পানাজি: ভারতের ক্ষুদ্রতম রাজ্য পর্তুগিজ শাসন থেকে মুক্ত হয়েছিল ১৯৬১ সালে। গোয়ার এই ঔপনিবেশিক অতীত তাকে ভারতের আর পাঁচটা রাজ্যের থেকে আলাদা করে তুলেছে। স্বতন্ত্রও। অবশ্য কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে রাজ্যের স্বীকৃতি পেতে তাকে অপেক্ষা করতে হয় আরও ২৬ বছর। ১৯৮৭ সালে গোয়াকে রাজ্য হিসেবে ঘোষণা করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে গোয়ার রাজনৈতিক পটভূমি। রাষ্ট্রপতি শাসন, রাজনৈতিক দলের থেকে প্রত্যাশা পূরণ না হওয়া, পছন্দের নতুন দলে ভরসা রাখা—সব মিলিয়ে রাজ্য বারংবার রাজনীতির পট পরিবর্তনের সাক্ষী থেকেছে এই রাজ্য।
শুরুটা অবশ্য হয়েছিল কংগ্রেসের হাত ধরেই। পরে সেই কংগ্রেস ভেঙে তৈরি হয় গোয়া পিপলস কংগ্রেস। সঙ্গে আরও কয়েকটি আঞ্চলিক দলের অভ্যুত্থান। পায়ের নীচে মাটি শক্ত করতে ঝাঁপিয়ে পড়ে বিজেপিও। বিধানসভা ভোটে গোয়ার ছবিটা কিছুটা আলাদা। জমি খুঁজতে লড়াইয়ে নামে দেশের একাধিক আঞ্চলিক দলগুলি। লোকসভা ভোটের ছবিটা অবশ্য আলাদা। এবারে মূল লড়াই কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে।
ঝুলিতে মাত্র দু’টি আসন। গোয়া উত্তর এবং গোয়া দক্ষিণ। ২০১৪ সালে মোদি ঝড়ে দু’টি আসনেই জিতেছিল বিজেপি। উনিশে গোয়া দক্ষিণ ছিনিয়ে নেন কংগ্রেসের ফ্রান্সিস সার্ডিনহা। এবার কী হবে? আগামী ৭ মে গোয়ায় ভোটগ্রহণ। তার আগে অবশ্য গোয়ার হিন্দু ঐতিহ্য উস্কে মেরুকরণের খেলা শুরু করেছে বিজেপি। জবাবে কংগ্রেসের অস্ত্র ধর্মনিরপেক্ষতা ও ডাবল ইঞ্জিন সরকারের ব্যর্থতা।
গোয়া দক্ষিণ আসনে শিল্পপতি শ্রীনিবাস ডেম্পোর স্ত্রী পল্লবী ডেম্পোকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। ভোট বৈতরণী পেরতে মরিয়া গেরুয়া শিবিরের ভরসা ‘মোদি গ্যারান্টি’। সঙ্গে জুড়েছে ডাবল ইঞ্জিন সরকারের ‘বিকশিত ভারত’ স্লোগানও। কংগ্রেস অবশ্য জোর দিচ্ছে স্থানীয় ইস্যুতেই। বিজেপির বিরুদ্ধে ‘গণতন্ত্র ও সংবিধান’ বাঁচানোর ডাক দিয়েছেন দক্ষিণ গোয়ার কংগ্রেস প্রার্থী ভিরিয়াতো ফার্নান্দেজ। দক্ষিণ গোয়ার নুভেম বিধানসভায় নাগরিকদের একটি বড় অংশ হলেন পর্তুগিজ। তাঁদের দ্বৈত নাগরিকত্বের দাবি দীর্ঘদিনের। এই নাগরিকত্ব না থাকার কারণে পর্তুগিজ চাকরি পাওয়া থেকে তাঁরা বঞ্চিত বলে দাবি কংগ্রেস প্রার্থীর। আঞ্চলিক দল রেভোলিউশনারি গোয়ানিজ পার্টি (আরজিপি) থেকে প্রার্থী হয়েছেন রবার্ট পেরেরা। 
গোয়া উত্তর আসনে পাঁচবারের সাংসদ ও বর্ষীয়ান নেতা শ্রীপদ নায়েককে প্রার্থী করেছে বিজেপি। তাঁর বিরুদ্ধে কংগ্রেস টিকিট দিয়েছে রমাকান্ত খালাপকে। হাত শিবিরের দাবি, বিজেপি শাসনে রাজ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে ভীতি বাড়ছে। মারগাঁও বন্দরের বেসরকারিকরণ হয়েছে। বেড়েছে বেকারত্বও। গোয়ার লাইফলাইন মহাদেই নদীর জল ভাগাভাগি নিয়ে কর্ণাটকের সঙ্গে দ্বন্দ্ব গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। প্রচারে সেই বিষয়টিকেও হাতিয়ার করেছে কংগ্রেস। এই আসনে আরজিপি থেকে প্রার্থী হয়েছেন মনোজ পরব।
সাগরপাড়ের রাজ্যে শুরু হয়েছে ‘টাকার খেলা।’ কমিশন জানিয়েছে, গত ১ মার্চ থেকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত ১৫ কোটি টাকার বেশি নগদ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সব প্রলোভন এড়িয়ে গোয়ার রায় কোন দিকে, উত্তর মিলবে ৪ জুন।