কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ। যোগাযোগ রক্ষা করে চললে কর্মলাভের সম্ভাবনা। ব্যবসা শুরু করলে ভালোই হবে। উচ্চতর ... বিশদ
লন্ডন, ৯ জুন: ‘টিম ইন্ডিয়া’র রানের পাহাড়ে চাপা পড়ে গেল অস্ট্রেলিয়া। গতবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের ৩৬ রানে হারিয়ে তৃতীয়বার বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নকে আরও ত্বরান্বিত করল কোহলি ব্রিগেড।
জয়ের অন্যতম কাণ্ডারি শিখর ধাওয়ান। ১০৯ বলে ১৬টি বাউন্ডারির সাহায্যে তাঁর সংগ্রহ ১১৭ রান। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন। প্রস্তুতি ম্যাচেও বড় রান পাননি। নিঃসন্দেহে ধাওয়ানের উপর চাপ বাড়ছিল। তীব্র হচ্ছিল সমালোচনাও। কিন্তু পয়মন্ত ওভালেই ফের জ্বলে উঠলেন শিখর। প্রিয় মাঠে এই নিয়ে তিনি তৃতীয় সেঞ্চুরি হাঁকালে ‘গব্বর’। আইসিসি ইভেন্টে (বিশ্বকাপ ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি) ছ’টি শতরান করে রিকি পন্টিং, কুমার সাঙ্গাকারাকেও ছুঁয়ে ফেললেন তিনি।
গত ম্যাচে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন ভারতীয় বোলাররা। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এবার লেটার মার্কস নিয়ে পাস করলেন ব্যাটসম্যানরা। ধাওয়ানের অনবদ্য সেঞ্চুরির পাশাপাশি রহিত শর্মার লড়াকু ৫৭, বিরাট কোহলির দুরন্ত ৮২ এবং হার্দিক পান্ডিয়ার ঝোড়ো ৪৮ রানের দৌলতে ভারত ৫ উইকেটে ৩৫২ রানে পৌঁছে যায়। টসে জেতার পর বিরাট কোহলি ব্যাটিং নিতে দেরি করেননি। ওপেনিং জুটিতে শিখর ধাওয়ান ও রহিত শর্মা যোগ করেন ১২৭ রান। তবে দ্বিতীয় ওভারে মিচেল স্টার্কের বলে শর্ট মিড উইকেটে রহিত শর্মার (২) কঠিন ক্যাচটি যদি কুল্টার নাইল ধরে ফেলতেন, তাহলে চাপে পড়ে যেত ভারত। শুরুতে রহিত সতর্ক থাকলেও ধাওয়ান ছিলেন মারকুটে মেজাজেই। যদিও নবম ওভারে তিনি কুল্টার নাইলের বলে আঙুলে চোট পাওয়ায় আতঙ্ক ছড়িয়েছিল ভারতীয় শিবিরে। আশঙ্কা দূরে সরিয়ে ব্যাটে ঝড় তোলেন ধাওয়ান। যদিও পরে ফিল্ডিং করতে নামেননি তিনি।
শুরুতে কিছুটা গুটিয়ে ছিলেন রহিত। প্রথম ২০টি বলের মধ্যে তিনি ১৪টি ডট বল খেলেন। স্পিনাররা বল করতে আসার পর ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের চেনা ছন্দে দেখা যায়। একে একে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ধাওয়ান ও রহিত। অস্ট্রেলিয়াকে প্রথম সাফল্যটি এনে দেন কুল্টার নাইল। তাঁর বলে রহিত ৫৭ রানে আউট হন। দ্বিতীয় উইকেটে ৯৩ রান যোগ করেন বিরাট কোহলি ও শিখর ধাওয়ান। তবে সেঞ্চুরির পর চালিয়ে খেলতে গিয়ে স্টার্কের বলে আউট হন ধাওয়ান। অস্ট্রেলিয়ার ফিল্ডিং এদিন মোটেও আশানুরূপ হয়নি। গোল্ডেন ডাক হতে গিয়ে বেঁচে যান হার্দিক পান্ডিয়া। কুল্টার নাইলের বলে হার্দিকের সহজ ক্যাচ ফেলেন উইকেটরক্ষক অ্যালেক্স কেরি। সেই সুযোগ নিয়ে হার্দিক ২৭ বলে করেন ৪৮ রান। অস্ট্রেলিয়াকে দেখলে বরাবরই জ্বলে ওঠেন বিরাট। এদিনও তিনি দারুণ ব্যাট করলেন। ৭৭ বলে তাঁর সংগ্রহ ৮২ রান। বেশ কয়েকটি দর্শনীয় শট খেলে ধোনি করেন ২৭ রান।
