অত্যধিক পরিশ্রমে শারীরিক দুর্বলতা। বাহন বিষয়ে সতর্কতা প্রয়োজন। সন্তানের বিদ্যা-শিক্ষায় অগ্রগতি বিষয়ে সংশয় বৃদ্ধি। আধ্যাত্মিক ... বিশদ
চৈত্রের শেষ দুপুরে সেই রান্নাঘরের সামনে গিয়ে বললাম, দিদি একটু কথা বলা যাবে? শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ মুছে হেসে কল্পনা দেবী বললেন, আবার! ওরা তো ওদিকে চলে গেল।
—দিদি বুঝলাম না। কাদের কথা বলছেন?
—ওই যে আধঘণ্টা আগে কয়েকজন এসেছিল। জুন মাস থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার একহাজার টাকা করে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দেবে বলে গিয়েছে। যদিও আমি তাঁদের শুনিয়ে দিয়েছি, মোদি সরকারও বলেছিল ১৫ লক্ষ টাকা দেবে। তা তো দিলই না, উল্টে গ্যাসের দাম এত বাড়িয়ে দিল যে, এক বছর ধরে উনুনে রান্না করছি। কিন্তু, মাসে মাসে যদি দিদি একহাজার টাকা করে দেয়, তাহলে আবার গ্যাসে রান্না করতে পারব, বলুন!
ফের প্রশ্ন করলাম, তাহলে মোদি ভালো না দিদি ভালো? স্পষ্ট জবাব, ওসব জানি না। তবে দিদির আমলে ছেলেমেয়ের এসসি কার্ড হয়েছে। ওর বাবার রেশন কার্ডে নাম ভুল ছিল, দুয়ারে সরকারের লাইনে দাঁড়িয়ে তা ঠিক হয়ে করা হয়েছে। আমার নামে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড হয়েছে।
বুধবার সকাল ন’টা থেকে প্রায় বিকাল তিনটে পর্যন্ত কৃষ্ণনগর উত্তর বিধানসভার একাধিক তপশিলি অধ্যুষিত এলাকায় ঘুরে যেটুকু বোঝা গেল, দোগাছী পঞ্চায়েতের নতুন পাড়ার পূর্ণিমা বিশ্বাস, বকুলতলার মিনতি বিশ্বাস, কৃষ্ণনগর পুরসভার ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের সনকা দাস, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের শম্পারানি দাসের বক্তব্য প্রায় একই। তাঁদের সঙ্গে একমত কৃষ্ণনগর তপশিলি জাতি ও আদিবাসী সমাজকল্যাণ সমিতির সভাপতি কৌশিক মণ্ডল। বললেন, মমতা সরকারের আমলে আমাদের সংগঠন অনেক সুযোগ সুবিধা পেয়েছে। আমাদের অনেকের জাতি শংসাপত্র ছিল না, এখন তা পেয়েছে। জয় জোহর, তপশিলি বন্ধু ইত্যাদি প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা পাওয়া গিয়েছে। আমাদের মধ্যে অনেকেই চাষবাস করেন। তারা কৃষকবন্ধু প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা পেয়েছেন। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খারাপ বলতে পারব না। কৃষ্ণনগর উত্তর বিধানসভার পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় প্রায় ৩৭ শতাংশ তপশিলি ভোটার। আর কৃষ্ণনগর পুরসভা এলাকায় প্রায় ২২ শতাংশ। এই বিশাল অঙ্কের ভোটব্যাঙ্ক নিজেদের দখলে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছে শাসকদল। তাই, একুশের নির্বাচনে ইস্তাহার প্রকাশের পর লাগাতার ‘দিদির উপহার’ নামক লিফলেট নিয়ে দরজায় দরজায় পৌঁছে যাচ্ছেন তৃণমূলের সদস্যরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের আমলে যে প্রকল্পগুলি চালু হয়েছে সেগুলি চালু থাকার পাশাপাশি প্রত্যেক মহিলার জন্য মাসিক ভাতা চালু হওয়ার বিষয় উপস্থাপন করছেন। কৃষ্ণনগর শহরের এসসি সেলের সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি বিশ্বাস বলেন, লোকসভা ভোটে আমাদের থেকে অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল।
কিন্তু তারপরেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৬৫ প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা সমস্ত স্তরের মানুষ পেয়েছে। তাই আমরা ভোটের আগে সংগঠনের তরফে মানুষের দরজায় দরজায় পৌঁছে যাচ্ছি। যাতে এই সুযোগ সুবিধাগুলি বজায় রাখা যায়। যদিও বিজেপির নদীয়া উত্তর মিডিয়া সেলের কনভেনার সন্দীপ মজুমদার বলেন, নবান্ন থেকে একাধিক প্রকল্প ঘোষণা করা হলেও বাস্তবে তার রূপায়ণ হয়নি। বহু প্রকল্পে কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে অথচ নাম কামাচ্ছে দিদি। তাই, ভোট বৈতরণী পার করতে তৃণমূল যে নতুন ভাঁওতাবাজি শুরু করেছে তা কোনও কাজে লাগবে না।