কর্মে সাফল্য ও সুনাম বৃদ্ধি। ব্যবসায় অগ্রগতি ও প্রসার। অর্থাগম যোগ শুভ। স্বাস্থ্য বিশেষ ভালো ... বিশদ
এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ কমিশনের চেয়ারম্যান শুভাপ্রসন্নকে জানান, পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও আই লিড ফাউন্ডেশন যৌথ উদ্যোগে কাজটি করবে। পিপিপি মডেলে বাড়িটিতে একটি বুটিক হোটেল ও মিউজিয়াম করা হবে। মিউজিয়ামে ক্যানিংয়ের সময়ের দর্শনীয় ও ঐতিহাসিক জিনিসপত্র, ছবি ইত্যাদি ঠাঁই পাবে। এতে পর্যটকদের আসা যাওয়া বাড়বে এবং ঐতিহাসিক সৌধটিরও সংরক্ষণ হবে। বর্তমানে বাড়িটির চতুর্দিক পরিষ্কার করে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরার কাজ চলছে। তবে মূল কাজ শুরু হতে সময় লাগবে। শুভাপ্রসন্ন জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের একটি চিঠি পেলেই কাজ শুরু হয়ে যাবে। তবে বাড়িটিকে নিয়ে বিতর্কও রয়েছে। বাড়িটির সামনে একটি ধাতব ফলক বসিয়ে তাতে লেখা হয়েছে, বাড়িটিতে লর্ড ক্যানিং এসে বেশ কয়েকবার রাত্রিবাস করেছিলেন। কিন্ত এই তথ্যের সম্পূর্ণ বিপরীত মত পোষণ করছেন সুন্দরবনের ইতিহাস নিয়ে চর্চাকারী মানুষরা।
পেশায় ইতিহাসের শিক্ষক ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সুন্দরবনের রাজনীতি নিয়ে ডক্টরেট করা স্বপনকুমার মণ্ডল দ্বর্থ্যহীন ভাষায় জানালেন, প্রামাণ্য নথিপত্র থেকে জানা যায়, বাড়িটি তৈরি হয়েছিল ১৮৮০ সালের পরে। লর্ড ক্যানিং মারা যান লন্ডনে ১৮৬২ সালে। ফলে এই বাড়িটিতে ক্যানিংয়ের এসে থাকার কোনও সম্ভাবনাই নেই। ওঁর মতে এই বাড়িটি ছিল পোর্ট ক্যানিং কোম্পানির কাছারিবাড়ি। তবে পোর্ট ক্যানিং কোম্পানি আরও দুটি বাড়ি এই অঞ্চলে তৈরি করেছিল। সে দুটি আজ আর নেই। তার মধ্যে একটি বাড়ি গোলবাড়ি হিসেবে পরিচিত ছিল। সেই বাড়িতে লর্ড ক্যানিংয়ের বসবাসের সম্ভাবনা থাকলেও থাকতে পারে। কারণ ১৮৬০ সাল নাগাদ লর্ড ক্যানিং বেশ কয়েকবার এখানে এসেছিলেন। তবে তিনি বলেন, এই বাড়িটিতে সম্ভবত রবীন্দ্রনাথ এসে একরাত ছিলেন। হ্যামিল্টনের সাহেবের আমন্ত্রণে গোসাবা যাওয়ার পথে ১৯৩২ সালের ২৯ ডিসেম্বর ক্যানিং স্টেশনে এসে নেমেছিলেন তিনি। একরাত ক্যানিংয়ে থেকে পরদিন ভোরে স্টিমারে চেপে রওনা দিয়েছিলেন তিনি। তখন রবীন্দ্রনাথের থাকার মতো ওই একটি বাড়িই ছিল। ওইদিন ক্যানিং ডেভিড সেসুন হাইস্কুলে তাঁকে সংবর্ধনাও দেওয়া হয়।
লর্ড ক্যানিং ছিলেন ব্রিটিশ শাসিত ভারতের প্রথম ভাইসরয়। তিনি চেয়েছিলেন মাতলা নদীতে একটি বিকল্প বন্দর তৈরি করতে। যেটি সিঙ্গাপুরের সমকক্ষ হয়ে উঠবে। সেই মতো সমস্ত পরিকাঠামো তৈরি করা হয়। ১৮৬২ সাল থেকে বেলেঘাটা থেকে ক্যানিং পর্যন্ত রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। কিন্তু ১৮৬৭ সালে এক প্রলয়ঙ্কর ঝড়ে ক্যানিং বন্দর ধ্বংস হয়ে যায়। বন্দরের পরিকল্পনা ভেস্তে গেলেও ‘দি পোর্ট ক্যানিং অ্যান্ড ল্যান্ড ইমপ্রুভমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড’ নামে সংস্থাটি চাল, মধু ও কাঠের ব্যবসা চালিয়ে যায়। গোটা সুন্দরবন এলাকার ইজারাদার ছিল ওই সংস্থা।
তবে ইতিহাস যাই বলুক তথাকথিত ক্যানিং হাউসের সংরক্ষণ ও উন্নয়নের খবরে খুশি গোটা ক্যানিং মহকুমার মানুষ। স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ী পলাশ হক বলেন, ক্যানিং শহর সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত। এখানে এরকম উদ্যোগে স্থানীয় মানুষের অর্থনৈতিক হাল ফিরবে। তিনি এ জন্য বিধায়ককে ধন্যবাদ জানান।