উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে সাফল্য আসবে। হিসেব করে চললে তেমন আর্থিক সমস্যায় পড়তে হবে না। ব্যবসায় উন্নতি ... বিশদ
জয় চৌধুরি, কলকাতা: ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের প্রতিষ্ঠা হয়১৯২০ সালের ১ আগস্ট। সুরেশ চৌধুরি, অরিন্দম ঘোষরা জার্সির রং ঠিক করার জন্য ধর্মতলার বিভিন্ন দোকানে ঢুঁ মারেন। শেষ পর্যন্ত ওয়েলিংটন মোড়ে এক বিখ্যাত বস্ত্র বিপণির শো-কেসে পাশাপাশি রাখা লাল ও হলুদ রংয়ের দু’টি কাটপিসে তাঁদের চোখ আটকে যায়। ঠিক হয়, নবগঠিত ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের জার্সির রং হবে লাল-হলুদ। শহরের সম্ভ্রান্ত লোকজনদের নিয়ে গঠিত হয় নতুন কর্মসমিতি। এবার প্রয়োজন আইএফএ’র অনুমোদন। যে সংস্থা তখন চালান ব্রিটিশরাই। ১৯২০ সালে আইএফএ’র সচিব ছিলেন মেডলিকর্ট। সুরেশ চৌধুরি, তড়িৎ ভূষণ রায়, রাজা গোপাল রায় প্রমুখ ইস্ট বেঙ্গল কর্তা জাঁদরেল প্রশাসক মেডলিকর্টের কাছে আইএফএ’তে ইস্ট বেঙ্গলের অর্ন্তভুক্তির জোরালো দাবি জানান। শেষ পর্যন্ত সংস্থার গভর্নিং বডির সভা ডেকে ইস্ট বেঙ্গলকে অ্যাফিলিয়েশন দেওয়া হয়।
১৯২১ সালের ৮ আগস্ট দিনটি ইস্ট বেঙ্গলের ইতিহাসে সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। সেদিনই তারা কোচবিহার ট্রফির সেমি-ফাইনালে প্রথমবার মুখোমুখি হয়েছিল মোহন বাগানের মতো বনেদি ক্লাবের। ম্যাচটি গোলশূন্যভাবে শেষ হয়। অনেকেরই ধারণা, প্রথম বড় ম্যাচটি হয়েছিল ১৯২৫ সালে। যা কলকাতা লিগের প্রথম ডার্বি। কিন্তু পরিসংখ্যান ঘেঁটে জানা গিয়েছে যে, তার চার বছর আগেই দুই বড় দল প্রথমবার সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হয়। তাই শনিবারই শতবর্ষে পা দিল মোহন বাগান-ইস্ট বেঙ্গলের ঐতিহ্যের বড় ম্যাচ। উল্লেখ্য, দুই প্রধানের প্রথম ম্যাচটি হয়েছিল ময়দানের পুলিস মাঠে। সকাল থেকেই বৃষ্টি হওয়ায় মাঠের অবস্থা খুব ভালো ছিল না। সবুজ-মেরুন রক্ষণকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন গোষ্ঠ পাল। ইস্ট বেঙ্গলের সেরা খেলোয়াড় অবশ্যই নশা সেন।
ওই ম্যাচের দু’দিন পরেই মোহন- ইস্টের মধ্যে হয়েছিল দ্বিতীয় লড়াই। রিপ্লে ম্যাচে মোহন বাগান ৩-০ গোলে চূর্ণ করে ইস্ট বেঙ্গলকে। সবুজ-মেরুনের হয়ে তিন গোলদাতা হলেন যথাক্রমে রবি গাঙ্গুলি, পল্টু দাশগুপ্ত এবং অভিলাষ ঘোষ। তাই ডার্বিতে প্রথম জয় মোহন বাগানেরই। বড় ম্যাচের ইতিহাসে প্রথম গোল রবি গাঙ্গুলির। সেবার শেষ পর্যন্ত কোচবিহার ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হয় মোহন বাগান।