স্কোরবোর্ডে ৩৫২ রান দেখেই ঘাবড়ে গিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা। একটা বল মিস করা মানেই আস্কিং রেটের মাথাচাড়া দেওয়া। আর সেই সঙ্গে ভারতীয় পেসারদের ভালো বোলিং ডেভিড ওয়ার্নার, অ্যারন ফিনচের মতো মারকুটে ওপেনারকেও ব্যাট তুলতে দেয়নি। প্রথম পনেরো ওভারে অস্ট্রেলিয়া ১ উইকেট হারিয়ে তোলে মাত্র ৬৭ রান। আস্কিং রেট উঠে গিয়েছিল আটের উপর। দ্বিতীয় ওভারেই বুমরাহর বলে ওয়ার্নার বোল্ড হতে গিয়ে বেঁচে যান। তবুও চেনা ছন্দে ফিরতে পারেননি তিনি। ক্যাপ্টেন অ্যারন ফিনচ ৩৬ করে ঝুঁকি নিতে গিয়ে রান আউট হন। ৭৭ বলে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ওয়ার্নার। উইকেট বাঁচিয়ে রেখে পরের দিকে চালিয়ে খেলার কৌশল নিয়েছিলেন অজি ব্যাটসম্যানরা। চাহালের বলে ওয়ার্নার ৫৬ রানে আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন। এই পরিস্থিতিতে স্টিভ স্মিথ ফের বুঝিয়ে দিলেন, কেন তিনি বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। দ্বিতীয় উইকেটে ওয়ার্নারের সঙ্গে ৭২ রান ও তৃতীয় উইকেটে উসমান খাওয়াজার সঙ্গে ৬৯ রানের পার্টনারশিপ গড়ে অস্ট্রেলিয়াকে লড়াইয়ে রেখেছিলেন স্মিথ। তাঁকে সঙ্গ দিচ্ছিলেন খাওয়াজা। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ শট খেলতে গিয়ে খাওয়াজা ৪২ রানে বোল্ড হন বুমরাহর ডেলিভারিতে।
ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট অবশ্যই স্মিথের লেগ বিফোর। ভুবির বলে জোরালো আবেদন নস্যাৎ করে দিয়েছিলেন আম্পায়ার। কিন্তু ধোনির সবুজ-সংকেত পেয়ে কোহলি রিভিউ নেন। রিভিউতে আউট হন স্মিথ (৬৯)। ওই ওভারেই ভুবি ফেরান মার্কাস স্টোইনিসকে (০)। সেই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের আশাও শেষ হয়ে যায়। ভারতীয় বোলারদের মধ্যে বুমরাহ ও ভুবনেশ্বর কুমার তিনটি করে ও চাহাল নেন দু’টি উইকেট।
ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের স্কোর
ভারত: রহিত ক কেরি বো কুল্টার নাইল ৫৭, ধাওয়ান ক লিয়ঁ বো স্টার্ক ১১৭, কোহলিক কামিন্স বো স্টোইনিস ৮২, পান্ডিয়া ক ফিনচ বো কামিন্স ৪৮, ধোনি ক অ্যান্ড বো স্টোইনিস ২৭, লোকেশ অপরাজিত ১১, কেদার অপরাজিত ০, অতিরিক্ত ১০, মোট ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে ৩৫২।
উইকেট পতন: ১২৭-১, ২২০-২, ৩০১-৩, ৩৩৮-৪, ৩৪৮-৫।
বোলিং: কামিন্স ১০-০-৫৫-১, স্টার্ক ১০-০-৭৪-১, কুল্টার নাইল ১০-১-৬৩-১, ম্যাক্সওয়েল ৭-০-৪৫-০, জাম্পা ৬-০-৫০-০, স্টোইনিস ৭-০-৬২-২।
অস্ট্রেলিয়া: ওয়ার্নার ক ভুবনেশ্বর ব চাহাল ৫৬, ফিনচ রান আউট ৩৬, স্মিথ এলবিডব্লু বো ভুবনেশ্বর ৬৯, খাওয়াজা বো বুমরাহ ৪২, ম্যাক্সওয়েল ক জাদেজা বো চাহাল ২৮, স্টোইনিস বো ভুবনেশ্বর ০, কেরি অপরাজিত ৫৫, কুল্টার নাইল ক কোহলি বো বুমরাহ ৪, কামিন্স ক ধোনি বো বুমরাহ ৮, স্টার্ক রান আউট ৩, জাম্পা ক জাদেজা বো ভুবনেশ্বর ১, অতিরিক্ত ১৪ মোট ৫০ ওভারে ৩১৬।
উইকেট পতন: ৬১-১, ১৩৩-২, ২০২-৩, ২৩৮-৪, ২৩৮-৫, ২৪৪-৬, ২৮৩-৭, ৩০০-৮, ৩১৩-৯, ৩১৬-১০।
বোলিং: ভুবনেশ্বর ১০-০-৫০-৩, বুমরাহ ১০-১-৬১-৩, হার্দিক ১০-০-৬৮-০, কুলদীপ ৯-০-৫৫-০, চাহাল ১০-০-৬২-২, কেদার যাদব ১-০-১৪-০।
ভারত জয়ী ৩৬ রানে। ম্যাচের সেরা- শিখর ধাওয়ান।