কর্মে অগ্রগতি হবে। চাকরিজীবীদের পদোন্নতি ও বদলির যোগ আছে। সৎজন সান্নিধ্যে মানসিক আনন্দ। ... বিশদ
অনন্যা কৃষ্ণনগরে খাবার সার্ভ করে। মাদার্স হাট নামে একটি রেস্তরাঁ রয়েছে জাতীয় সড়কের ধারে। সেখানে কাস্টমারদের টেবিলে খাবার পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব তার কাঁধে। রেস্তরাঁটিতে মোট চারজন অনন্যা নামের রোবট রয়েছে।
‘আমি অনন্যা। খাবার নিয়ে যাচ্ছি। আমাকে রাস্তা দেবেন’-মাদার্স হাটের ভিতর ঢুকলেই কৃত্রিম গলার এই আওয়াজ কানে আসে। তারপর চোখে পড়ে নীল আলো ঝলকাচ্ছে একটি যন্ত্র থেকে। সেটি চলে ফিরে বেড়াচ্ছে। তার শরীরজুড়ে কয়েকটি তাক। তাতে রাখা খাবারের একাধিক প্লেট। তারপর দেখা যাবে এরকম গোটা কয়েক যন্ত্র ঘুরছে রেস্তরাঁর অন্দরমহলে। তারা একের পর এক টেবিলে যাচ্ছে। সেখানে দাঁড়িয়ে মহিলা পরিবেশনকারীরা। তাঁরা রোবটের কাছ থেকে প্লেট নিয়ে টেবিলে খাবার পরিবেশন করে দিচ্ছেন। এরপর রোবট আবার ফিরে যাচ্ছে নিজের জায়গায়। রোবট অনন্যা মডার্ন টাইমসের মেশিনটির মতো মোটেও ‘বুদ্ধু’ নয়। রেস্তরাঁয় চলার পথে কেউ সামনে চলে এলে সে থেমে যায়। সরে গিয়ে অপর রোবটটিকে বা সামনে থাকা মানুষটিকে জায়গা ছেড়ে দেয়। দেখতে যন্ত্র বটে তবে তার কাজ বুদ্ধিমান মানুষের মতই। রোবট আসার পর রেস্তরাঁর কাজে গতি এসেছে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের।
২০১৩ সালে মাদার্স হাট চালু হয়। প্রথমে তিনজন মহিলা এখানে কর্মচারী হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। তাঁদের একজনের নাম অনন্যা। তাঁর বাড়ি শান্তিপুরের ফুলিয়াতে। যোগ দেওয়ার কিছুদিনের মধ্যে দু’জন কাজ ছেড়ে দেন। থেকে যান অনন্যা। রেস্তরাঁর কর্ণধার অরিন্দম গড়াই বলেন, ‘সে সময় অনন্যা না থাকলে হয়ত বন্ধ হয়ে যেত রেস্তরাঁ। তাই এই নতুন উদ্যোগের নাম আমাদের প্রথম কর্মচারীকে স্মরণ করে রাখা। আরও নয়া প্রযুক্তি আনব আমরা।’ এখন যদিও অনন্যা নেই। বিয়ের পর তিনি কাজ ছেড়ে দিয়েছেন। অরিন্দমবাবু বলেন, ‘রেস্তরাঁর কাজে অত্যধিক পরিশ্রম। কর্মচারীরা পর্যাপ্ত রেস্ট পান না। তাই রোবট আনার সিদ্ধান্ত।’ প্রসঙ্গত এখানে কর্মচারীদের সিংহভাগই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলা।
সেই কবে প্রোফেসর শঙ্কু বিধুশেখরকে বানিয়েছিলেন। মেধাবী ছিল রোবটটি। ‘ঘঙো ঘাংঙ কুঁক্ক ঘঙা…’ উচ্চারণে ‘ধনধান্যেপুষ্পে ভরা…’ গানটি আপন মনে গাইত। সাহসীও ছিল। শঙ্কুদের প্রাণ বাঁচাতে মঙ্গলগ্রহের আজব প্রাণীদের তাড়া করেছিল বিধুশেখর। কৃষ্ণনগরের অনন্যারা গান গায় না। তবে ‘খাবার নিয়ে যাচ্ছি। আমাকে রাস্তা দেবেন’-বলে সুরেলা গলায় অনুরোধ জানায়। তারপর নিজেই সরে গিয়ে গ্রাহকদের রাস্তা ছেড়ে দেয়। সবমিলিয়ে এই রোবটদের দেখার আকর্ষণ ক্রমে বাড়ছে। ব্যাপক ভিড়ও জমছে মাদার্স হাটে।