কাজকর্মে আকস্মিক বিঘ্ন ও ভোগান্তি। আইনজীবী ও মুদ্রণ, কাগজ ও কৃষিজ পণ্যের ব্যবসায়ীদের শুভদিন। ... বিশদ
পরিতাপের বিষয় এই যে, কাঙ্ক্ষিত সংযম দেখাতে পেরেছেন কম নেতাই। বরং স্বাধীনতা-উত্তর সাতাত্তর বছরে আমরা এটাই দেখতে অভ্যস্ত যে, বেশিরভাগ প্রধানমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রী রাজধর্ম পালনের অঙ্গীকার বিস্মৃত হয়ে দলীয় এজেন্ডা রূপায়ণকেই অগ্রাধিকার দেন। তাতে দেশের ও জনগণের কতটা ক্ষতি হয় এবং কতখানি অবমাননা হয় পবিত্র সংবিধানের, তা ভাবার অবকাশ তাঁদের কই! সরকারে বসার অধিকার পেতেই তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন যে গোটা দেশের গায়ে নিজ নিজ দলের স্ট্যাম্পটা পাকাপাকিভাবে সেঁটে দেওয়ার সামান্য সুযোগও হাতছাড়া করবেন না। এজন্য কংগ্রেস জমানায় প্রতিটি বড় সরকারি প্রকল্পের নামের আগে জহরলাল নেহেরু, ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী প্রমুখ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীদের নাম জুড়ে দেওয়া হয়েছিল। এই প্রসঙ্গে জেএনএনইউআরএম, ইন্দিরা আবাস যোজনা, আরজিজিভিওয়াই-এর মতো একগুচ্ছ প্রকল্পের উল্লেখ করা যায়। বহু সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং জাতীয় পুরস্কারও চিহ্নিত হয়েছিল তাঁদের নামে। যেমন জেএনইউ, ইগনু, রাজীব গান্ধী সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি, রাজীব গান্ধী এনভায়রনমেন্ট অ্যাওয়ার্ড, খেলরত্ন পুরস্কার প্রভৃতি। কোনও বিদেশি গবেষক ভারতে এসে এখানকার সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পগুলি সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিতে গেলে এই বিভ্রান্তিতেই পড়বেন যে, কংগ্রেস নেতাদের বাইরে কেউ কিছুই করেননি এই দেশটির জন্য। তাঁরা এই সিদ্ধান্তেই উপনীত হবেন যে, ‘কংগ্রেস মানে উন্নয়ন আর উন্নয়ন মানেই কংগ্রেস’!
অনেক ঢাক-ঢোল পিটিয়ে তিন-তিনবার সরকার গড়েও সেই নিন্দনীয় ট্র্যাডিশন ভাঙার সামান্য চেষ্টাও করেনি ‘পার্টি উইথ আ ডিফারেন্স’—বরং তাতে আরও ধোঁয়া দিয়ে গিয়েছে তারা। ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেডিক্যাল কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে অনেকগুলি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছে অটলবিহারী বাজপেয়ির নামে। এছাড়া চলছে অটল মিশন ফর রেজুভিনেশন অ্যান্ড আরবান ট্রান্সফর্মেশন, অটল পেনশন যোজনা, বাজপেয়ি আরোগ্যশ্রী যোজনা প্রভৃতি। একাধিক টানেল এবং সেতু ‘অটল’ নামাঙ্কিত হয়েছে। এমনকী, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী গুজরাতে একটি স্টেডিয়াম এবং মেডিক্যাল কলেজের নাম পাল্টে তাতে ‘নরেন্দ্র মোদি’ কথাটি যোগ করেছেন! এরপর রয়েছে মোদি জমানার এক্সক্লুসিভ সংযোজন—বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের নামের আগে ‘প্রধানমন্ত্রী’ বা ‘পিএম’ কথাটি জুড়ে দেওয়ার হ্যাংলামি। একটি বালকও বোঝে, এর নেপথ্যে রয়েছে রাজ্যের ভূমিকা নস্যাৎ করার অগণতান্ত্রিক রাজনীতি, যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা এই সংকীর্ণতা কোনোভাবেই অনুমোদন করে না। যেসব রাজ্যে মজবুত এবং সোজা শিরদাঁড়ার সরকার বহাল রয়েছে, তাদের পক্ষে এই অন্যায় মেনে নেওয়া অসম্ভব। যেমন পশ্চিমবঙ্গ সরকার শুরু থেকেই এই গেরুয়া আগ্রাসী সংস্কৃতির বিরোধিতা করে এসেছে। তার জন্য অনেক মূল্য দিতে হয়েছে নবান্ন, তৃণমূল এবং গরিব মানুষকে। বাংলার বাঘিনীকে তাতেও দমাতে পারেননি মোদিরা। বিজেপির জায়গায় পলকা এনডিএ সরকার গড়েও তৃতীয় দফায় শোধরাননি মোদিজি। কেন্দ্র-রাজ্যের যৌথ প্রকল্পেও শুধুমাত্র ‘পিএম’ শব্দটি খোদাই করার গোঁ ধরে আছেন তাঁরা। স্বভাবতই, ফের রুখে দাঁড়িয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। ‘পিএমশ্রী’ প্রকল্পে সই দেয়নি নবান্ন। বাংলার সাফ জবাব, যৌথ প্রকল্পে একা মোদির নাম কেনার নষ্টামি চলবে না। রাজ্যের এই অবস্থানকে ‘অজুহাত’ করে ফের বাংলাকে আর্থিক বঞ্চনার প্রেক্ষাপট রচনা করেছেন মোদিরা। আটকে রাখা হয়েছে সমগ্র শিক্ষা অভিযানে বাংলার প্রাপ্য দু’হাজার কোটি টাকা। দিল্লি বস্তুত এইভাবে বাংলার শিশুদের শিক্ষার অধিকার কেড়ে নেওয়ার এবং তাদের পেটে লাথি মারার আয়োজন করছে! ‘ইন্ডিয়া’ জোটের অন্তর্ভুক্ত সব রাজ্য সরকারের উচিত সংঘবদ্ধভাবে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। বিড়াল প্রথম রাতেই মারতে হাত কাঁপলে কিন্তু আগামী দিনে সকলকেই ভুগতে হবে।