ধু’ বলে পরিচয় দিয়েছে। সে নাকি হাসপাতালেই থাকে। স্বাস্থ্য কর্তারা জানান, হাসপাতালে কর্মবন্ধু বলে কোনও স্থায়ী বা অস্থায়ী স্বাস্থ্যকর্মী নেই। অভিযুক্ত ব্যক্তি টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছে। সে বলে, আমি বকশিস চেয়েছিলাম। অনেক রোগীর পরিবারের লোকজন নিজে থেকেই মিষ্টি খাওয়ার জন্য ১৫০ বা ২০০ টাকা বকশিস দেয়। কারও কাছ থেকে জোর করে টাকা নেওয়া হয় না।
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে রোগীদের বিভিন্ন নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে দালালরা এখনও সক্রিয়। এই দালালদের সঙ্গে একাংশ নার্সিংহোম মালিকদের আঁতাত রয়েছে। রোগী পিছু মোটা অঙ্কের টাকা পায় এই দালালরা। দিনে একটা বা দুটো রোগী নার্সিংহোম নিয়ে যেতে পারলেই দালালদের কেল্লা ফতে। দালালদের সঙ্গে যেসব নার্সিংহোম মালিকদের গোপন আঁতাত রয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয় না কেন প্রশাসন? প্রশ্ন উঠেছে।
রায়গঞ্জ গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডাঃ দিলীপকুমার পাল বলেন, এই হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে দালালদের গতিবিধি রয়েছে বলে শুনেছি। এই দালাল চক্র যাতে শেষ করা যায়, তার জন্য উদ্যোগী হয়েছি আমরা। মুখ্যমন্ত্রী সমর্থন দিয়েছেন। আগামী দিনে আরও দালাল ধরা পড়বে। হাসপাতালের কোনও স্বাস্থ্যকর্মী যদি যুক্ত থাকেন, তিনিও শাস্তি পাবেন।