কাজকর্মে আকস্মিক বিঘ্ন ও ভোগান্তি। আইনজীবী ও মুদ্রণ, কাগজ ও কৃষিজ পণ্যের ব্যবসায়ীদের শুভদিন। ... বিশদ
এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে কড়া চিঠি দিয়েছেন রাহুল। তাতে তিনি বলেছেন, ‘রাষ্ট্রপতির অভিভাষণের উপর ধন্যবাদজ্ঞাপনের আলোচনায় বিজেপির অনুরাগ সিং ঠাকুরের বক্তব্য ছিল অভিযোগে ভরপুর। তা সত্ত্বেও তাঁর বক্তব্য থেকে মাত্র একটি শব্দ বাদ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, কেটে ছেঁটে দেওয়া হয়েছে আমার বক্তব্যের বেশিরভাগটাই! এটা কোন যুক্তি ও নিরপেক্ষতা?’ মঙ্গলবার সংসদ প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়েও ফুঁসে ওঠেন বিরোধী দলনেতা। লোকসভার সচিবালয়ের সেন্সরকে কটাক্ষসহ প্রধানমন্ত্রীকেই টার্গেট করেন তিনি। রাহুল গান্ধী বলেন, ‘মোদিজির রাজত্বে সত্যের উপর কোপ পড়তে পারে, কিন্তু সত্যকে বাস্তবে তো বাদ দেওয়া যায় না।’ একইভাবে সরব হয়েছেন মহুয়া মৈত্রও। বাংলায় কৃষ্ণনগরের দাপুটে প্রতিনিধির সাফ কথা, ‘এইভাবে বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করে কি সত্যর গলা টেপা যায়? নরেন্দ্র মোদি যত বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করবেন, ততই আসন কমবে তাঁর পার্টির। রাজ্যে রাজ্যে হারের রেকর্ড গড়বে বিজেপি।’ এদিন রাহুল গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎমাত্রই বিরোধী দলনেতার ভাষণের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে দেখা যায় তৃণমূল এমপি সৌগত রায় এবং কাকলি ঘোষ দস্তিদারকে। রাহুলের বক্তব্যে কোপ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশসহ বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত বলেন, ‘অভয় মুদ্রা, মোদিজি, তির, লজ্জা প্রভৃতি শব্দও কি অসংসদীয় হয়ে গেল!’
বিরোধীদের কণ্ঠরোধের প্রতিবাদে, এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জবাবি ভাষণের পুরো সময় জুড়ে লোকসভায় নানাভাবে বিক্ষোভ চলে। ‘ইন্ডিয়া’তে ফাটল ধরাতে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী চেষ্টার কসুর করেননি। ফসিলীকৃত অবান্তর প্রসঙ্গ টেনে এনে এবং বিশেষণের পর তীক্ষ্ণ বিশেষণে বিঁধেছেন তিনি টার্গেট করে কংগ্রেসকে। কিন্তু তারপরও বিরোধীরা দমেনি, বরং তাঁকেই সবচেয়ে অস্বস্তিতে ফেলেছে মণিপুর ইস্যুতে, যে মণিপুর প্রসঙ্গে আজও তিনি নীরব! ওই রাজ্যের দুটি লোকসভা আসনই এবার কংগ্রেস ছিনিয়ে নিয়েছে। তবু রাষ্ট্রপতির অভিভাষণের উপর আলোচনায় অংশগ্রহণে সেখানকার এমপির সঙ্গে বঞ্চনা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ চলাকালে ওয়েল থেকে বিরোধীরা আওয়াজ তোলেন—‘ন্যায় দো, ন্যায় দো, মণিপুর মণিপুর’। সব মিলিয়ে ৫৬ ইঞ্চির উচ্চগ্রামের বজ্রকণ্ঠকেও ছাপিয়ে যায় বিরোধীদের সম্মিলিত প্রতিবাদ। সবে গঠিত এবং অধিবেশন শুরু হয়েছে অষ্টাদশ লোকসভার। আর তখনই, এইভাবেই, বিরোধীদের মহাজোট ‘ইন্ডিয়া’র একগুচ্ছ সদস্যের লোকসভায় প্রদত্ত ভাষণে কোপ দেওয়া হল। গতিপ্রকতি দেখে এটাই স্পষ্ট হচ্ছে যে অন্যায় পদক্ষেপটি শাসকের তরফে পরিকল্পিত। ঘটনাটি শুধু বিস্ময়করই নয়, অত্যন্ত নিন্দনীয়ও। বিরোধী কণ্ঠরোধের নয়া সূচনাটি তাই গণতান্ত্রিক ভারতের জন্য বিশেষ উদ্বেগেরও ব্যাপার। উন্নত গণতন্ত্র যখন ইনক্লুসিভ পলিটিক্সের উপর গুরুত্ব বাড়াতে বলছে, তখন মোদিতন্ত্র মগ্ন বিপরীত সাধনায়! আশঙ্কা হয়, মোদি অ্যান্ড কোং-এর গেরুয়া প্রেসে নয়া শব্দকোষ ছাপার কাজ শেষ পর্যায়ে। শীঘ্রই সংসদ সদস্যদের হাতে তার একটি করে কপি তুলে দেওয়া হবে। তারপর এমপিরা ভাষণ দেওয়ার আগে তাতে চোখ বুলিয়েই শব্দচয়ন করতে বাধ্য হবেন!