কাজকর্মে আকস্মিক বিঘ্ন ও ভোগান্তি। আইনজীবী ও মুদ্রণ, কাগজ ও কৃষিজ পণ্যের ব্যবসায়ীদের শুভদিন। ... বিশদ
হিন্দুত্বের আবেগ উস্কে দিতে অসমাপ্ত মন্দিরে রামের প্রাণপ্রতিষ্ঠা নিয়েই শুধু প্রশ্ন ওঠেনি। প্রশ্ন উঠেছে, আক্ষরিক অর্থে এই রাজসূয় যজ্ঞকে সামনে রেখে কীভাবে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রকে বলিদান দেওয়া হয়েছে তা নিয়েও। এদেশে মন্দিরের অভাব নেই। গলি থেকে রাজপথে মাথা তুলে দাঁড়ানো মন্দিরকে ঘিরে দেবতার সঙ্গে ভক্তের ভালোবাসা শ্রদ্ধার সম্পর্ক গড়ে তোলাটা নিষ্ঠার সঙ্গে পালিত হচ্ছে যুগ যুগ ধরে। সেখানে আরও একটি মন্দির বাড়তি কতটা আবেগ তৈরি করতে পারবে? এই প্রশ্নকে পাশে সরিয়ে রাখলেও যেটা উদ্বেগের তা হল, ২২ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের অর্ধদিবস ছুটি দিয়ে সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে একটি মন্দির উদ্বোধনের উদযাপন অনুষ্ঠান হয় কোন যুক্তিতে? ভুলে গেলে চলবে না, সংবিধান মতে ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। এর অর্থ, সব ধর্মের প্রতি সমান মনোভাব পোষণ করবে রাষ্ট্র। সেখানে একটি মন্দিরকে নিয়ে শাসকগোষ্ঠীর এমন উল্লাস দেখে বোঝা যায়, এদের কাছে ধর্মনিরপেক্ষতা একটা শব্দমাত্র। ফলিত ক্ষেত্রে এর কোনও গুরুত্ব নেই। এর থেকে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিজেপি নামক শাসকদলটি এবার একক সংখ্যাগরিষ্ঠ না হয়েও শরিকদের ‘বড়দা’ হয়ে মসনদে অবতীর্ণ হয়েছে। নরেন্দ্র মোদি তাঁর স্বপ্ন সাকার করে আবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। ফলে এবার রাষ্ট্রের গা-থেকে পাকাপাকিভাবে ধর্মনিরপেক্ষতার ‘বর্ম’টা না সরিয়ে দেওয়া হয়!
তবে শুধু আশঙ্কা নয়, আশার ছবিও দেখা গিয়েছে এই নির্বাচনে। অযোধ্যার সঙ্গে কাশী, মথুরা, বেনারসের হিন্দু তীর্থক্ষেত্রকে সামনে রেখে যে হিন্দু জাগরণের বার্তা দেওয়া হচ্ছিল, ভোটের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে তা অনেকটাই ধাক্কা খেয়েছে। এদেশের ধর্ম বরাবরই বহুরূপে প্রকাশিত, প্রসারিত। ধর্মের নামে রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা মানুষ অতীতে দেখেছেন, নিজেদের অভিজ্ঞতা দিয়ে তার বিচার-বিবেচনাও করেছেন। রামমন্দিরকে ঘিরে সর্বগ্রাসী আবেগ প্রচারের দিনেও সেই বিবেচনার প্রকাশ দেখা গিয়েছে। দেশের একটা বড় অংশের মানুষ বুঝিয়ে দিয়েছেন রাজনীতি থেকে ধর্মকে আলাদা রাখাই উচিত। এটাই আশার কথা। ভগবান রামও নিশ্চয়ই তাঁদের সহায় আছেন।