কাজকর্মে আকস্মিক বিঘ্ন ও ভোগান্তি। আইনজীবী ও মুদ্রণ, কাগজ ও কৃষিজ পণ্যের ব্যবসায়ীদের শুভদিন। ... বিশদ
মুখ্যমন্ত্রীই একটি রাজ্যের জনগণের মুখ। তাঁকে সদাসর্বদা নজর রাখতে হয় সবকিছুর উপর। তা না-হলে যিনি যেখানে যতটুকু খণ্ড, এমনকী ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র ক্ষমতারও অধিকারী, তিনি সেখানেই ধরাকে সরা জ্ঞান করতে পারেন। সরকারের ভিতরে সমান্তরাল সরকার এবং অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ভিতরে প্যারালাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন গজিয়ে ওঠার আশঙ্কা থাকে। একজন মুখ্যমন্ত্রীর জনবিচ্ছিন্নতা এবং দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কিছু মতলববাজ উপনেতা এই ধরনের অবাঞ্ছিত ব্যবস্থা কায়েম করতে সাহসী হয়। রাজনীতির পণ্ডিতরা এই প্রসঙ্গে টাটকা দৃষ্টান্ত হিসেবে সামনে রাখছেন ওড়িশাকে। সেখানকার একসময়ের অত্যন্ত জনপ্রিয় নবীন পট্টনায়েক সরকার চব্বিশের সাধারণ নির্বাচনে বেনজিরভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে। একই সঙ্গে রাজ্য সরকার হারিয়েছেন নবীনবাবু এবং লোকসভাতেও নগণ্য হয়ে গিয়েছে তাঁর বিজেডি। আর এখানেই বিশেষত্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কারণ সরকার পরিচালনায় তিনি কখনোই জ্যোতি বসু বা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মডেল ব্যবহার করেননি। তাঁর এই দুই নিকট পূর্বসূরির ‘জনগণের সরকার’ পরিচালিত হতো রাইটার্স থেকে। স্রেফ লালবাড়ির হুকুমের জোরে তাঁরা চলতেন বলেই হুকুমত হাওয়া হতেই তাঁদের সাধের লালপার্টি বস্তুত বাংলা থেকেই চৌপাট হয়ে গিয়েছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন আবর্তিত হয়ে চলেছে শুধুমাত্র মানুষকে ঘিরেই। তাঁর রাজনীতি মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এবং মানুষের জন্য। তাই এত বড় বাংলার কোথায় কী ঘটে চলেছে তা তিনি সর্বক্ষণ দেখতে পান, তা তাঁর নখদর্পণে! সোজা কথায়, পানের থেকে চুন খসলে মানুষের কাছ থেকেই সব খবর পেয়ে যান তিনি। যেখানে মানুষের স্বার্থ বিঘ্নিত হচ্ছে, তারা দুঃখ-কষ্ট পাচ্ছে এবং যন্ত্রণা ভোগ করছে, সেখানে তিনি ‘ধৃতরাষ্ট্র’ থাকতে পারেন না। গর্জে ওঠাই তাঁর ধর্ম। বিরোধী নেত্রীর এক আপসহীন রূপ দেখেছে সারা বিশ্ব। তেরো বছর যাবৎ তিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু ক্ষমতার আসন তাঁর ওই বৈশিষ্ট্য কোনোভাবে ফিকে করে দিতে পারেনি। আজ মানুষ যখন তাঁর দলের, সরকারের এবং প্রশাসনের অভ্যন্তরের কিছু লোকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলছে, তখনও তিনি সেসব ধামাচাপা দিতে রাজি নন। বরং নিজের লোকদের উপরেই তাঁকে খড়্গহস্ত হতে দেখা গেল আরও বেশি করে। এমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে, রাজধর্ম পালনের জন্য কতখানি বিস্ফোরক হওয়া জরুরি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেটাই দেখিয়ে দিলেন তাঁর পুরনো ‘অগ্নিকন্যা’ মেজাজে। তাঁর তোপের মুখ থেকে রেহাই মেলেনি চিহ্নিত কারও—তিনি সামান্য পঞ্চায়েত বা পুর সদস্য থেকে বিধায়ক, মন্ত্রী পর্যন্ত যত ওজনদার বা প্রিয় দলীয় ব্যক্তিত্ব হোন না কেন! তাঁর তীব্র ভর্ৎসনার নিশানায় চলে এসেছেন সরকারি খুচরো অফিসার থেকে উঁচু দরের আমলারাও। তৃণমূল সুপ্রিমো এবং মুখ্যমন্ত্রীর সত্তাকে এক জায়গায় এনে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, এই পার্টি এবং সরকার টাকা কামানেওয়ালা কাউকেই বরদাস্ত করবে না। তাঁর পরিষ্কার বক্তব্য, পঞ্চায়েত/ পুরসভা/ কর্পোরেশন থেকে সরকার—সবই মানুষের জন্য তৈরি। স্ব স্ব ক্ষেত্রে যাঁরাই ‘অপারগ’ কিংবা ‘জনবিরোধী’ চিহ্নিত হবেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ও প্রশাসন তাঁদের আর কোনোমতেই পুষবে না—ছুড়েই ফেলে দেবে নির্দয় হাতে! হলফ করে বলা যায়, এই হিম্মত সারা ভারতের আর কোনও মুখ্যমন্ত্রীর নেই। এরপর বুঝতে বাকি থাকে কি, কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই রাজ্যবাসীর নয়নের মণি, ধারাবাহিকভাবেই?