কাজকর্মে আকস্মিক বিঘ্ন ও ভোগান্তি। আইনজীবী ও মুদ্রণ, কাগজ ও কৃষিজ পণ্যের ব্যবসায়ীদের শুভদিন। ... বিশদ
বোমাটা প্রথম ফাটিয়েছেন কৃষ্ণনগরের বিজেপি প্রার্থী অমৃতা রায়। ভোট মিটতেই রাজপরিবারের এই বধূ অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর প্রচারের দায়িত্বে থাকা কিছু নেতা ‘দুর্নীতি’ করেছেন। তাঁর নির্বাচনের জন্য আসা অর্থ কীভাবে খরচ হয়েছে তা তিনি জানেন না। তাঁকে দিয়ে ‘চেক’ সই করিয়ে টাকা তোলা হয়েছে। অথচ খরচের হিসাব চেয়েও তিনি পাননি। ব্যাঙ্কের পাস-বই, চেক-বই তাঁকে দেওয়া হয়নি। নির্বাচনের খরচ নিয়ে অনেকটা একই অভিযোগ শোনা গিয়েছে ডায়মন্ডহারবার, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম থেকে বসিরহাট— অনেক আসনের প্রার্থীর তরফে। বিজেপি সূত্রের খবর, লোকসভায় বুথ পিছু ২০ হাজার টাকা খরচ দেওয়া হয়েছে। একটি লোকসভা এলাকায় ১ হাজার ৯০০-র মতো বুথ থাকে। সেই হিসেবে একটি কেন্দ্রের জন্য প্রায় ৪ কোটি টাকা এসেছে। এর বাইরেও পোস্টার, ব্যানার ছাপানোর খরচ, বড় সভা-সমাবেশের জন্য আলাদা টাকা মিলেছে। সব মিলিয়ে একটি কেন্দ্রের জন্য এই বিপুল অর্থ খরচ হওয়ার কথা, কিন্তু যার একটি অংশ নেতাদের একাংশ ‘আত্মসাৎ’ করেছেন বলে দলের ভিতরেই অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতির অভিযোগ থেকে রেহাই মেলেনি প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশের খরচও। প্রচারপর্বে বাংলায় ২৩টি সভা ও একটি রোডশো করেছেন নরেন্দ্র মোদি। একটি সমাবেশের জন্য ৭৫ লক্ষ টাকা খরচের হিসাব ধরে মোট ২০ কোটি টাকা দিল্লি পাঠিয়েছে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে। এই টাকা প্রধানমন্ত্রীর সভাস্থলের প্যান্ডেল, দর্শক ছাউনি, লোক নিয়ে আসা, আলো, মাইক ও খাওয়াদাওয়া বাবদ খরচ করার কথা। অথচ এই টাকার একটা বড় অংশ রাজ্য ও জেলা নেতৃত্বের একাংশের পকেটে ঢুকেছে বলে অভিযোগ। মজার বিষয় হল, যে সভা হয়নি তারও খরচ নাকি দেখানো হয়েছে ৮৪ লক্ষ টাকা! খারাপ আবহাওয়ার জন্য ২০ মে তমলুকের সভা করতে পারেননি মোদি। তার পরিবর্তে হয়েছিল ভার্চুয়াল সভা। এর জন্যই নাকি ৮৪ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে! রাজ্য নেতৃত্বের কাছে পাঠানো টাকার হিসাব চাইতে দিল্লি প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছিল। তাঁরা এমন নয়ছয়ের অভিযোগ শুনে রাজধানীতে ফিরেছেন। বিরোধীরা কটাক্ষ করে বলেছে, ট্রেলারপর্বেই যে দল এমন নজির তৈরি করল তারা ক্ষমতায় এলে যে দুর্নীতিতে বাংলাকে এক নম্বরে নিয়ে যাবে তাতে সন্দেহ নেই। এই বিজেপি নেতারাই ‘দুর্নীতির’ অভিযোগ তুলে সেই অস্ত্রে বিরোধীপক্ষকে বিদ্ধ করতে তৎপর। মুখে বলেন, দুর্নীতিমুক্ত ভারত গঠনের কথা!
আসলে বঙ্গ-বিজেপির বেহাল দশা। রাজ্যে ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখলেও বুথস্তরে এখনও সলতে দেওয়ার লোক নেই। অথচ গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে যে কোনও দলকে টেক্কা দিতে পারে এরা। রাজ্যের প্রায় প্রত্যেক শীর্ষনেতার নামে একটি করে গোষ্ঠী রয়েছে। প্রচার পর্বেও দেখা গিয়েছে নেতারা যে যার মতো ঘুরে বেড়াচ্ছেন! অনেক কেন্দ্রে প্রার্থী নিয়েও তীব্র অসন্তোষ দেখা গিয়েছে। রাজ্যের দু’একজন নেতাই নাকি নিজেদের লোককে প্রার্থী ঠিক করেছেন। তবু এ রাজ্যে বিজেপি প্রধান বিরোধী দল। কারণ কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকার সুবিধা ও মেরুকরণের প্রচার। কিন্তু কেন এই বিপর্যয়, ফলাফল ঘোষণার ২০ দিন পরেও তার প্রাথমিক বিশ্লেষণ করে উঠতে পারেনি গেরুয়া শিবির। এর মধ্যেই নয়ছয়ের অভিযোগে জেরবার অবস্থা দলের।