বিতর্ক-বিবাদ এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। প্রেম-পরিণয়ে মানসিক স্থিরতা নষ্ট। নানা উপায়ে অর্থোপার্জনের সুযোগ।প্রতিকার: অন্ধ ব্যক্তিকে সাদা ... বিশদ
বর্ষার শেষের এখনও দিন বাকি। ফলে আবার কখন তোর্সায় জল বাড়ে, ফের নদী ভাঙন শুরু হয় কি না, সেই আতঙ্কে দিন কাটছে কোচবিহারের তোর্সাপাড়ের প্রায় ৫০টি পরিবারের। প্রশাসন ও পুরসভার দেওয়া ত্রিপল অনেকে পেয়েছেন। তা দিয়ে অস্থায়ী ঘর তৈরি করেছেন তাঁরা। পুরসভা ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু শুকনো খাবার মিলেছে। কিন্তু কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, তার কোনও সদুত্তর নেই কারও কাছে। কোচবিহার শহর লাগোয়া ফাঁসিরঘাট, রানিবাগানে এটাই এখন তোর্সাপাড়ের বৃত্তান্ত।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ফাঁসিরঘাট এলাকায় বাঁধে উঠতে দেখা গেল, একটি ত্রিপলের শেডের নীচে চৌকিতে বসে রয়েছেন ষাটোর্ধ্ব খুকিবালা দাস। তাঁর নাতনি বিউটি দাস সব্জি কাটছেন। গত প্রায় ১০ দিন ধরে তাঁরা এখানেই রয়েছেন।
খুকিদেবী বলেন, নদীতে জল বেড়ে যাওয়ায় ঘর-বাড়ি খুলে নিয়ে আসতে হয়েছে। এখন বাঁধের উপরেই থাকতে হচ্ছে। এখানে থাকা খুবই কষ্টকর। বৃষ্টি হলে এই ত্রিপলে জল আটকায় না। এখানেই রান্না, খাওয়া করে থাকতে হচ্ছে।
সেখান থেকে কিছুটা এগতেই কথা হল বিপ্লব দাসের সঙ্গে। তিনিও ঘরবাড়ি সব খুলে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁর পরিবারে বেশ কয়েকজন সদস্য। সকলেই একটি ঘরে কোনওমতে মাথা গুঁজে রয়েছেন। তিনি বলেন, প্রশাসন থেকে তেমন কিছু এখনও পাইনি। এখন শুনছি আমাদের বাঁধ থেকেও তুলে দেওয়া হবে। তাহলে কোথায় যাব জানি না।
রানিবাগান এলাকায় বাঁধের ধারে উঠে এসে অস্থায়ী টিনের ঘর বানিয়েছেন বৃদ্ধ ছেনার মিঁয়া ও তাঁর স্ত্রী ইসু বিবি। ইসু বিবি বলেন, নদীর ধারে ঘর ছিল। নদীপাড় ভাঙতে শুরু করায় এখানে উঠে এসেছি। কোনওমতে রয়েছি। সরকারি সাহায্য কিছুই পাইনি।
কোচবিহার পুরসভার সাফাইকর্মী সুনীল দাস বলেন, আমি ঘর ভাঙার সময় পাইনি। তার আগেই তোর্সা আমার ঘর ভেঙে নিয়েছে। দু’সপ্তাহ ধরে বাঁধে রয়েছি। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন থেকে দিনের বেলা খাবার দিচ্ছে। রাতে দু’টো ভাত ফুটিয়ে খেয়ে কোনওমতে পেট ভরছে।
এদিন বাঁধে দেখা মিলল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের। সেখানে তখন রান্না চলছে। কোচবিহারের সেই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য অসিতকুমার দাস বলেন, কয়েক দিন ধরে আমরা এখানকার মানুষজনকে খাবার দিচ্ছি। আমাদের কোনও সদস্যের জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী থাকলে সেদিন একটু ভালো খাওয়ানোর আয়োজন করা হচ্ছে।
দিন কয়েক আগে তোর্সা নদীতে জল বাড়ায় কোচবিহার শহর লাগোয়া ফাঁসিরঘাট, রানিবাগান এলাকায় ভাঙন শুরু হয়। বাঁধের ওপারে, নদীর গা ঘেঁষে বহু পরিবারের বসবাস। তাঁদের অনেকে ওই ভাঙনের মুখে পড়েন। অনেকের বাড়ি-ঘরে জল ঢুকে যায়। যাঁরা একেবারে নদী পার্শ্ববর্তী এলাকায় বসবাস করেন, তাঁরা বাড়িঘর খুলে নিয়ে এসে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। চরম সমস্যার মধ্যে দিয়ে এঁদের দিন কাটছে।
প্রশাসক পরিচালিত কোচবিহার পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কো-অর্ডিনেটর তপন ঘোষ বলেন, ওই এলাকায় যাঁরা সমস্যার মধ্যে রয়েছেন, তাঁদের ত্রিপল, শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছি।