কর্মপ্রার্থীরা বেশ কিছু সুযোগের সংবাদে আনন্দিত হবেন। বিদ্যার্থীরা পরিশ্রমের সুফল নিশ্চয় পাবে। ভুল সিদ্ধান্ত থেকে ... বিশদ
নেট-নাগরিকরা প্রায় সকলেই মেনে নিয়েছেন, ডাকহরকরার পরিচিত ক্যানভাসে সিভানের ছবি আঁকা যাবে না। কারণ, তাঁর গ্রাম থেকে কুন্নুরের হিলগ্রোভ পোস্ট অফিসের দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার। সিভানের কাছে হেঁটে এতটা পথ পেরোনো দুর্গম অভিযান। পাহাড়ি রাস্তা পেরোলেই ঘন জঙ্গল। হাতি, বাঘ, ভালুকের নিরাপদ আস্তানা। প্রায়ই হিংস্র জন্তুর মুখোমুখি হতে হয়েছে তাঁকে। তাড়া খেয়েছেন বহুবার। কিন্তু থেমে থাকেননি সিভান। কর্তব্যের টানে ছুটেছেন। সামনে এবড়োখেবড়ো পথ। জলপ্রপাত, খরস্রোতা নদী। অবলীলায় সিভান ডিঙিয়েছেন সবকিছু। এবার তাঁর চোখে পড়ে নীলগিরি পাহাড়ের রেললাইন। এই ট্র্যাক ধরেই তিন দশক হেঁটেছেন সিভান।
পোস্ট অফিসে পৌঁছতেই কাঁধে ঝোলানো স্লিং ব্যাগ নিমেষে বোঝাই হয়েছে চিঠিপত্রে। এরপর খানিক বিশ্রাম। ব্যাগে আলতো চাপড় মেরে ফের বেরিয়ে পড়া। প্রত্যন্ত গ্রামে ঘুরে ঘুরে বিলি করা চিঠিপত্র। কারও পেনশনের চিঠি। কারও চাকরির কল লেটার। বিদেশে কর্মরত ছেলের চিঠি মা’কে। ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’র বহু দূরে থাকা এ এক অন্য ভারতবর্ষ। সিভান এতদিন সেই ভারতেই ‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’ ছিলেন। আবার ফেরি করেছেন দুঃস্বপ্নের বার্তাও! সিভানের কাঁধে ঝোলানো ব্যাগে স্বপ্ন-দুঃস্বপ্নের পরিচয় যে একটাই—সবই ‘চিঠি’।
সেই ব্যাগ আর ছোঁবে না সিভান। গত সপ্তাহে তাঁর কাদামাখা জুতো আর ব্যাগ চিরতরে র্যাকে তুলেছেন তিনি। আর প্রাণ হাতে পথে বেরোতে হবে না তাঁকে। এখন সিভানের অখণ্ড অবসর। তাঁর এই অবসরের মুহূর্তকে রঙিন করে তুলেছেন নেটিজেনদের একটা বড় অংশ। কর্মে একনিষ্ঠ সিভানের কথা নিজের ট্যুইটার অ্যাকাউন্টে প্রথম পোস্ট করেন তামিলনাড়ুর আইএএস অফিসার সুপ্রিয়া সাহু। সেই পোস্ট মুহূর্তে ভাইরাল হয়। সিভানকে শুভেচ্ছা জানান অনেকে। অভিনন্দনের ফাঁকে নেটিজেনদের একাংশ পদ্মশ্রীর পাওয়ার দাবিদার হিসেবে সিভানকে তুলে ধরেন। কিন্তু ডিজিটাল ইন্ডিয়ার এই উচ্ছ্বসিত শুভকামনা কি আদৌ স্পর্শ করে সিভানকে? নীলগিরির কুটিল, আঁকাবাঁকা পার্বত্য পথেই যিনি জীবনকে সঁপেছিলেন, কর্ম যাঁর কাছে ধর্মের সমান, তাঁকে খেতাবি মোড়কে কতখানি ধরে রাখা যায়, তা নিয়ে প্রশ্ন তো উঠবেই।