কলকাতা লিগের প্রথম ডার্বিতে অবশ্য ইস্ট বেঙ্গল জেতে। গোলদাতা নেপাল চক্রবর্তী। তবে তার আগেই বড় ম্যাচে জয়ের স্বাদ পায় ইস্ট বেঙ্গল। ক্লাব প্রতিষ্ঠার পরের বছরেই খগেন্দ্রনাথ চ্যালেঞ্জ শিল্ডের বড় ম্যাচে তারা জিতেছিল। দিনটি ছিল ১৯২১ সালের ২৬ আগস্ট। প্রতিযোগিতার নক-আউট পর্যায়ে ইস্ট বেঙ্গল টাউন মাঠে ২-১ গোলে হারিয়ে দেয় মোহন বাগানকে। লাল-হলুদ ব্রিগেডের কাছে যা ছিল মধুর প্রতিশোধ। ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে ইস্ট বেঙ্গলের নশা সেন এবং এন বসু গোল করেন। মোহন বাগানের একমাত্র গোলটি উমাপতি কুমারের। শেষ পর্যন্ত ইস্ট বেঙ্গল সেবার খগেন্দ্রনাথ মেমোরিয়াল শিল্ড চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। আইএফএ অনুমোদিত টুর্নামেন্টে ওটিই তাদের প্রথম ট্রফি।
উল্লেখযোগ্য পরিসংখ্যান
হ্যাটট্রিক করেছেন যাঁরা:
৫ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪, দ্বারভাঙা শিল্ড
মোহন বাগান- ৪ (অমিয় দেব হ্যাটট্রিকসহ চার গোল) : ইস্ট বেঙ্গল-১ (এন মজুমদার)
৬ আগস্ট ১৯৩৭, রাজা মোমোরিয়াল শিল্ড
মোহন বাগান- ৪ (অসিত গাঙ্গুলি হ্যাটট্রিকসহ চার গোল) : ইস্ট বেঙ্গল- ০
১৩ জুলাই ১৯৯৭, ফেড কাপ সেমি-ফাইনাল
ইস্ট বেঙ্গল- ৪ (বাইচুং ভুটিয়া হ্যাটট্রিক, নাজিমুল হক) :
মোহন বাগান- ১ ( চিমা)
২৫ অক্টোবর ২০০৯, আই লিগের প্রথম পর্ব
মোহন বাগান- ৫ (চিডি হ্যাটট্রিকসহ চার গোল, মণীশ মাথানি) :
ইস্ট বেঙ্গল- ৩ ( ইয়াকুবু, নির্মল ছেত্রী, মিত্রোভিচ)
বড় ম্যাচে সবথেকে বড় ব্যবধানে জয়
১৯৭৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর, আইএফএ শিল্ড ফাইনাল
ইস্ট বেঙ্গল- ৫ ( শ্যাম থাপা-২, সুরজিৎ সেনগুপ্ত, রঞ্জিত মুখার্জি ও শুভঙ্কর স্যানাল) : মোহন বাগান-০
স্বাধীন ভারতে প্রথম বড় ম্যাচ:
কোচবিহার ট্রফির নক-আউট পর্ব
মোহন বাগান- ৪ (নায়ার ২, সালিম, এন চ্যাটার্জি) : ইস্ট বেঙ্গল-১ (সালে)
সেরা প্রত্যাবর্তন: ১৯৪৪ সালের ২২ আগস্ট কোচবিহার কাপের তৃতীয় রাউন্ডের খেলায় মোহন বাগান দু’গোলে পিছিয়ে পড়েও জিতেছিল ৪-২ গোলে। এফ সিংহ ও এসএস দেবরায়ের গোলে লিড নিয়েছিল ইস্ট বেঙ্গল। মোহন বাগানের গোলদাতা এ ভট্টাচার্য (২)ও এন বসু। এছাড়া ইস্ট বেঙ্গলের এন রায় আত্মঘাতী গোল করেন।
সর্বাধিক গোলদাতা: বাইচুং ভুটিয়া-১৯ ( ইস্ট বেঙ্গলের হয়ে পাহাড়ি বিছের গোলসংখ্যা ১৩। বাকি ছ’টি সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে। দ্বিতীয় স্থানে হোসে রামিরেজ ব্যারেটো (১৭)। তৃতীয় চিমা ওকেরি (১১)।
হেড টু হেড: (১৯ জানুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত) মোট ম্যাচ: ৩৬৯, ইস্ট বেঙ্গলের জয়: ১২৯, মোহন বাগানের জয়: ১১৯ ড্র: ১২১।