কাজকর্মে আকস্মিক বিঘ্ন ও ভোগান্তি। আইনজীবী ও মুদ্রণ, কাগজ ও কৃষিজ পণ্যের ব্যবসায়ীদের শুভদিন। ... বিশদ
প্রথম মোদি সরকারের এই পারফর্ম্যান্স বলে দেয় যে, বছরে ২ কোটি চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতার অলিন্দে প্রবেশ করে নরেন্দ্র মোদি তার উল্টো ভূমিকাই পালন করেছিলেন। কী শহর-নগর, কী গ্রাম-মফস্সল—সর্বত্র বৃদ্ধি পেয়েছিল বেকার বাহিনী। তার মধ্যে মহিলাদের কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করলে শাসকের লজ্জার শেষ থাকার কথা নয়। দরিদ্র পরিবারগুলি হতদরিদ্র হয়ে পড়ায়, একই সঙ্গে বেড়েছিল শিশুশ্রমিকের সংখ্যা। খেয়াল করা দরকার, মোদির প্রশাসন যখন এই ভয়াবহতা ‘উপহার’ দিয়েছিল দেশ তখন কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা যুদ্ধ-বিগ্রহের কবলে পড়েনি, করোনা মহামারীর কথাও শোনেনি এই গ্রহ। অন্তত ভারতের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি ছিল সবরকমে স্বাভাবিক এবং দেশের সার্বিক বৃদ্ধির পক্ষে অনুকূল। তবু সোনার তরি ডুবিয়েছিলেন কীর্তিমান সরকার বাহাদুর। এর ঠিক দু’বছর বাদে সারা পৃথিবীর সঙ্গেই দেশ পড়েছিল কোভিড-১৯’এর কবলে। তখন হাতে গোনা কতিপয় ধূর্ত ধনাঢ্য ব্যবসায়ী বাদে বাকিদের যে কী হাল হয়েছিল, তা কারও পক্ষেই এত তাড়াতাড়ি ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। ধূর্ত লোকগুলি উল্টে সম্পত্তি বাড়িয়ে নিয়েছিল কয়েক গুণ। অন্যদিকে, গরিবরা চলে গিয়েছিল দারিদ্র্যসীমার অতলে। হারিয়ে যাওয়ার প্রহর গুনেছিল মধ্যবিত্ত শ্রেণি। সবচেয়ে করুণ অবস্থা হয়েছিল ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প-ব্যবসার (এমএসএমই) সঙ্গে যুক্ত সব পক্ষের। বলা বাহুল্য, দুর্গতির পটচিত্রে একাকার হয়ে গিয়েছিল মালিক-শ্রমিক উভয়েই। পরিযায়ী এবং মহিলা শ্রমিকের হাল যা হয়েছিল তা কহতব্য নয়।
যে সরকার ও প্রশাসন ফেভারেবল সিচুয়েশনেও নৌকাডুবির চিত্রনাট্য রচনা করতে পারে, করোনাকালে তার কাছে খুব বেশিকিছু প্রত্যাশিত ছিল কি? সরকার অন্তত বাস্তবে কোনও কেরামতি দেখাতে পারেনি। তবে প্রধানমন্ত্রীর লম্বা-চওড়া ভাষণে বিরাম দেখেনি দেশবাসী। যখনই ত্রাহি মধুসূদন রব উঠেছে, সরকার দাবি করে গিয়েছে—কোনও চিন্তা নেই—উৎপাদন এবং জনজীবন স্বাভাবিক হয়ে এল বলে। কালের নিয়মে করোনা বিদায় নিতেই সরকার দাবি করল, ‘করোনাকে কেমন জব্দ করলাম দেখলে তো! এবার কেবল তর তর করে বৃদ্ধির পালা। আমরা এমন এগতে থাকব যে, গোটা ইউরোপ এবং চীন তো বটেই, আমেরিকাও আমাদের পিছনে ছুটে হাঁপিয়ে উঠবে। এমনি এমনি ‘বিশ্বগুরু’ হতে যাচ্ছে মোদির ভারত!’ কেলেঙ্কারির পর কেলেঙ্কারির কালি মুখে লেপে মোদির তৃতীয় সরকার ভারতভূমিতে পদার্পণ করতে না করতেই সামনে এল ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব সফটঅয়্যার অ্যান্ড সার্ভিস কোম্পানিজের (ন্যাসকম) সর্বশেষ রিপোর্ট। তাতে বলা হয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে যেখানে তথ্য-প্রযুক্তিতে ২ লক্ষ ৭০ হাজার চাকরি হয়েছিল, সংখ্যাটি এবার নেমে আসতে পারে মাত্র ৬০ হাজারে! ইঞ্জিনিয়ারিং এবং প্রযুক্তি শিক্ষার অন্যতম বিশ্বসেরা প্রতিষ্ঠান আইআইটিগুলির ৮ হাজার কৃতী পড়ুয়ার চাকরি হয়নি এবছর। ম্যানেজমেন্টে উচ্চ ডিগ্রিধারীদের সামনেও সঙ্কুচিত চাকরির বাজার। ন্যাসকমের সমীক্ষা রিপোর্ট ওই উদ্বেগেই সিলমোহর দিল বইকি! দেশ জানতে চায়, যুব শ্রেণির এই ভয়াবহ হতাশা কাটাতে মোদি সরকার এবার কী পদক্ষেপ করতে চলেছে? জাতি-ধর্ম এবং সিঙ্গল-ডাবল ইঞ্জিন বিভাজনের রাজনীতি ছাড়তে এখনও কি তৈরি এই প্রশাসন? এই সর্বনাশের দায় সবটা আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে পার পাবে না সরকার। বাস্তবে সবকা বিকাশ-এর রাস্তা ছেড়ে রকমারি বিভাজনের রাজনীতিতে শান দেওয়ারই পরিণাম এই হতাশা।